ইরানে আমেরিকার আক্রমণ: পাক সেনাপ্রধানের সমালোচনা তীব্র

ইরানে আমেরিকার আক্রমণ: পাক সেনাপ্রধানের সমালোচনা তীব্র
সর্বশেষ আপডেট: 1 দিন আগে

ইরানে আমেরিকার আক্রমণের পর পাকিস্তানে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সমালোচনা তীব্র হয়েছে। ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দिलाতে চেষ্টা করার পর এখন জনতা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে গোঁড়া বলেও অভিহিত করছে।

পাকিস্তান: ইরানে আমেরিকার আক্রমণের পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির আবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। কয়েকদিন আগেও যাঁর আমেরিকা সফরকে ঐতিহাসিক ও সফল বলা হচ্ছিল, এখন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

পাকিস্তানের জনতার রাগের কারণ হল, সরকার সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিজেই পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই আমেরিকা ইরানে আক্রমণ করে, যার ফলে পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে যায়।

ওয়াইট হাউস সফর এবং নোবেলের প্রস্তাব

১৮ জুন ২০২৫-এ ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ওয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। সেখানে তিনি ট্রাম্পের ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত রোধ করার কথিত ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন এবং তাঁকে নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন করার দাবি জানিয়েছিলেন।

এর পর পাকিস্তান সরকার ট্রাম্পের নাম নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে দিয়েছে। সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা এই প্রস্তাবের সমর্থন করেছিলেন। এই পদক্ষেপ তখন শিরোনামে আসে যখন পাকিস্তানের মিডিয়া মুনিরকে 'শান্তির মশীহা' বলে চিহ্নিত করতে শুরু করে।

আমেরিকা-ইরান যুদ্ধ এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি

পরিস্থিতি তখন পাল্টে যায় যখন আমেরিকা ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে ঘটে, যাতে আমেরিকা স্পষ্টভাবে হস্তক্ষেপ করে। এই আক্রমণের পর পাকিস্তানে উদ্বেগ ও ক্ষোভ উভয়ই বেড়ে যায়।

জনতা প্রশ্ন উত্থাপন করতে শুরু করে যে, যাকে শান্তির জন্য নোবেল দেওয়ার কথা বলা হচ্ছিল, সেই ব্যক্তি যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলেছে। লোকেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মুনিরকে লক্ষ্য করে এবং এটিকে একটি লজ্জাজনক পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানি সাংবাদিক আমির আব্বাস টুইট করেছেন যে, যাকে একসময় চেঙ্গিস খান ও হিটলার বলা হত, এখন তাঁকে শান্তির প্রতীক বলা হচ্ছে। তিনি লিখেছেন, এটি ভীরুতা ও আত্মসমর্পণের রাজনীতি।

আরেকজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, এটি দেশ নয়, জেনারেল মুনিরের লজ্জার ঘড়ি। তিনি এটিকে 'গোঁড়ামি' বলে উল্লেখ করে বলেন, পাকিস্তানের সেনা ইসলামি জগতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

কেউ লিখেছেন, যদি আমেরিকার আক্রমণ সফল হয়, তাহলে তার বিকিরণ পাকিস্তান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং এর প্রভাব লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর পড়বে। তিনি বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে জেনারেল মুনিরও সমান দোষী হবেন।

উম্মাহ এবং ইসলামি ঐক্যের উপর প্রশ্ন

অনেক লোক উম্মাহ অর্থাৎ ইসলামি ঐক্যের নীতির উপর প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলেছে, জেনারেল জিয়া-উল-হক ও পারভেজ মুশাররফের পর আসিম মুনিরও প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, পাকিস্তান সেনার কাছে উম্মাহর কোনো মূল্য নেই। তাদের কেবল আমেরিকা ও ডলারের প্রতিই আগ্রহ।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, এখন পাকিস্তান বাঁচবে নাকি দুর্নীতিগ্রস্ত সেনাবাহিনী। দুটো একসাথে চলতে পারে না। তিনি সেনাবাহিনীর চরিত্রের উপরও প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে এটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।

বিরোধী ও নাগরিকদের ক্ষোভ

কেবল সাধারণ জনতা নয়, বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবীও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এই মনোনয়নের ফলে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি দুর্বল হয়েছে। তারা সরকারের কাছে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।

একজন ব্যবহারকারী আমির খান লিখেছেন, শাহবাজ শরিফ, আসিফ আলী জারদারী, নওয়াজ শরিফ ও আসিম মুনিরের মতো নেতারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল দিতে চান, যিনি মুসলমানদের গণহত্যার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। তিনি এটিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন।

```

Leave a comment