নেপালে রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি: জনগণের ক্ষোভ ও প্রাক্তন রাজার নীরবতা

নেপালে রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি: জনগণের ক্ষোভ ও প্রাক্তন রাজার নীরবতা
সর্বশেষ আপডেট: 10-03-2025

২০০৮ সাল পর্যন্ত নেপাল ছিল বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র, যেখানে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ শাসন করতেন। মাওবাদী আন্দোলনের পরে ক্ষমতা পরিবর্তন হয়, কিন্তু এখন নেপালে আবার রাজতন্ত্রের দাবি উঠছে।

Nepal: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে। মানুষরা নারা দিচ্ছিল— "নারায়ণহিটি খালি করো, আমাদের রাজা আসছেন" এবং "জয় পশুপতিনাথ, আমাদের রাজার আগমন হোক"। এই ভিড় নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয়েছিল।

প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ নেপালের পর্যটন স্থল পোখরায় দুই মাস কাটানোর পর কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি অনেক মন্দির এবং ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করেন এবং জনগণের সাথে দেখা করেন। তাঁর ফিরে আসার সাথে সাথে নেপালে রাজতন্ত্র পুনঃস্থাপন এবং হিন্দু রাষ্ট্রের দাবি আরও জোরদার হয়েছে।

নেপালে আবার উঠছে রাজতন্ত্রের দাবি

নেপাল একসময় বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র ছিল, যেখানে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জ্ঞানেন্দ্র শাহ রাজা ছিলেন। কিন্তু মাওবাদী আন্দোলন এবং বামপন্থী বিপ্লবের পর নেপাল রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে গণতন্ত্র গ্রহণ করে। তবে, গত কয়েক বছরে নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে জনগণের মধ্যে আবার রাজতন্ত্রের দাবি উঠতে শুরু করেছে।

জাতীয় প্রজাতান্ত্রিক দল (RPP), যা নেপালে হিন্দু রাষ্ট্র এবং রাজতন্ত্রের সমর্থন করে, এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই দলটি আগেও নেপালে রাজতন্ত্রের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছিল। ২০২২ সালের নির্বাচনে এটি ১৪টি আসন জিতেছে, যা থেকে স্পষ্ট হয় যে নেপালে রাজতন্ত্র সমর্থকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জনগণ কেন রাজতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন চায়?

নেপালে বিগত ১৬ বছরে ১৩টি সরকার পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। জনগণের অভিযোগ, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং দুর্নীতি বেড়েছে, যার ফলে মানুষের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে।

র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারী কুলরাজ শ্রেষ্ঠ, যিনি আগে রাজতন্ত্রবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন, এখন তার মতামত পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেছেন, "আমাদের মনে হয়েছিল গণতন্ত্রের মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নত হবে, কিন্তু নেপালে কিছুই পরিবর্তন হয়নি, বরং অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তাই আমরা আমাদের রাজাকে ফিরে চাই।"

নেপালে কি আবার রাজতন্ত্র ফিরে আসতে পারে?

নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দল, যেমন নেপালি কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট দল, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থন করে। নেপালে রাজতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের জন্য সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে, যা সংসদীয় সমর্থন ছাড়া কার্যকর করা কঠিন হবে।

নেপালের বিখ্যাত সংবাদপত্র 'কাঁথামাণ্ডু'র সম্পাদক উমেশ চৌহান বলেছেন, "মানুষ বর্তমান সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ এবং বিকল্প খুঁজছে, কিন্তু তাদের কাছে রাজতন্ত্র কোনো সুস্পষ্ট সমাধান বলে মনে হয় না।"

প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের নীরবতা

প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেননি, কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক কার্যকলাপ থেকে বোঝা যায় যে তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও তিনি সাধারণভাবে কোন বড় বক্তব্য দেননি, কিন্তু তাঁর সমর্থকরা এই আন্দোলনকে নতুন দিক দিতে চেষ্টা করছে।

প্রধানমন্ত্রী ওলীর সতর্কতা

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে রাজনীতিতে আসার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "যদি তারা রাজনীতিতে আসতে চান, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন এবং সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ফিরে আসুন। কিন্তু তাদের আন্দোলন দেশে অস্থিরতা এবং অরাজকতা বৃদ্ধি করতে পারে।"

Leave a comment