নীরব মোদীর জামিন আবেদন দশমবারের জন্য খারিজ

নীরব মোদীর জামিন আবেদন দশমবারের জন্য খারিজ
সর্বশেষ আপডেট: 19-05-2025

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB)-এর অর্বো ডলারের বিশাল জালিয়াতির অভিযুক্ত নীরব মোদী ব্রিটেনের ন্যায়িক ব্যবস্থায় বারবার জামিনের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি সফল হননি। ইউকে-র হাইকোর্ট তাঁর জামিন আবেদন দশমবারের জন্য খারিজ করে দিয়েছে।

লন্ডন: পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB) কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত এবং অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবে ঘোষিত নীরব মোদী আবারও ব্রিটেনের আদালত থেকে তীব্র ধাক্কা পেয়েছেন। লন্ডনে অবস্থিত ইউকে হাইকোর্ট নীরব মোদীর দশমবারের জন্য দাখিলকৃত জামিন আবেদন সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে দিয়েছে। মোদী ২০১৯ সাল থেকে ব্রিটেনের জেলে বন্দী এবং ভারত সরকার তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য আইনি লড়াই করছে। এখন আদালতের এই রায় প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করেছে।

১০ বার চেষ্টা, প্রতিবারই ব্যর্থতা

নীরব মোদী এখন পর্যন্ত মোট দশবার জামিনের আবেদন দাখিল করেছেন, কিন্তু প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আদালত বারবার স্বীকার করেছে যে নীরব মোদীর ভারতে ফিরে আসা এড়িয়ে যাওয়ার এবং প্রমাণের সাথে ছিনিমিনি খেলার আশঙ্কা রয়েছে। এবার লন্ডনের কিংস বেঞ্চ ডিভিশন তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করে স্পষ্ট করে বলেছে যে, তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যমান প্রমাণ এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নথিপত্র এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যে তিনি একটি গুরুতর অপরাধের দোষী এবং জামিন পেলে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া থেকে পালিয়ে যেতে পারেন।

সিবিআই এবং ইডি-র যুক্তি প্রভাবশালী প্রমাণিত

এই শুনানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই আদালতে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করেছে। সিবিআই তাদের যুক্তিতে বলেছে যে নীরব মোদীর বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে এবং তাঁকে জামিন দেওয়ার অর্থ হবে ন্যায়িক প্রক্রিয়ার উপর ঝুঁকি। অন্যদিকে প্রয়োগ দপ্তর (ইডি)ও এই শুনানির আগে জানিয়েছিল যে নীরব মোদীর বিরুদ্ধে পিএমএলএ (PMLA)-র অধীনে মামলা রুজু হয়েছে, যেখানে তাঁর দ্বারা করা মানি লন্ডারিং এবং জাল নথি ব্যবহার করে ব্যাংকগুলিকে প্রতারণার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

২০১৯ সাল থেকে জেলে বন্দী, প্রত্যর্পণের পথ উন্মুক্ত

নীরব মোদীকে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে লন্ডনে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তখন থেকেই তিনি ভ্যান্ডসওয়ার্থ জেলে বন্দী। তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য ভারত সরকার ব্রিটেনের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছিল, যা ইউকে-র আদালত ইতোমধ্যেই অনুমোদন করেছে। যদিও নীরব মোদী সেই রায় সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, যা ২০১২ সালের ডিসেম্বরে খারিজ করা হয়। এর পর তাঁর কাছে আইনি পথ অত্যন্ত সীমিত হয়ে গেছে।

৬,৪৯৮ কোটি টাকার সর্ববৃহৎ ব্যাংকিং কেলেঙ্কারি

নীরব মোদী এবং তাঁর মামা মেহুল চোকসী ভারতের সর্ববৃহৎ ব্যাংকিং কেলেঙ্কারিগুলোর একটির অভিযুক্ত। উভয়ের উপর ৬,৪৯৮.২০ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ আছে। এই অর্থ পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB) থেকে জাল লেটার অফ আন্ডারটেকিং (LOU)-এর মাধ্যমে বিদেশী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্জিত হয়েছিল। পরে উভয়েই বিদেশে পালিয়ে যায়। যেখানে চোকসী অ্যান্টিগুয়ায় নাগরিকত্ব নিয়ে বসে আছে, সেখানে নীরব মোদীকে লন্ডনে গ্রেফতার করা হয়।

ভারত সরকারের জন্য বড় স্বস্তি

নীরব মোদীর জামিন আবেদনের দশমবার খারিজ হওয়া ভারত সরকারের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ও আইনি বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি ইঙ্গিত করে যে ব্রিটেনের আদালত ভারতের ন্যায়িক ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখে এবং প্রত্যর্পণ নিয়ে কোনো গুরুতর আপত্তি নেই। এখন নীরব মোদীর তাঁর প্রত্যর্পণ রোধ করার জন্য আর কোনো বড় বিকল্প বাকি নেই।

যদি কোনো নতুন আইনি চ্যালেঞ্জ না দেওয়া হয়, তাহলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তাকে ভারতে আনা যেতে পারে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তদন্ত সংস্থাগুলি এর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Leave a comment