ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ পেশ করা হয়েছে, যাতে ওয়াক্ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন, সরকারি সম্পত্তির অবস্থা স্পষ্ট করা এবং ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালের গঠনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ব্যাখ্যা: কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ২ এপ্রিল লোকসভায় ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪ পেশ করেন। এই বিলের উদ্দেশ্য হল ওয়াক্ফ সম্পত্তির প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় উন্নতি সাধন, ১৯৯৫ সালের আইনের ত্রুটি দূর করা এবং প্রযুক্তিভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। বিরোধী দলগুলি এই বিলের বিরোধিতা করেছে এবং এটিকে ওয়াক্ফ বোর্ডের স্বায়ত্তশাসনে আক্রমণ এবং সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে।
কী ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪?
ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪ ওয়াক্ফ আইন ১৯৯৫-এ গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর প্রস্তাব করে। এই বিল ওয়াক্ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আনা হয়েছে।
প্রধান পরিবর্তনগুলি কী কী?
১. ‘ব্যবহারের ভিত্তিতে ওয়াক্ফ’ ধারণা বাতিল:
এখন কোনও জমি শুধুমাত্র দীর্ঘদিন ধরে ওয়াক্ফ হিসেবে ব্যবহারের ভিত্তিতে ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হবে না। এই জমি কেবলমাত্র তখনই ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হবে যখন তা আইনসঙ্গতভাবে ওয়াক্ফ হিসেবে ঘোষণা বা উৎসর্গ করা হবে।
২. ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে দান করার নতুন শর্তাবলী:
এখন ওয়াক্ফের জন্য জমি দানকারী ব্যক্তির কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে মুসলিম হওয়া বাধ্যতামূলক। এর সাথে সাথে মুসলিম নারীদের উত্তরাধিকার অধিকারকেও সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
৩. সরকারি জমিতে স্পষ্টতা:
নতুন বিলে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে যে, যদি কোনও সরকারি সম্পত্তি ভুলক্রমে ওয়াক্ফ হিসেবে নথিভুক্ত হয়, তাহলে সেটি আর ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হবে না। যদি কোনও বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে জেলাশাসক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন এবং মামলাটি রাজ্যের ভূ-রাজস্ব আইন অনুসারে নিষ্পত্তি করা হবে।
৪. ওয়াক্ফ সম্পত্তি ঘোষণার অধিকার এখন রাজ্য সরকারের কাছে:
এখন ওয়াক্ফ সম্পত্তি ঘোষণার অধিকার ওয়াক্ফ বোর্ডের পরিবর্তে রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কর্মকর্তাদের কাছে থাকবে।
৫. জরিপের দায়িত্বে পরিবর্তন:
ওয়াক্ফ সম্পত্তির জরিপের দায়িত্ব এখন জেলাশাসকের কাছে দেওয়া হয়েছে, যাতে এটি রাজ্যের ভূমি রেকর্ডের সাথে উন্নত সমন্বয় স্থাপন করা যায়।
কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ পরিষদের পুনর্গঠন
পূর্ববর্তী আইন অনুসারে, কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ পরিষদের সকল সদস্য মুসলিম ছিলেন। নতুন বিলে দুইজন অ-মুসলিম সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। তবে, মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধি, ইসলামি আইনের জ্ঞানী এবং ওয়াক্ফ বোর্ডের সভাপতি মুসলিমই থাকবেন। দুইজন মুসলিম নারীর উপস্থিতিও বাধ্যতামূলক হবে।
রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে পরিবর্তন
ওয়াক্ফ বোর্ডে এখন রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত সকল সদস্য থাকবেন। এছাড়াও, দুইজন অ-মুসলিম সদস্য, শিয়া, সুন্নি, পিছিয়ে পড়া মুসলিম, বোহরা এবং আগা খানী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিও থাকবেন। কমপক্ষে দুইজন মুসলিম নারীও সদস্য থাকবেন।
ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালের গঠনে পরিবর্তন
নতুন বিলে ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালের গঠনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনালে জেলা আদালতের বিচারক সভাপতি হবেন এবং একজন রাজ্য সরকারের যুগ্ম সচিব সদস্য হবেন, যখন মুসলিম আইন বিশেষজ্ঞের বাধ্যতামূলকতা বাতিল করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের অ্যাক্সেস এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা
নতুন বিলে ওয়াক্ফ বিরোধে হাইকোর্টের ভূমিকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যাবে। এর সাথে সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ওয়াক্ফ হিসাবের নিরীক্ষণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে থাকবে।
বোহরা এবং আগা খানী ওয়াক্ফ বোর্ডের বিধান
নতুন আইনি ব্যবস্থার অধীনে বোহরা এবং আগা খানী সম্প্রদায়ের জন্যও ওয়াক্ফ বোর্ডের বিধান রাখা হয়েছে। যদি শিয়া ওয়াক্ফ সম্পত্তি মোট ওয়াক্ফ সম্পত্তির ১৫% এর বেশি হয়, তাহলে শিয়া ওয়াক্ফ বোর্ড গঠন করা যাবে। এখন এই বিধান বোহরা এবং আগা খানী সম্প্রদায়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে।