মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম রাজ্য হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের সাথে তিনি বিনামূল্যে ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কানাডা-আমেরিকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম রাজ্য হতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন, যদি কানাডা এই প্রস্তাব গ্রহণ করে তাহলে আমেরিকা তাদের ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিনামূল্যে দেবে।
ট্রাম্পের ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রোগ্রাম কী?
গোল্ডেন ডোম প্রোগ্রাম আমেরিকার একটি নতুন এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা প্রকল্প, যার ব্যয় প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্পটি একটি বহুস্তরীয় ব্যবস্থা, যা ভূমি ও মহাকাশ থেকে উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র রোধ করার ক্ষমতা রাখে। এর লক্ষ্য হলো মার্কিন নাগরিকদের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ থেকে রক্ষা করা, যে কোনো আক্রমণই হোক না কেন, মহাকাশ থেকেই হোক। ট্রাম্প বলেছেন যে, এই প্রোগ্রাম ২০২৯ সালের মধ্যে পুরোপুরি কার্যকর হবে।
ট্রাম্পের কানাডাকে প্রস্তাব – শর্তসাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রতিরক্ষা
ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, যদি কানাডা আমেরিকার ৫১তম রাজ্য হওয়ার জন্য রাজি হয়, তাহলে তারা এই পুরো ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, "যদি কানাডা একটি পৃথক, কিন্তু অসম রাষ্ট্র হিসেবে থাকে, তাহলে তাদের ৬১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। কিন্তু যদি তারা আমাদের প্রিয় ৫১তম রাজ্য হয়, তাহলে তাদের এক ডলারও ব্যয় করতে হবে না।"
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, কানাডা কি সত্যিই আমেরিকার পরবর্তী রাজ্য হওয়ার পথে এগোচ্ছে কিনা।
কানাডার প্রতিক্রিয়া – আলোচনা অব্যাহত
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন যে, আমেরিকার সাথে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে কার্নি বলেছেন, "কানাডিয়ান জনগণের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা ভালো। আমরা গোল্ডেন ডোম প্রোগ্রাম নিয়ে আমেরিকার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করছি।"
যদিও কানাডা সরকার এখনও পর্যন্ত ট্রাম্পের ৫১তম রাজ্যের প্রস্তাবের উপর কোন স্পষ্ট উত্তর দেয়নি।
গোল্ডেন ডোমের বৈশিষ্ট্য
গোল্ডেন ডোম সিস্টেমকে আমেরিকার প্রতিরক্ষা ইতিহাসের এক গেম চেঞ্জার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে চারটি স্তরে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতা রয়েছে –
- উৎক্ষেপণের আগে আটকানো
- প্রাথমিক উড়ানের সময় আটকানো
- মধ্যবর্তী সময়ে আটকানো
- শেষ প্রভাবের আগে ক্ষেপণাস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করা
এই সিস্টেম ভূমি এবং মহাকাশ উভয় স্থানেই কাজ করবে। ট্রাম্প বলেছেন যে, এই প্রকল্প আমেরিকার নিরাপত্তাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং মহাকাশ ভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থার দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে।
প্রতিরক্ষা ও কূটনীতি – ট্রাম্পের মাস্টারস্ট্রোক?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব কেবলমাত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্প পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বড় কূটনৈতিক মাস্টারস্ট্রোকও হতে পারে। আমেরিকা কানাডাকে নিজের সাথে যুক্ত করে কেবল নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে চায় না, বরং বিশ্ব ক্ষমতার ভারসাম্যেও নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চায়।
