পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু গভীর শোকের কারণ হয়েছে। ভ্যাটিকান একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে এই দুঃখজনক সংবাদ জানিয়েছে যে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম ল্যাটিন আমেরিকান নেতা পোপ ফ্রান্সিস আর আমাদের মাঝে নেই।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু: রোমান ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬তম পোপ পোপ ফ্রান্সিস আর নেই। ৮৮ বছর বয়সে ২০২৫ সালের ২১শে এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়। ভ্যাটিকান সিটির কাসা সান্তা মার্তায় তাঁর মৃত্যু হয়, যেখানে তিনি তাঁর জীবনের শেষ সময় কাটিয়েছিলেন। ভ্যাটিকান সোমবার এই দুঃখজনক সংবাদটি নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে পোপের উভয় ফুসফুসে নিউমোনিয়া ছিল, যার ফলে তাঁর স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে অবনতি হয়েছিল। পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিরাট ক্ষতি।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অসুস্থতা
পোপ ফ্রান্সিস দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০২৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ডাবল নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং প্রায় এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। এই সময়কালে তাঁর অবস্থা গুরুতর ছিল এবং তিনি ভ্যাটিকানের বাসস্থানে বাকি সময় কাটিয়েছিলেন।
২৪শে মার্চ হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে তিনি অসংখ্য মানুষের সাথে দেখা করে তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন। মানুষ তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং তাঁকে দেখে তাদের আনন্দের কোনো সীমা ছিল না।
পূর্বেও পোপ ফ্রান্সিসের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা দেখা গিয়েছিল। তাঁর একটি ফুসফুস যৌবনে সংক্রমণের কারণে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, যার ফলে তাঁকে শ্বাসকষ্টের সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো। ২০২৩ সালেও তাঁকে ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
পোপ ফ্রান্সিসের জীবন ও অবদান
পোপ ফ্রান্সিসের জীবন ধর্ম, শান্তি এবং মানবতার সেবায় উৎসর্গ ছিল। তিনি রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম ল্যাটিন আমেরিকান পোপ ছিলেন এবং তাঁর আমলে বিশেষ করে সমাজের দরিদ্র ও বঞ্চিত শ্রেণীর প্রতি উৎসর্গ ছিল। তিনি তাঁর জীবন সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন এবং দরিদ্র, শরণার্থী এবং অন্যান্য দরকারীদের জন্য কাজ করেছিলেন। তাঁর সরলতা, ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতি তাঁকে বিশ্বজুড়ে সম্মান অর্জন করে দিয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিস সর্বদা বিশ্বজুড়ে শান্তি, ভ্রাতৃত্ব এবং ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে সকল মানুষ একই ঈশ্বরের সন্তান এবং আমাদের তাঁদের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করতে হবে। তিনি সর্বদা সেইসব মানুষের সাহায্য করেছেন যাদের কণ্ঠস্বর বিশ্বে প্রায়শই দমন করা হয়, যেমন শরণার্থী, দরিদ্র এবং অসুস্থ।
ভারত সফরের পরিকল্পনা
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর সাথে সাথেই তাঁর আসন্ন ভ্রমণের বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালে ভারতে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং ভারত সরকার তাঁকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন যে পোপের ভারত সফরের সম্ভাবনা ছিল, যা ২০২৫ সালের পর নির্ধারিত ছিল। ২০২৫ সালে ক্যাথলিক চার্চ জুবিলি বছর হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং ভারতে পোপ ফ্রান্সিসের স্বাগত জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যক্তিগতভাবে পোপকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে, এখন পোপের মৃত্যুর কারণে এই ভ্রমণ আর সম্পন্ন হবে না।
তাঁর শেষ দিনগুলিতে পোপ ফ্রান্সিস একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বের নেতাদের কাছে আবেদন করেছিলেন যে তারা রাজনৈতিক পদে বসে ভয়ের কাছে না নতি স্বীকার করে। তাঁর বিশ্বাস ছিল ভয় মানুষকে আলাদা করে এবং শান্তির দিকে বাধা সৃষ্টি করে। তিনি দরকারীদের সাহায্য করার, ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং উন্নয়নকে সমর্থনকারী উদ্যোগগুলিকে উৎসাহিত করার জন্য সংস্থানের সঠিক ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তাঁর ইস্টার বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন, "আমি সকল রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আবেদন করছি যেন তারা ভয়ের কাছে নতি স্বীকার না করে। আমাদের একসাথে থাকা উচিত, অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ার পরিবর্তে। আমাদের সেইসব মানুষের সাহায্য করার জন্য আমাদের সংস্থান ব্যবহার করা উচিত যারা সবচেয়ে বেশি দরকারী।" তাঁর এই বার্তা চিরকাল মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।
পোপের অসাধারণ অবদান
পোপ ফ্রান্সিস কেবল ধর্মীয় বিষয়ে তাঁর ভূমিকা পালন করেননি, বরং তিনি বিশ্বব্যাপী অনেক সামাজিক বিষয়েও কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছেন। তাঁর কাজ বিশেষ করে পরিবেশ সুরক্ষা, শরণার্থীদের অধিকার এবং বিশ্ব শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং ধর্মীয় সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য ধর্মের নেতাদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন। তাঁর অবদান কেবল ক্যাথলিক চার্চ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি বিশ্ব রাজনীতি, সমাজ এবং ধর্মেও ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে কাজ করেছেন।