গুড়ি পড়ওয়া ভারতে উদযাপিত প্রধান উৎসবগুলির মধ্যে একটি, যা বিশেষ করে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় ব্যাপক উৎসাহ ও উল্লাসের সাথে পালিত হয়। এই দিনটি হিন্দু নববর্ষের সূচনা বোঝায় এবং চৈত্র শুক্ল প্রতিপদা তিথিতে পালিত হয়। এই বছর গুড়ি পড়ওয়া ৩০শে মার্চ, রবিবার পালিত হবে, এবং একই দিন চৈত্র নবরাত্রিরও সূচনা হবে, যার ফলে এর ধর্মীয় গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে।
গুড়ি পড়ওয়ার ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক গুরুত্ব
১. রামায়ণের সাথে সম্পর্কিত বিশ্বাস
গুড়ি পড়ওয়ার সম্পর্ক ত্রেতাযুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে যুক্ত। পৌরাণিক কথার अनुसार, বানররাজ বালি তার ভাই সুগ্রীবকে রাজ্য থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। যখন ভগবান রাম ১৪ বছরের বনবাসে ছিলেন, তখন রাবণ মা সীতার অপহরণ করেছিলেন। মা সীতার অনুসন্ধানকালে শ্রী রাম ও সুগ্রীবের দেখা হয়। সুগ্রীব তার দুঃখ শ্রী রামকে বর্ণনা করেন, এর পর ভগবান রাম বালির বধ করে সুগ্রীবকে ন্যায়বিচার দেন এবং তার হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনা চৈত্র শুক্ল প্রতিপদা তিথিতে ঘটেছিল, তাই এটিকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
২. ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত বিশ্বাস
আরেকটি বিশ্বাস অনুযায়ী, ভগবান ব্রহ্মা এই দিনে সৃষ্টির সৃষ্টি করেছিলেন। তাই গুড়ি পড়ওয়া হিন্দু নববর্ষের সূচনা হিসেবেও পালিত হয়।
৩. মারাঠা সাম্রাজ্য ও ছত্রপতি শিবাজীর সাথে সম্পর্ক
মহারাষ্ট্রে এই উৎসব পালনের আরেকটি কারণ ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের ঐতিহাসিক বিজয়ের সাথে যুক্ত। এটা বলা হয় যে এই দিনে শিবাজী মহারাজ মারাঠা সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং অনেক যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন। তাই এই দিনটি শৌর্য ও পরাক্রমের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়।
গুড়ি পড়ওয়ার গুরুত্ব ও ঐতিহ্য
গুড়ি পড়ওয়া উপলক্ষে মারাঠী সম্প্রদায়ের মানুষ বিশেষ করে তাদের বাড়িতে "গুড়ি" উত্তোলন করে। গুড়ি তৈরির জন্য একটি বাঁশের কাঠ নেওয়া হয়, যার উপরের অংশে রূপা, তামা অথবা পিতলের একটি কলসি উল্টে রাখা হয়। এর উপর কেশরীয়া বা লাল রঙের পতাকা লাগানো হয় এবং এটিকে নিম পাতা, আমের ডাল এবং ফুল দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এটি বাড়ির প্রধান দরজা অথবা ছাদে উঁচু স্থানে স্থাপন করা হয়।
গুড়ি উত্তোলনের অর্থ সুখ, সমৃদ্ধি এবং বিজয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও এই দিনে মানুষ বিশেষ পূজা-অর্চনা, ঐতিহ্যবাহী খাবারের ভোগ এবং পরিবারের সাথে উৎসব পালন করে।
গুড়ি পড়ওয়ার সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বার্তা
গুড়ি পড়ওয়া শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত উৎসব। এটি ইতিবাচক শক্তি, নতুন সূচনা, বিজয় এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। এই কারণেই এই দিনটি সমগ্র ভারতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং প্রতি বছর উল্লাসের সাথে পালিত হয়।