ভারতীয় পুরুষ হকি দল তাদের অসাধারণ খেলার জোরে দীর্ঘ পরাজয়ের ধারা ভেঙে জয়ের পথে ফিরে এসেছে। ২২শে জুন এফআইএইচ প্রো লিগ ২০২৪-২৫ এর ইউরোপীয় পর্বে অনুষ্ঠিত এক অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ভারত বেলজিয়ামকে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম জয় নিশ্চিত করেছে।
খেলাধুলা সংবাদ: ভারতীয় পুরুষ হকি দল অবশেষে সেই কাজটি করে দেখিয়েছে যার অপেক্ষায় ছিল কোটি কোটি খেলাপ্রেমী। এফআইএইচ প্রো লিগ ২০২৫ এর ইউরোপীয় পর্বে দল ভারত বেলজিয়ামকে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে শুধুমাত্র টুর্নামেন্টের প্রথম জয়ই অর্জন করেনি, বরং ক্রমিক সাত ম্যাচের পরাজয়ের ধারাও ভেঙে দিয়েছে। এই ম্যাচে প্রতি মুহূর্তেই ছিল উত্তেজনা, আর সিদ্ধান্তমূলক মুহূর্তটি এনেছিল অধিনায়ক হারমানপ্রীত সিংহের সেই গোলটি, যা শেষ দুই মিনিটে ভারতের জয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এই ম্যাচটি ভারতীয় হকির জন্য শুধুমাত্র একটি জয় নয়, বরং আত্মবিশ্বাস, সংযম এবং পুনরাগমনের একটি জীবন্ত কাহিনী। বেলজিয়ামের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে জয় অর্জন করা সহজ নয়, কিন্তু ভারত দলীয় भावना, আক্রমণাত্মক रणनीति এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই অসম্ভব লক্ষ্য অর্জন করেছে।
প্রথম কোয়ার্টার: বেলজিয়ামের তীব্র শুরু
ম্যাচের শুরু বেলজিয়ামের তীব্র এবং আক্রমণাত্মক ধাঁচের সাথে হয়েছিল। প্রথম কোয়ার্টারের অষ্টম মিনিটেই বেলজিয়ামের আর্থার ডি স্লোভার গোল করে ভারতকে প্রাথমিক ধাক্কা দেয়। ভারতীয় প্রতিরক্ষায় সামান্য ত্রুটির সুযোগে বেলজিয়াম ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। প্রথম কোয়ার্টার বেলজিয়ামের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং ভারতীয় দল খুব একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
দ্বিতীয় কোয়ার্টার: ভারতের পাল্টা আঘাতের ইঙ্গিত
দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ভারতীয় দল সংযত কিন্তু শক্তিশালী খেলা দেখিয়েছে। দলটি পেনাল্টি কর্নার অর্জন করে এবং সুখজিত সিংহ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দমদার ফ্লিকের মাধ্যমে স্কোর সমতায় আনে ১-১। এই গোলটি ভারতের আত্মবিশ্বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এর পর খেলার ভারসাম্য বদলাতে শুরু করে। তৃতীয় কোয়ার্টারের শুরু আবার বেলজিয়ামের পক্ষে ছিল। নিকোলাস স্টকব্রক্স ৩১তম মিনিটে গোল করে স্কোর করে 2-1। কিন্তু ভারত হার মানেনি। মাত্র চার মিনিট পরেই সুখজিত সিংহ আরেকটি চমৎকার মাঠগোল করে স্কোর আবার সমান করে দেয়।
ভারত এখান থেকেই তাল ধরতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণ পর আরেকটি পেনাল্টি কর্নার অর্জন করে, যা অমিত রোহিদাস গোলে পরিণত করে ভারতকে প্রথমবারের জন্য এগিয়ে নিয়ে যায় – স্কোর ৩-২। যদিও এই সুবিধা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বেলজিয়ামও পেনাল্টি কর্নার পায় এবং থিবু লেবোচের তার ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করে স্কোর করে ৩-৩।
শেষ কোয়ার্টার এবং সিদ্ধান্তমূলক মুহূর্ত
যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটি ড্র হবে, তখনই খেলায় এল সবচেয়ে সিদ্ধান্তমূলক মোড়। ম্যাচের শেষ দুই মিনিটে ভারত বেলজিয়ামের সার্কেলে আক্রমণাত্মক হামলা চালায়। ভারতীয় খেলোয়াড়রা রেফারালের দাবী করে, যা সফল হয় এবং ভারত পেনাল্টি স্ট্রোক পায়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে মাঠে নামে অধিনায়ক হারমানপ্রীত সিংহ এবং তিনি চাপ কাটিয়ে সঠিক লক্ষ্যে বল পাঠিয়ে দেন। ভারত ৪-৩ গোলে ম্যাচ জিতে শুধুমাত্র পরাজয়ের ধারা ভাঙেনি, টুর্নামেন্টে ফিরে আসার আশাও জাগ্রত করেছে।
এই জয়ের অর্থ শুধুমাত্র পয়েন্ট টেবিলে সীমাবদ্ধ নয়। ভারত ক্রমাগত সাতটি ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল, যার ফলে দলের মানসিকতা এবং ভক্তদের আস্থা উভয়ই ক্ষুণ্ণ হয়েছিল।