শব-এ-বারাত: গুনাহ মাফ ও বরকতের রাত

🎧 Listen in Audio
0:00

শব-এ-বারাত ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হিসেবে বিবেচিত। একে ইবাদত, তওবা (পশ্চাতাপ), ও দোয়ার রাত বলা হয়। ইসলামি ক্যালেন্ডারের শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মাঝামাঝি রাতে এই উৎসব পালিত হয়। মুসলমানদের কাছে এই রাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ একে গুনাহ মাফ ও বরকতের রাত বলা হয়।

এই রাতে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশেষ ইবাদত পালন করে, যার মধ্যে নামাজ আদায় করা, কোরআন তিলাওয়াত করা এবং আল্লাহর কাছে নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করা অন্তর্ভুক্ত। অনেকে কবরস্থানে গিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য ফাতিহা পাঠ করে এবং তাদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করে। এই উপলক্ষে লোকেরা দরিদ্রদের দান করে এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

শব-এ-বারাতের অর্থ "মুক্তির রাত"ও বলা হয়। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে আল্লাহ মানুষের ভাগ্যের হিসাব-নিকাশ তৈরি করেন এবং গুনাহ মাফ করার জন্য তাঁর দরজা খুলে দেন। এই রাতে ইবাদত করলে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বরকত লাভ করা যায়। ২০২৫ সালে শব-এ-বারাত ১৩ ফেব্রুয়ারির রাতে পালিত হবে এবং ভোর পর্যন্ত চলবে।

কী কী হয় শব-এ-বারাতের রাতে?

শব-এ-বারাতকে ইসলাম ধর্মে 'মাগফিরাতের রাত' বা 'বখ্শিশের রাত' হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই রাতে মুসলমানরা সারারাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করে, নামাজ আদায় করে, কোরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করে। বিশ্বাস করা হয় এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন। এইজন্যই একে তওবা ও বখ্শিশের রাত বলা হয়।

ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, শব-এ-বারাত ছাড়াও আরও পাঁচটি রাত আছে যাতে আল্লাহ বান্দাদের প্রতিটি দোয়া শোনেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করেন। এর মধ্যে রয়েছে শুক্রবার রাত, ঈদ-উল-ফিতরের পূর্ববর্তী রাত, ঈদ-উল-আযহার পূর্ববর্তী রাত, রজব মাসের প্রথম রাত এবং শব-এ-বারাত। এই রাতগুলোকে ইবাদত, নামাজ ও তওবার জন্য অত্যন্ত বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। শব-এ-বারাতের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় কারণ একে মানুষের তাকদীর ও গুনাহের বিচারের রাতও বলা হয়। এই রাতে ইবাদত করলে আল্লাহর অসীম রহমত ও বরকত লাভ করা যায়।

শব-এ-বারাতের রাতে মুসলমানরা কী করে?

শব-এ-বারাতের দিন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশেষভাবে ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। এই দিন মাগরিবের নামাজের পর পূর্বপুরুষদের কবর জিয়ারত করে তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা হয়। কবর পরিষ্কার করা হয়, ফুল দেওয়া হয়, এবং আগরবাতি জ্বালানো হয়। এটি পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান ও তাদের জন্য দোয়া করার একটি বিশেষ ঐতিহ্য।

শব-এ-বারাতের রাতে সারারাত জেগে মসজিদে অথবা ঘরে আল্লাহর ইবাদত করা হয়। লোকেরা নামাজ পড়ে, কোরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করে। এই রাতে কেউ কেউ নফল রোজাও রাখে। সাধারণত এটি দুই দিনের হয়—প্রথমটি শব-এ-বারাতের দিন এবং দ্বিতীয়টি পরের দিন। তবে এটি ফরজ নয়, নফল (ঐচ্ছিক) হিসেবে বিবেচিত।

এই রাতের সবচেয়ে বড় গুরুত্ব তওবা ও আত্মশুদ্ধিতে। লোকেরা আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করে এবং ভুল কাজ না করার সংকল্প নেয়। এর সাথে সাথে দরিদ্রদের জন্য খয়রাত দেওয়া হয়। এই উপলক্ষে ঘরে ঘরে মিষ্টি পদ যেমন সেঁইই এবং হালুয়া তৈরি করা হয়, যা পরিবার ও সমাজের মধ্যে আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতীক।

Leave a comment