দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থপাচারের নতুন আখড়া হিসেবে পরিণত হচ্ছে নেপাল। এখন আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থাগুলির রাডারে রয়েছে দেশটি। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) নেপালকে তাদের ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা স্পষ্ট করে দেশের আর্থিক ব্যবস্থা সন্দেহজনক কার্যকলাপের জন্য দুর্বল।
কাঠমান্ডু: দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থপাচারের নতুন আখড়া হিসেবে পরিণত হচ্ছে নেপাল। এখন আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থাগুলির রাডারে রয়েছে দেশটি। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) নেপালকে তাদের ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা স্পষ্ট করে দেশের আর্থিক ব্যবস্থা সন্দেহজনক কার্যকলাপের জন্য দুর্বল। ভারতের সাথে উন্মুক্ত সীমান্ত, অনানুষ্ঠানিক আর্থিক লেনদেন, দুর্নীতি এবং দুর্বল নজরদারি ব্যবস্থা নেপালকে অবৈধ অর্থের পরিবহন কেন্দ্রে পরিণত করছে।
নেপালের আর্থিক নীতি কালো অর্থের মূল
নেপাল সরকারের বর্তমান আর্থিক নীতিতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে অবৈধ বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হচ্ছেন। বর্তমান আইন অনুসারে, যদি কেউ অবকাঠামো প্রকল্প এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে, তাহলে তার আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় না। এই বিধান দুর্নীতি এবং কালো অর্থকে বৃদ্ধি পেতে সুযোগ দিয়েছে।
এছাড়াও, নেপালের অর্থনীতি হুন্ডি, ধুকুটি এবং অনানুষ্ঠানিক ঋণের মতো ছদ্ম আর্থিক লেনদেনের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত নেপালি প্রবাসী শ্রমিকরা হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে অধিক পরিমাণ অর্থ নেপালে পাঠায়, যা আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে থাকে। ২০০৮ সালেও FATF নেপালকে ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল, এর পর ২০২৪ সালে কিছু আর্থিক সংস্কার করা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলি যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি।
ধূসর তালিকায় যাওয়ার ফলে নেপালকে হবে বড় ক্ষতি
FATF-এর ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়বে নেপালের অর্থনীতিতে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা দুর্বল হবে, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে এবং নেপালের রপ্তানি প্রভাবিত হতে পারে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে সহায়তা পাওয়াও কঠিন হতে পারে। আমেরিকা নেপালকে প্রায় ৩.৯ কোটি ডলারের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে, যার মধ্যে ২০ কোটি ডলার ফেডারেল কাঠামো উন্নয়নের জন্য এবং ১.৯ কোটি ডলার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য ছিল। নেপালে বিদেশী সাহায্যের অপব্যবহার এবং আর্থিক অনিয়মের ঘটনা সামনে আসার পরে আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নেপালে বর্ধমান সাইবার এবং আর্থিক অপরাধ
FATF এবং এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (APG)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে নেপালে আর্থিক অপরাধের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোরপূর্বক আদায়, প্রতারণা, দুর্নীতি এবং সংগঠিত অপরাধের সাথে জড়িত ঘটনা নেপালের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলে ধরেছে। গত বছর অক্টোবরে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিন ব্যক্তি একজন ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায়ী থেকে ৫০ লক্ষ টাকা জোরপূর্বক আদায় করেছিলেন। নেপালে সাইবার অপরাধও বেড়ে উঠছে, কারণ ডিজিটাল সুরক্ষা কাঠামো দুর্বল এবং সাইবার আইনগুলি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
FATF-এর ধূসর তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নেপাল সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা, ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং ভারতের সাথে উন্মুক্ত সীমান্তে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।