মিথুন রাশির জন্য শনির সাড়েসাতি: ২০২৯-২০৩৬

🎧 Listen in Audio
0:00

হিন্দু ধর্মে গ্রহের অবস্থানের আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। এই গ্রহগুলির মধ্যে শনিদেবকে ন্যায়ের দেবতা বলা হয়, যিনি মানুষের কর্ম অনুযায়ী ফল দেন। যদি কেউ ভালো কাজ করে থাকে তবে শনিদেব তাকে উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেন, এবং যদি কেউ খারাপ কাজে লিপ্ত হয় তবে শনির দৃষ্টি জীবনকে বিপদের সম্মুখীন করতে পারে।

মিথুন রাশি এবং শনির সাড়েসাতি

মিথুন রাশির অধিপতি বুধকে বলা হয়, যিনি বুদ্ধি এবং ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত গ্রহ। মিথুন রাশির জাতকরা সাধারণত চতুর, সৌজন্যপূর্ণ এবং চিন্তাশীল হয়। কিন্তু এখন তাদের জীবনে একটি বিশেষ জ্যোতিষীয় অবস্থা আসছে – শনির সাড়েসাতি।

জ্যোতিষীয় গণনার অনুযায়ী, মিথুন রাশির জাতকদের উপর শনির সাড়েসাতি ৮ আগস্ট, ২০২৯ থেকে শুরু হবে এবং এটি ২৭ আগস্ট, ২০৩৬ পর্যন্ত চলবে। এই সমগ্র সময়কালে শনি তিনটি পর্যায়ে জাতকদের পরীক্ষা করবেন। প্রতিটি পর্যায় আড়াই বছরের হবে:

প্রথম পর্যায়: শনির বৃষ রাশিতে প্রবেশ

দ্বিতীয় পর্যায়: শনির মিথুন রাশিতে গোচর (মূল পর্যায়)

তৃতীয় পর্যায়: শনির কর্কট রাশিতে গোচর

এই সাত বছরের সময়কালে জীবনে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ, মানসিক জটিলতা, আর্থিক চাপ এবং পারিবারিক টানাপোড়েন সম্ভব। কিন্তু যদি সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় তবে এই সময়কাল আধ্যাত্মিক বিকাশ, ধৈর্য্য এবং সাফল্যেরও মাধ্যম হতে পারে।

শনি সাড়েসাতি কি?

শনি সাড়েসাতি সেই বিশেষ সময়কাল যখন শনি গ্রহ কোন ব্যক্তির জন্ম রাশির আগে, সেই রাশিতে এবং তারপর পরবর্তী রাশিতে গোচর করে। এই সম্পূর্ণ সময় প্রায় সাড়ে সাত বছরের হয়, তাই এটিকে ‘সাড়েসাতি’ বলা হয়। এই সময়কালে ব্যক্তির জীবনে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ, মানসিক চাপ, আর্থিক উত্থান-পতন এবং সম্পর্কের পরীক্ষা আসতে পারে। এই সময়কে মানুষের ভালো-মন্দ কর্মের ফল প্রদানকারী বলে মনে করা হয়। তবে, এই কাল সবসময় নেতিবাচক হয় না; যদি ব্যক্তি পরিশ্রমী, সৎ এবং সংযমী হয় তবে শনির কৃপায় সে বড় সাফল্য এবং আধ্যাত্মিক বিকাশও পেতে পারে।

মিথুন রাশির জন্য সাড়েসাতির প্রভাব

  • মানসিক চাপ: শনি মনের কর্কট চন্দ্রমার সাথেও যুক্ত, এবং যখন তারা জন্মরাশির আশেপাশে গোচর করে তখন ব্যক্তি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকতে পারে।
  • আর্থিক অনিশ্চয়তা: চাকরি, ব্যবসা এবং বিনিয়োগে উত্থান-পতন সম্ভব।
  • সম্পর্কের পরীক্ষা: বন্ধুত্ব, দাম্পত্য জীবন এবং পারিবারিক সম্পর্কে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে।
  • স্বাস্থ্য সমস্যা: ক্লান্তি, অনিদ্রা, হাড়ের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শনিকে প্রসন্ন করার উপায়

যদি আপনি মিথুন রাশির জাতক হন এবং ২০২৯ সালের পর আসা সাড়েসাতিকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, তাহলে এখন থেকে কিছু ব্যবস্থা নিয়ে শনিদেবের কৃপা লাভ করতে পারেন:

হনুমানজীর ভক্তি: শনিবার এবং মঙ্গলবার হনুমান চালিসা পাঠ করুন। হনুমানজীকে শনিদেবের ভক্ত বলে মনে করা হয় এবং তাঁর উপাসনার মাধ্যমে শনির দশার প্রভাব কমে।

শনিদেবের পূজা: শনিবার শনি মন্দিরে গিয়ে তিলের তেল, কালো তিল, কালো মশুর ডাল, নীল ফুল এবং লোহার তৈরি জিনিসপত্র অর্পণ করুন। সন্ধ্যায় শনি স্তোত্র পাঠ করুন।

দান এবং সেবা: শনিবার গরিবদের খাবার দান, কালো কাপড়, কম্বল, ছাতা, জুতা ইত্যাদি দান করা শুভ। দৃষ্টিহীন, অক্ষম এবং বৃদ্ধদের সেবা করলেও শনিদেব প্রসন্ন হন।

ভগবান শিব এবং শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা: সোমবার শিবলিঙ্গে জল অর্পণ করুন এবং "ॐ নমঃ শিবায়" মন্ত্র জপ করুন। একই সাথে শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করলেও মনকে শান্তি এবং শক্তি মেলে।

নীলম রত্ন: যদি আপনার কুণ্ডলীতে শনি শুভ থাকে এবং কোন অভিজ্ঞ জ্যোতিষী নীলম পরার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তবেই এটি ধারণ করুন। পরামর্শ ছাড়া এটি পরা ক্ষতিকারক হতে পারে।

মিথুন রাশির জন্য বিশেষ পরামর্শ

  • বুধবার সবুজ রঙের পোশাক পরুন এবং ভগবান গণেশকে দূর্বা অর্পণ করুন।
  • বুধ গ্রহকে শক্তিশালী করার জন্য 'ॐ ব্রাঁ ব্রীং ব্রৌং সঃ বুধায় নমঃ' মন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন।
  • মানসিক শান্তির জন্য নিয়মিত ধ্যান করুন এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রাখুন।

সাড়েসাতি কেন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় এবং লাভজনক?

সাড়েসাতিকে মানুষ প্রায়শই ভয়ের চোখে দেখে, কিন্তু আসলে এই সময় মানুষের জীবনে খুবই প্রয়োজনীয়। এটি শনি দেব কর্তৃক প্রদত্ত একটি এমন সুযোগ যাতে ব্যক্তি তার কর্মের ফল পায় এবং তার জীবনের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। এই সময় শনি ব্যক্তিকে শৃঙ্খলা, ধৈর্য্য এবং আত্মনির্ভরশীলতার শিক্ষা দেয়। যদি কোন মানুষ এই সময় পরিশ্রম, সততা এবং সংযমের সাথে চলে, তবে শনি তাকে পরবর্তীতে অনেকগুণ ভালো ফল দেয়। এটাই কারণ সাড়েসাতিকে সংশোধন এবং আত্মবিকাশের সময় বলে মনে করা হয়।

শনির সাড়েসাতি জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ণায়ক পরীক্ষা। মিথুন রাশির জাতকদের জন্য ২০২৯ থেকে ২০৩৬ পর্যন্ত সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কিন্তু এটি আত্ম-সংশোধন, কর্ম-সংযম এবং ঈশ্বর ভক্তির মাধ্যমে অতিক্রম করা যায়। যদি সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে এই সাড়েসাতিই জীবনের দিক এবং দশা উভয়ই পরিবর্তন করতে পারে।

Leave a comment