গত কয়েকদিন ধরে গুগলের জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার Chrome নিয়ে বাজারে আলোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে। গুগলের উপর বাড়তে থাকা অ্যান্টিট্রাস্ট চাপের কারণে কোম্পানিকে তাদের ব্রাউজার বিক্রি করতে বাধ্য করা হতে পারে, এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল যে, অনেক কোম্পানি Chrome কিনতে ইতোমধ্যেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এবার গুগলের CEO সুন্দর পিচাই নিজেই এই বিষয়ে চুপ থাকার অবসান ঘটিয়েছেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি বড় আপডেট দিয়েছেন।
Chrome বিক্রির ব্যাপারে সুন্দর পিচাই কী বলেছেন?
টেক ওয়েবসাইট The Verge-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুন্দর পিচাইকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে গুগলকে Chrome বিক্রি করতে হয়, তাহলে কি কোম্পানি বাকি অপারেশনগুলি একই শক্তি দিয়ে চালিয়ে যেতে পারবে? এর উত্তরে পিচাই সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেননি, তবে তাঁর উত্তর এতটাই স্পষ্ট ছিল যে গুঞ্জনের বাতাস প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
সুন্দর পিচাই বলেছেন, “আমার মনে হয় না আমরা সেই অবস্থায় আছি।” এর সরাসরি অর্থ হল গুগল Chrome বিক্রির সম্ভাবনা কল্পনাও করছে না। এই বক্তব্য গুগলের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ স্পষ্ট করে দেয় যে কোম্পানি তাদের সবচেয়ে সফল প্রোডাক্ট এভাবে ছেড়ে দেবে না।
ব্রাউজার নয়, ওয়েবের মেরুদণ্ড হলো Chrome
পিচাই তার উত্তরে আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে Chrome কেবল একটি ব্রাউজার নয়, বরং ইন্টারনেটের গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেছেন যে Chrome-এর শুরুতে তিনি নিজেই গভীরভাবে জড়িত ছিলেন এবং এর ফলে কেবল গুগলের ইকোসিস্টেম শক্তিশালী হয়নি, বরং সম্পূর্ণ ওয়েব বিশ্বে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
গুগল Chrome কে ওপেন-সোর্স কোড হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, যার ফলে Chromium নামে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়। এই প্ল্যাটফর্মের উপর অন্যান্য ব্রাউজার যেমন Microsoft Edge, Brave এবং Opera তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ Chrome কেবল গুগলের ব্রাউজার নয়, বরং এমন একটি টেকনোলজিক্যাল বেস যার উপর ইন্টারনেটের বর্তমান গঠন নির্ভরশীল।
অ্যান্টিট্রাস্ট চাপের কারণে উঠে আসা প্রশ্ন
উল্লেখ্য যে, আমেরিকা এবং ইউরোপে গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে ক্রমাগত মামলা চলছে। কিছু ক্ষেত্রে গুগলের উপর অভিযোগ আনা হয়েছে যে তারা তাদের সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্রাউজারের মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলেই এই আলোচনা শুরু হয় যে কোম্পানিকে Chrome-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্ট আলাদা করতে হতে পারে।
তবে, সুন্দর পিচাইয়ের সাম্প্রতিক বক্তব্য এই অনুমানগুলিকে অস্থায়ীভাবে থামিয়ে দিয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে গুগল এখনও এমন কোনো আইনি অবস্থায় নেই, যেখানে তাদের Chrome বিক্রি করার প্রয়োজন হবে।
ইনোভেশন অব্যাহত থাকবে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন
যখন সাক্ষাৎকারে পিচাইকে প্রশ্ন করা হয় যে ভবিষ্যতে কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি হলে কোম্পানির কৌশল কী হবে, তখন তিনি বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
‘আমরা একটি কোম্পানি হিসেবে সবসময় ইনোভেশন করবো, বিনিয়োগ করবো এবং যেকোনো পরিস্থিতিতেই একটি সফল ব্যবসা বজায় রাখবো।’
এই উত্তর থেকে এই ইঙ্গিতও পাওয়া যায় যে গুগল তাদের প্রতিটি প্রোডাক্টকে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এবং স্বল্পমেয়াদী আইনি চ্যালেঞ্জগুলি তাদের অগ্রাধিকার পরিবর্তন করে না।
Chrome কেন গুগলের জন্য বিশেষ?
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার: Chrome আজকের সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওয়েব ব্রাউজার।
গুগলের প্রোডাক্টগুলির সাথে গভীর ইন্টিগ্রেশন: Chrome-এর মাধ্যমে গুগল সার্চ, Gmail, YouTube এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলি আরও শক্তিশালী হয়।
ডেভেলপার এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন: ওপেন-সোর্স হওয়ার কারণে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করা সহজ এবং ডেভেলপাররা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এটিকে কাস্টমাইজ করতে পারেন।
কোনো কোম্পানি কি সত্যিই Chrome কিনতে আগ্রহী?
যদিও কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল যে Microsoft বা Amazon-এর মতো বড় কোম্পানি Chrome কিনতে আগ্রহ দেখাতে পারে, তবে এমন কোনো ডিল নিয়ে গুগল বা অন্য কোনো কোম্পানি কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। এখন যেহেতু সুন্দর পিচাই Chrome বিক্রির সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দিয়েছেন, তাই এখন এগুলিকে কেবল অনুমানই বলে মনে করা যেতে পারে।