গুগলের কঠোর নির্দেশ: অফিসে ফিরুন, নয়তো চাকরি ছেড়ে দিন

গুগলের কঠোর নির্দেশ: অফিসে ফিরুন, নয়তো চাকরি ছেড়ে দিন
সর্বশেষ আপডেট: 24-04-2025

গুগল তাদের দূরবর্তী কর্মীদের কাছে একটি স্পষ্ট ও কঠোর বার্তা দিয়েছে: অফিসে আসুন, নয়তো চাকরি ছেড়ে দিন। এই সিদ্ধান্তটি এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) খাতে আক্রমণাত্মকভাবে কাজ করছে এবং ব্যক্তিগতভাবে টিম ওয়ার্কের প্রয়োজন অনুভব করছে।

গুগলের স্পষ্ট আল্টিমেটাম: বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানি গুগল তাদের দূরবর্তী কাজের সংস্কৃতিতে ব্রেক বসাতে শুরু করেছে। করোনা মহামারীর সময় যখন ঘরে থেকে কাজ করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছিল, তখন গুগলসহ অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি কর্মীদের ঘরে থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায়, কোম্পানি আবার অফিস সংস্কৃতি গ্রহণের দিকে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।

গুগলের টেকনিক্যাল সার্ভিস এবং এইচআর (পিপল অপারেশন্স) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ দলের দূরবর্তী কর্মীদের স্পষ্ট করে সতর্ক করা হয়েছে—এখন সপ্তাহে অন্তত তিন দিন অফিসে আসা বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে যারা কোম্পানির অফিস থেকে ৫০ মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকে তাদের জন্য এই নিয়ম অবশ্যই প্রযোজ্য। যদি কোন কর্মী এই নির্দেশনা মেনে না চলে, তাহলে তাকে চাকরি হারাতে হতে পারে।

মহামারীর পর পরিবর্তিত কৌশল

করোনা মহামারীর সময় বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি কর্মীদের ঘরে থেকে কাজ করার সুবিধা দিয়েছিল। গুগলও তার মধ্যে একটি ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায়, কোম্পানি আবার ঐতিহ্যগত অফিস সংস্কৃতি গ্রহণ করতে উদ্যত হয়েছে। গুগলের কিছু নির্দিষ্ট ইউনিট, যেমন টেকনিক্যাল সার্ভিস এবং পিপল অপারেশন্স (এইচআর), তাদের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে যে, যদি তারা গুগল অফিস থেকে ৫০ মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকে, তাহলে তাদের সপ্তাহে অন্তত তিন দিন অফিসে আসতে হবে। আদেশ লঙ্ঘনের ফলে চাকরি হারানোর ঝুঁকিও জানানো হয়েছে।

বিকল্প আছে, কিন্তু শর্তসাপেক্ষে

কোম্পানি দূরবর্তী কর্মীদের একটি সীমিত বিকল্পও দিয়েছে, তারা ইচ্ছা করলে রিলোকেশন প্যাকেজ নিয়ে অফিসের কাছে স্থানান্তরিত হতে পারে। কিন্তু যদি কেউ অফিসে আসতে না চায় এবং স্থানান্তরিত হতে না চায়, তাহলে তাকে 'স্বেচ্ছায় বিদায়' অর্থাৎ চাকরি থেকে পদত্যাগ করার বিকল্প দেওয়া হয়েছে। গুগলের মুখপাত্র কোর্টনি মেনচিনি এই নীতিকে সমর্থন করে বলেছেন যে, ব্যক্তিগতভাবে কাজ করার মাধ্যমে উদ্ভাবনকে বৃদ্ধি পাওয়া যায় এবং টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে জটিল সমস্যার দ্রুত সমাধান করা যায়। কোম্পানির বিশ্বাস, AI এর মতো জটিল প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য মুখোমুখি বসে কাজ করার পদ্ধতি প্রয়োজন।

AI ফোকাসের কারণে দলগুলিতে পুনর্গঠন

AI-তে ফোকাসের কারণে গুগল গত কয়েক সময় অনেক দলে ছাঁটাই এবং পুনর্গঠন করেছে। অ্যান্ড্রয়েড, ক্রোম, নেস্ট এবং ফিটবিটের মতো বিভাগে ইতিমধ্যেই অনেক কর্মীকে স্বেচ্ছায় বিদায়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সার্জেই ব্রিনও অফিসে কাজকে অপরিহার্য মনে করেন। তিনি এ বছরের শুরুতে তাঁর AI টিমকে বলেছিলেন যে তারা সপ্তাহে ৬০ ঘন্টা অফিসে কাটাকাটি করবে। ব্রিনের মতে, AI-এর বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য এটা প্রয়োজন যে কর্মীরা একসাথে শারীরিকভাবে কাজ করবে।

কমে যাওয়া কর্মী সংখ্যা, বেড়ে যাওয়া আশা

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের শেষের দিকে গুগলের বিশ্বব্যাপী কর্মী সংখ্যা কিছুটা কমেছে, এখন কোম্পানির প্রায় ১.৮৩ লক্ষ কর্মী রয়েছে। কিন্তু তাদের ভূমিকা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, কারণ কোম্পানি AI-তে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংগঠিত এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর জোর দিচ্ছে।

যেখানে কিছু কর্মী এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করেন কারণ এটি দলের মধ্যে সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনকে বৃদ্ধি করবে, সেখানে অনেকেই এটিকে কঠোর এবং পারিবারিক সমস্যা উপেক্ষা করার পদক্ষেপ মনে করছেন। বিশেষ করে যারা দূরবর্তী এলাকায় বসবাস করে এবং কাজ করছেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

Leave a comment