মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র F, M এবং J ভিসার জন্য বিদেশী ছাত্রদের ইন্টারভিউ বন্ধ করে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ের কারণে নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা হবে না, যার ফলে ভারতীয় ছাত্রদের স্বপ্নের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
আমেরিকা: যদি আপনিও আমেরিকায় পড়াশোনার পরিকল্পনা করছেন, তাহলে এই খবর আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে আমেরিকায় পড়াশোনা করা আরও কঠিন হতে পারে।
নতুন আদেশ কি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (US State Department) সমস্ত কনসুলেটকে নির্দেশ দিয়েছে যে Student (F), Vocational (M), এবং Exchange Visitor (J) ভিসার নতুন ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট তৎক্ষণাৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, নতুন আদেশ না আসা পর্যন্ত নতুন ছাত্রদের ইন্টারভিউ নির্ধারণ করা হবে না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো কর্তৃক স্বাক্ষরিত নথির মাধ্যমে এই আদেশ প্রকাশিত হয়েছে, যা মার্কিন মিডিয়া ওয়েবসাইট Politico তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে।
এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো?
আমেরিকায় আগমনকারী ছাত্রদের সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিনিং কঠোর করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সম্প্রতি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইসরায়েল এবং গাজার ইস্যুতে বিক্ষোভে অনেক বিদেশী ছাত্র অংশগ্রহণ করেছিল। এই কারণেই মার্কিন সরকার আরও সতর্ক হয়ে উঠেছে।
নথিতে বলা হয়েছে যে "যতক্ষণ না সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ের নতুন নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়, ততক্ষণ কোনও নতুন ছাত্র বা এক্সচেঞ্জ ভিসার ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা হবে না।"
সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিনিং কি?
সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিনিং মানে হল আমেরিকা যাওয়া প্রতিটি ছাত্রের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট যাচাই করা হবে – আপনার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার (এখন X) এবং লিংকডইন-এর মতো প্রোফাইল, আপনার পোস্ট, কমেন্ট, ফলোয়ার এবং লাইক-শেয়ার সবকিছু পরীক্ষা করা হবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা কি বলেছেন?
মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, "আমেরিকায় আগমনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। আপনি ছাত্র হন, পর্যটক হন বা ওয়ার্ক ভিসায় আসেন না কেন – সবারই গভীর যাচাই করা হবে। এই প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত বলে মনে করা উচিত নয় কারণ এর উদ্দেশ্য হল আমেরিকার সুরক্ষা এবং সামাজিক স্বার্থ রক্ষা করা।"
ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর প্রভাব
ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আমেরিকায় ১১ লক্ষেরও বেশি আন্তর্জাতিক ছাত্র পড়াশোনা করছিলেন। NAFSA-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ছাত্ররা মার্কিন অর্থনীতিতে ৪৩.৮ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখে এবং ৩.৭৮ লক্ষ চাকরি সৃষ্টি করে।
যদি এই নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, তাহলে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আর্থিক অবস্থার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ছাত্রদের ভর্তিতে সমস্যা হবে এবং আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থার বিশ্বব্যাপী ইমেজও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও লক্ষ্যবস্তু
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরও কঠোরতা দেখিয়েছে। প্রশাসন অভিযোগ করেছে যে হার্ভার্ড বিদেশী ছাত্রদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছে এবং Anti-Semitism (যিহুদি বিরোধীতা) কে উৎসাহিত করছে।
যদিও একটি ফেডারেল আদালত এই সিদ্ধান্তে বাধা দিয়েছে, তবুও ট্রাম্প হার্ভার্ড থেকে সমস্ত বিদেশী ছাত্রের তালিকা চেয়েছেন এবং বলেছেন যে এই ছাত্ররা কেবলমাত্র সুবিধা নেয়, আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায় কোনও বিশেষ অবদান রাখে না।
ভারতীয় ছাত্রদের সমস্যা বেড়েছে
প্রতি বছর হাজার হাজার ভারতীয় ছাত্র আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনার জন্য যায়। কিন্তু এখন এই প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠবে। সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিনিংয়ের কারণে ভিসা ইন্টারভিউতে বিলম্ব হবে, যার ফলে ভর্তিতে সমস্যা হবে।
ভারত, চীন, কোরিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া-এর মতো দেশের ছাত্ররা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশ। যদি এই অবস্থা বজায় থাকে, তাহলে আমেরিকার গ্লোবাল এডুকেশনাল লিডারশিপের উপর হুমকি দেখা দিতে পারে।