বিয়ার খরচের ক্ষেত্রে এবার সকলকে চমকে দেওয়া নাম সামনে এসেছে—উত্তরপ্রদেশের আলীগড়। সাধারণত দিল্লি এনসিআর, নয়ডা, বেঙ্গালুরু অথবা মুম্বইয়ের মতো বড় শহরগুলিকে বিয়ারের সর্বাধিক খরচ হওয়া এলাকা হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু এবারের পরিসংখ্যান এক অন্য গল্প বলে।
নয়াদিল্লি: উত্তরপ্রদেশের আলীগড় শহর এই সময় তার গরমের জন্য নয়, বরং বিয়ারের ঐতিহাসিক খরচ নিয়ে আলোচনায় রয়েছে। যেখানে দেশের বড় মহানগরগুলিকে বিয়ারের চাহিদায় এগিয়ে ধরা হত, সেখানে এবার আলীগড় সকল অনুমানকে পেছনে ফেলে রেকর্ডসংখ্যক বিক্রি করেছে। মাত্র ৪৩ দিনের মধ্যে এখানে ২৬ কোটি টাকার বিয়ার বিক্রি হয়েছে, যা যেকোনো উত্তর ভারতীয় শহরের জন্য একটি নতুন মাইলস্টোন।
আবকরি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে ৭.৯৫ লক্ষ পেটি বিয়ারের খরচ রেকর্ড করা হয়েছে। একটি পেটিতে যদি গড়ে ১২ বোতল বিয়ার ধরা হয়, তাহলে মোট প্রায় ৯৫ লক্ষ বোতল বিয়ার সেবন হয়েছে। এই খরচ প্রতিদিন গড়ে ২.২ লক্ষ বোতল বিয়ারের বিক্রির ইঙ্গিত দেয়, যা অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং অভূতপূর্ব।
রেকর্ডকে পিছনে ফেলে গেল আলীগড়
আলীগড়ে বিয়ারের বিক্রি এ বছর গত সকল গ্রীষ্মের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। জেলা আবকরি দপ্তরের মতে, মে ২০২৪ সালে ২০ লক্ষ ৬ হাজার ২৮৫ ক্যান বিয়ার বিক্রি হয়েছিল, যেখানে মে ২০২৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ২৪ লক্ষ ১ হাজার ৬০৬ এ পৌঁছেছে। একইভাবে ১১ জুন ২০২৪ পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৯৬ হাজার ৩৮৪ ক্যান বিয়ার বিক্রি হয়েছিল, যা ১১ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৮ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪৩৪ এ পৌঁছেছে। অর্থাৎ প্রতি বছরের তুলনায় প্রায় ১৯.৭ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।
আবকরি দপ্তরের কর্মকর্তা ডি. কে. গুপ্তার মতে, এ বছরের তীব্র গরম এবং দীর্ঘ ছুটির কারণে বিয়ারের খরচে প্রচণ্ড বৃদ্ধি দেখা গেছে। এছাড়াও আইপিএল সিজন, বন্ধুদের সাথে পার্টি এবং সামাজিক সমাগমের মতো ট্রেন্ডও খরচকে ত্বরান্বিত করেছে।
৪৯টি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এত বড় খরচ
আলীগড় জেলায় মোট ৪৯টি বিয়ার বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যা সকল লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদ দোকানের অন্তর্ভুক্ত। এই কেন্দ্রগুলিতে এত কম সময়ের মধ্যে প্রায় ৯৫ লক্ষ বোতল বিয়ার বিক্রি হওয়া নিজেই একটি ইঙ্গিত যে আলীগড়ের সমাজ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং গ্রীষ্মে বিয়ার শীতলতা পাওয়ার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে।
এই পরিসংখ্যান কেবলমাত্র বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং সামাজিক আচরণে আসা পরিবর্তনও প্রকাশ করে। বিশেষ করে যুব সমাজে বিয়ারকে পার্টি ও বিনোদনের অংশ হিসেবে গণ্য করা শুরু হয়েছে, যার প্রভাব এই বিক্রিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আবকরি দপ্তর সতর্ক, তদারকি বৃদ্ধি
বিয়ারের এত বড় খরচে এখন আবকরি দপ্তর তদারকি ব্যবস্থা আরও কঠোর করে দিয়েছে। স্টকের উপলব্ধতা, অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের অভিযোগ এবং অবৈধ বিক্রির উপর দপ্তর কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে।
জেলা আবকরি কর্মকর্তার মতে, তারা এখন এটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন যে দোকানগুলিতে বৈধভাবেই বিয়ার বিক্রি হচ্ছে এবং কোনো কালোবাজারি হচ্ছে না। এর জন্য পরিদর্শন অভিযান এবং অতর্কিত তদন্তের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
দপ্তর আশঙ্কা করছে যে বিয়ারের এত বেশি চাহিদায় কিছু অস্থায়ী দোকানদার অবৈধভাবে বিক্রি করতে পারে, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই এই সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কের উপর এখন কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
আলীগড়ের পরিবর্তিত ট্রেন্ড, বিয়ার হল প্রথম পছন্দ
যেখানে আগে ছোট শহরগুলিতে বিয়ারের খরচ তুলনামূলকভাবে কম ধরা হত, এখন আলীগড়ের মতো শহরগুলিতে এর প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রীষ্মে ঘাম এবং ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে বিয়ারকে হালকা নেশা এবং শীতল পানীয় হিসেবে দ্রুত গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিশেষত বিয়ারের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রভাব কেবলমাত্র বিক্রিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর প্রচার ও প্রচারণায়ও স্থানীয় দোকানদাররা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিছু স্থানে বিয়ারকে কোল্ড ড্রিঙ্কের মতো উপস্থাপন করা হচ্ছে, যার ফলে যুব সমাজে এর ক্রেজ আরও বেড়ে যাচ্ছে।