নেপালে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে তীব্র বিক্ষোভ

নেপালে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে তীব্র বিক্ষোভ
সর্বশেষ আপডেট: 29-03-2025

নেপালে রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবী তীব্রতর হচ্ছে। কাঠমান্ডুতে হওয়া বিক্ষোভে মানুষ রাজ পরিবারকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার দাবী তুলেছে, দেশের রাজনৈতিক অসন্তোষের মধ্যে।

নেপাল: নেপালে আবারও রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবী জোরালো হচ্ছে। রাজতন্ত্র সমর্থকদের দাবি, দেশের বর্তমান অবস্থার উন্নতির জন্য শুধুমাত্র রাজ পরিবারই সক্ষম। সম্প্রতি কাঠমান্ডুর রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে 'রাজা ফিরে আসো, দেশ বাঁচাও' ধরণের স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এই বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নেপালের রাজনৈতিক দলগুলি দুর্নীত হয়ে গেছে এবং তাদের নীতি দেশের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।

রাজতন্ত্র সমর্থকদের আন্দোলন

রাজতন্ত্র সমর্থকদের দাবি, যখন রাজ পরিবার ক্ষমতায় ছিল, তখন দেশের সমস্যার সমাধান হতো এবং জাতির উন্নয়নও হতো। এখন, রাজনৈতিক অসন্তোষের কারণে মানুষ মনে করছে যে গণতান্ত্রিক সরকারগুলি তাদের জন্য কাজ করছে না এবং নেপালের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই আন্দোলনের ফলে সম্প্রতি বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, যাতে একজন সাংবাদিকসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

নেপালের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা

নেপালের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটাপন্ন, এবং বেকারত্বের কারণে দেশের যুবকরা ব্যাপকভাবে বিদেশে চলে যাচ্ছে। নেপালের বিদেশ নীতি এবং রাজনৈতিক কাঠামো নিয়েও জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। রাজতন্ত্রের সমর্থকরা মনে করেন যে রাজ পরিবারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা উন্নত হতে পারে।

নেপালে ধর্ম ও জনসংখ্যার বিবাদ

নেপালে ধর্মের প্রসঙ্গেও বিতর্ক বাড়ছে। ২০২১ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, নেপালে ৮১% মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, এরপর বৌদ্ধ, ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী রয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নেপালে চার্চের সংখ্যায় ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপকভাবে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করছে। এতে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা উদ্বিগ্ন এবং তারা চায় রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নেপালের ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করা হোক।

রাজতন্ত্রের ইতিহাস

নেপালে রাজতন্ত্রের সূচনা প্রায় আড়াইশো বছর আগে, কিন্তু ২০০৮ সালে শেষ রাজা গ্‍্যানেন্দ্রকে উৎখাত করা হয়। এরপর নেপালকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালে রাজ পরিবারের একজন সদস্যের দ্বারা পরিবারের ৯ জনের হত্যাকাণ্ডের পর নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় এবং মাওবাদী শক্তিগুলি শক্তিশালী হয়। ফলে রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয় এবং নেপাল ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়ার দিকে অগ্রসর হয়।

পূর্ব রাজা গ্‍্যানেন্দ্র এবং তাঁর সম্পত্তি

পূর্ব রাজা গ্‍্যানেন্দ্র, যাঁর ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে, আজও নেপাল এবং বিদেশে তাঁর সম্পত্তি এবং প্রভাব বজায় রেখেছেন। নেপালের কাঠমান্ডুতে তাঁর কয়েকটি প্রাসাদ রয়েছে, যেমন নির্মল নিবাস, জীবন নিবাস, গোকর্ণ প্রাসাদ এবং নাগার্জুন প্রাসাদ। এছাড়াও, তাঁর কাছে হাজার হাজার একর জুড়ে নাগার্জুন বন রয়েছে। নেপাল ছাড়াও, তিনি আফ্রিকার দেশগুলিতেও বিনিয়োগ করেছেন। মালদ্বীপে তাঁর একটি দ্বীপ রয়েছে এবং নাইজেরিয়ায় তেল ব্যবসায়ও তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে।

Leave a comment