ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা পಟ್টিতে আমেরিকার দখল চান, যাতে এই অঞ্চলটিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটন স্থলে রূপান্তরিত করা যায়। তবে, তার এই প্রস্তাবে আমেরিকার মিত্র ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলি স্পষ্টভাবে আপত্তি জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার দৃঢ় সমর্থক এবং এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠককালে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা পট্টিকে খালি করার এবং পুনর্নির্মাণের তার প্রস্তাব তুলে ধরেন। ট্রাম্পের লক্ষ্য গাজা পট্টিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থল, অর্থাৎ ‘রিভিয়েরা’ তৈরি করা। তিনি বলেছেন, এই পরিকল্পনার জন্য ব্যাপক অর্থ ব্যয় হবে এবং ফিলিস্তিনিদের গাজা অঞ্চল ত্যাগ করতে হবে। তার উদ্দেশ্য গাজা পট্টিকে একটি বিশাল রিসোর্টে পরিণত করা, কিন্তু আরব দেশগুলি এই ধারণার বিরোধিতা করেছে।
আসুন জেনে নেই ট্রাম্পের গাজা রিসোর্ট পরিকল্পনা সম্পর্কে আর এটি কেন বিতর্কিত, ইসরায়েল এটির সমর্থন কেন করছে এবং যদি ফিলিস্তিনিরা গাজা ত্যাগ করে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?
গাজা রিসোর্ট পরিকল্পনা কী?
ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা পট্টিতে আমেরিকার পুরোনো নীতি পরিবর্তনের ইচ্ছুক। তার প্রস্তাবে গাজার মানুষদের তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা এবং পরবর্তীতে অঞ্চলে বিদ্যমান ভবনগুলি ধ্বংস করার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আমেরিকার দখলের পর, গাজা পট্টিকে একটি বিশ্বমানের পর্যটন স্থল হিসেবে পুনঃবিকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে রেলপথ, সড়ক ও বন্দর নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে এই আধুনিক শহর বিশ্বের মানুষকে আকর্ষণ করবে। তবে, ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেননি যে আমেরিকা কীভাবে গাজা দখল করবে, তবে তিনি বলেছেন যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল গাজা আমেরিকাকে হস্তান্তর করবে। উল্লেখ্য, আমেরিকার গাজার উপর কোনও আইনগত অধিকার নেই।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুসারে, প্রায় ২২ লক্ষ ফিলিস্তিনি নাগরিককে মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরিত করা হবে। তিনি বলেন, এই দেশগুলিতে ছয়টি নিরাপদ সম্প্রদায় তৈরি করা হবে, যেখানে ফিলিস্তিনিরা বসবাস করতে পারবে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে গাজার উন্নয়নের ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বিশ্বের মানুষ এখানে বসবাস করতে পারবে, কিন্তু ফিলিস্তিনি নাগরিকদের গাজায় ফিরে আসার কোনও অধিকার থাকবে না।
মিশর ও জর্ডান আমেরিকার সাহায্যের উপর বেশ নির্ভরশীল এবং ট্রাম্প এই দেশগুলিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি তারা ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর করতে অক্ষম হয়, তাহলে আমেরিকা তাদের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেবে।
ফিলিস্তিনি নাগরিকরা কোথায় যাবেন?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিটের মতে, আমেরিকা গাজায় তার সেনাবাহিনী মোতায়েন করবে না। ফিলিস্তিনি নাগরিকদের কিছু সময়ের জন্য তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হবে, যাতে অঞ্চলটির উন্নয়ন করা যায়। ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের জর্ডান ও মিশরে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন, অন্যদিকে ইসরায়েল বিশ্বাস করে যে সৌদি আরবকে গাজার নাগরিকদের তাদের দেশে আশ্রয় দিতে হবে।
গাজায় আমেরিকাকে কী করতে হবে?
গাজার পুনর্নির্মাণ একটি বিশাল প্রকল্প হবে। এতে সড়ক নির্মাণ, পানি ও বিদ্যুৎ লাইন পুনঃস্থাপন, স্কুল, হাসপাতাল ও দোকান পুনর্নির্মাণ এবং বিপজ্জনক বোমা ও বিস্ফোরক সরানো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও, ধ্বংসাবশেষও সরাতে হবে। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, গাজার উন্নয়নে বহু বছর সময় লাগতে পারে।
আরব দেশগুলির বিরোধিতা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিশ্বব্যাপী বিরোধিতা হচ্ছে। জার্মানি, ব্রাজিল, সৌদি আরব, জর্ডান ও মিশর এটিকে অবিলম্বে নাকচ করে দিয়েছে। গাজার মানুষও তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করতে রাজি নয়, যা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সৌদি আরব বলেছে যে, তারা ফিলিস্তিনিদের গৃহহীন করার কোনও পরিকল্পনা মেনে নেবে না।
আরব দেশগুলির ধারণা, ট্রাম্পের প্রস্তাব আরব-ইসরায়েল সংঘাত আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং এতে দুই রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাও বিপন্ন হতে পারে। এছাড়াও, জর্ডান, মিশর ও সৌদি আরবের আশঙ্কা, যদি ফিলিস্তিনিরা এই দেশগুলিতে পালিয়ে যায়, তাহলে এসব দেশের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
আরব দেশগুলির প্রস্তুতি
মিশরের রাজধানী কায়রোতে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরব লীগের একটি বৃহৎ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যার উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করা। এই বৈঠকে গাজার পুনর্নির্মাণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হবে। এর কয়েকদিন আগে, ২০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব চারটি আরব দেশের নেতাদের আতিথেয়তা করবে এবং গাজায় আমেরিকার দখলের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হবে।
গাজা পট্টী কী?
গাজা পট্টী ইসরায়েলের পশ্চিম তীরের একটি ছোট ভূখণ্ড। এটি ৪৫ কিলোমিটার লম্বা এবং সর্বাধিক ১০ কিলোমিটার চওড়া। এর দক্ষিণে মিশরের সিনাই, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর এবং উত্তর ও পূর্বে ইসরায়েল অবস্থিত। গাজার মোট আয়তন ৩৬০ বর্গকিলোমিটার, যা আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে দ্বিগুণ। গাজা পট্টী ফিলিস্তিনের অংশ।