হিন্দু ধর্মে অমাবস্যা তিথিকে অত্যন্ত পুণ্যময় ও শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা, যাকে জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যা বলা হয়, অত্যন্ত শুভ ও ফলপ্রদ। এটি কেবলমাত্র পিতৃদের স্মরণ করার সুযোগ নয়, বরং এই দিনে করা সাধনা, দান ও উপায়গুলি জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এছাড়াও, এই দিনে শনি জয়ন্তীও পালিত হয়, যার ফলে এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।
২০২৫ সালে জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যা ২৬ মে বিকেল ১২:১৪ টা থেকে শুরু হয়ে ২৭ মে সকাল ৮:৩৪ টা পর্যন্ত থাকবে। ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুসারে, উদয়তিথিকে অমাবস্যা তিথি হিসেবে গণ্য করা হয়, তাই ২৭ মে রাতও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতে করা সাতটি চমৎকার উপায় আপনার মনোকামনা পূরণ, নেতিবাচক শক্তি থেকে মুক্তি এবং অর্থ-সম্পদের দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যার ধর্মীয় গুরুত্ব
জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যা প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথিতে পালিত হয়। এই দিনে ভগবান শনির জয়ন্তীও আসে, তাই শনি দেবের পূজা-অর্চনা করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। শনি গ্রহ আমাদের জীবনের কষ্টকর বাধা এবং কর্মের ফলদাতা গ্রহ। তাই এই দিনে করা উপায়গুলি শনির কৃপা লাভে সাহায্য করে এবং জীবনের কঠিন সময় পার করার সময় মানুষকে স্বস্তি প্রদান করে।
অমাবস্যার রাতে আধ্যাত্মিক শক্তির প্রবাহ সবচেয়ে তীব্র হয়, যার ফলে করা উপায়গুলির প্রভাব অবিলম্বে এবং গভীরভাবে অনুভূত হয়। ধর্মীয় গ্রন্থেও অমাবস্যাকে পিতৃদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের আশীর্বাদ লাভের উপযুক্ত সময় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দিনে যোগ-ধ্যান করলে আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব হয়।
মূল দ্বারে দীপ জ্বালান
জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যার রাতে সূর্যাস্তের পর বাড়ির মূল দ্বারে তিলের তেলের দীপ জ্বালানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই উপায়টি বাড়িতে নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং সুখ-শান্তি আহ্বান করে। এটি করলে দেবী লক্ষ্মীর কৃপাও লাভ হয়। যদি আপনি আপনার বাড়িতে ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ চান, তাহলে এই ছোট্ট উপায়টি অবশ্যই করুন।
শনি দেবকে কালো তিল এবং সরিষার দান
এই দিনে শনি জয়ন্তীও হয়, তাই শনি দেবের কৃপা লাভের জন্য মন্দিরে কালো তিল, সরিষা এবং তেল দান করা অত্যন্ত ফলপ্রদ বলে মনে করা হয়। এই উপায়ে শনি দোষ, সাড়েসাতি বা ঢেউয়া থেকে মুক্তি মেলে এবং জীবনে বাধাগুলি দূর হতে শুরু করে। দান করার সময় মনে পবিত্র ভাব রাখুন এবং শনি মন্ত্র 'ॐ शं शनैश्चराय नमः' জপ করুন।
লবঙ্গ এবং কাপুরের ধোঁয়া করুন
যদি আপনার বাড়িতে টাকার অভাব, কলহ বা অলসতা থাকে, তাহলে জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যার রাতে একটি বাটিতে লবঙ্গ এবং কাপুর রেখে জ্বালান। এর ধোঁয়া পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে দিন। এতে কেবল নেতিবাচক শক্তি দূর হয় না, বরং বাড়িতে মানসিক শান্তি এবং আর্থিক স্থিরতাও আসে। এটি একটি সহজ এবং কার্যকর উপায় যা প্রতিটি বাড়িতে করা যেতে পারে।
দক্ষিণ দিকে চৌমুখী দীপ জ্বালান
পিতৃদের কৃপা লাভ এবং পিতৃদোষ থেকে মুক্তির জন্য এই দিনে বাড়ির দক্ষিণ দিকে একটি চৌমুখী দীপ জ্বালানো অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করা হয়। এই দীপটি তিলের তেলের হোক এবং তাতে তুলা কাপড়ের চারটি বাতি লাগান। এই উপায়ে পিতৃরা প্রসন্ন হন এবং জীবনে আটকে থাকা কাজগুলিতে গতি আসে। পাশাপাশি, মানসিক এবং পারিবারিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
পিতৃমন্ত্র জপ করুন
পিতৃদের প্রসন্ন করার জন্য এই দিনে বিশেষ মন্ত্র 'ॐ पितृगणाय विद्महे जगत धारिणी धीमहि तन्नो पितृो प्रचोदयात्का' জপ করা অতি শুভ বলে মনে করা হয়। এই মন্ত্রের ১০৮ বার জপ করলে পিতৃদের আশীর্বাদ লাভ হয় এবং জীবনে আসা অদৃশ্য বাধা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই উপায়টি একান্ত ও শান্ত স্থানে করুন যাতে মন একাগ্র থাকে।
মাছকে আটার গোলী খাওয়ান
সন্ধ্যার সময় কোনো নদী, পুকুর বা হ্রদের ধারে গিয়ে গমের আটার ছোট ছোট গোলী বানিয়ে মাছকে খাওয়ানো একটি অত্যন্ত পুণ্যকর্ম। এটি কেবল মনের শান্তিই প্রদান করে না, বরং এই উপায়টি ঋণ, শত্রু বাধা এবং ঋণ থেকে মুক্তিতেও সাহায্য করে। এটি এক ধরণের প্রকৃতি এবং জীবজন্তুর প্রতি কৃতজ্ঞতার भाव যা ইতিবাচক শক্তির কারণ হয়।
ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক সাধনা করুন
জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যার রাতে যদি সম্ভব হয় তাহলে একান্ত স্থানে বসে ধ্যান করুন। এই রাত আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য উত্তম বলে মনে করা হয়। ধ্যানের মাধ্যমে আত্মা ও ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। যোগী ও সাধকরা এই দিনে বিশেষ সাধনা করেন। আপনিও কিছুক্ষণ নিরব বসে 'ॐ नमः शिवाय' বা 'ॐ शांतिः शांतिः शांतिः' জপ করুন, যার ফলে আপনার অন্তরে থাকা অস্থিরতা দূর হবে এবং মানসিক শান্তি লাভ করবেন।
জ্যৈষ্ঠ অমাবস্যার এই সাতটি প্রভাবশালী উপায় কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক শান্তিই প্রদান করে না, বরং জীবনের সকল মনোকামনাকেও পূর্ণ করে। এই পবিত্র উপলক্ষে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার সাথে এই উপায়গুলি গ্রহণ করুন, আপনার জীবন থেকে নেতিবাচকতা দূর হবে এবং সমৃদ্ধি, সুখ-শান্তি আসবে।