সুপ্রীম কোর্টের এই বক্তব্য বিনামূল্যে পরিকল্পনার ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং এর প্রভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে ধরে। কোর্ট মনে করেছে যে বিনামূল্যে পরিকল্পনার প্রভাব কেবলমাত্র রাজ্যের আর্থিক ভাণ্ডারের উপর নয়, বরং মানুষের কর্মক্ষমতার উপরও পড়তে পারে।
নয়াদিল্লি: সুপ্রীম কোর্টের বিনামূল্যে পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য ভারতীয় রাজনীতিতে একটি নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে বিনামূল্যে রেশন এবং অর্থের পরিকল্পনার ফলে মানুষের কাজ করার প্রবণতা কমতে পারে এবং একটি পরজীবী শ্রেণীর উত্থান ঘটতে পারে যারা মূলস্রোত থেকে দূরে থাকতে পারে। এছাড়াও, নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা বিনামূল্যে পরিকল্পনার ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
বিনামূল্যে রেওয়াড়ি কী?
"ফ্রিবিজ" বা "বিনামূল্যে রেওয়াড়ি" হল সেইসব পরিকল্পনা যাতে সরকার বা রাজনৈতিক দল কোনও শর্ত ছাড়াই মানুষকে বিনামূল্যে কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই পরিকল্পনাগুলি রেশন, অর্থ, বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সামাজিক কল্যাণ পরিকল্পনার আওতায় হতে পারে।
কেন্দ্র সরকারের বিনামূল্যে পরিকল্পনা
কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণ পরিকল্পনার আওতায় বিনামূল্যে সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার উদ্দেশ্য বিভিন্ন শ্রেণীর অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। নিম্নলিখিত কিছু প্রধান বিনামূল্যে পরিকল্পনা হল:
১. প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PMAY): এই পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র এবং প্রয়োজনীয় শ্রেণীর কাছে আবাসন সরবরাহ করা। এই পরিকল্পনাটি ২০১৪ সালে চালু করা হয়েছিল এবং এর লক্ষ্য ২০২২ সালের মধ্যে প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে নিজস্ব ঘর প্রদান করা।
২. উজ্জ্বলা যোজনা: এই পরিকল্পনাটি ১ মে ২০১৬ সালে চালু করা হয়েছিল এবং এর উদ্দেশ্য নারীদের বিনামূল্যে LPG সংযোগ প্রদান করা, যাতে তারা নিরাপদ এবং পরিষ্কার শক্তির ব্যবহার করতে পারে।
৩. আয়ুষ্মান ভারত যোজনা: এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য দরিদ্র পরিবারগুলিকে উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা।
৪. কৃষক সম্মান নিধি: এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
৫. বিনামূল্যে রেশন যোজনা: এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য প্রয়োজনীয় পরিবারগুলিকে সময়মতো খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা, বিশেষ করে কঠিন সময়ে যেমন করোনা মহামারীর সময়।
রাজ্যে চলমান বিনামূল্যে পরিকল্পনা
১. মধ্যপ্রদেশ
লাডলি বহনা যোজনার যোগ্য নারীদের প্রতি মাসে ১২৫০ টাকা পাওয়া যায়।
১২তম পাস করা মেধাবী ছাত্রীদের স্কুটি।
১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ১০০ টাকায়।
কৃষকদের বার্ষিক ১২ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
২১ বছর বয়সে যোগ্য ছাত্রীদের ১ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা।
২. পাঞ্জাব
৩০০ ইউনিট বিনামূল্যে বিদ্যুতের উপহার।
মহিলাদের প্রতি মাসে ১০০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। এখনও কার্যকর হয়নি।
৩. ঝাড়খণ্ড
২০০ ইউনিট বিনামূল্যে বিদ্যুতের সুবিধা।
মাইয়া সম্মান যোজনা- নারীদের প্রতি মাসে ২৫০০ টাকা।
৪. হিমাচল
গৃহস্থালী সংযোগে ১২৫ ইউনিট বিনামূল্যে বিদ্যুৎ।
ইন্দিরা গান্ধী প্রিয় বহনা সুখ সম্মান যোজনা: নারীদের প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা।
৫. রাজস্থান
লাডো প্রোৎসাহন যোজনা: শিশুকন্যার জন্মে ২ লক্ষ টাকার সেভিং বন্ডের প্রতিশ্রুতি।
১২তম পাস করা মেধাবী ছাত্রীদের স্কুটি।
কৃষক সম্মান নিধিতে ৬০০০ টাকা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি।
৬. কর্ণাটক
গৃহ লক্ষ্মী যোজনা: নারীদের প্রতি মাসে ২০০০ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা।
শক্তি গ্যারান্টি যোজনা: বাসে নারীদের বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা।
৭. তামিলনাড়ু
পরিবারের মুখ্য ব্যক্তিকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা সাহায্য।
বাসে নারীদের বিনামূল্যে ভ্রমণের ব্যবস্থা।
৮. ছত্তিসগড়
দরিদ্র নারীদের ৫০০ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার।
মহতারী বন্দন স্কিম: বিবাহিত নারীদের বার্ষিক ১২০০০ টাকা সাহায্য।
দীনদয়াল উপাধ্যায় কৃষি শ্রমিক যোজনা: ভূমিহীন কৃষক ও শ্রমিকদের বার্ষিক ১০০০০ টাকা সাহায্য।
৯. তেলেঙ্গানা
যোগ্য নারীদের প্রতি মাসে ২৫০০ টাকা।
২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ।
৫০০ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার।
বাসে নারীদের বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা।
১৮,০০০ কোটি টাকার ঋণ মাফের ঘোষণা।
১০. মহারাষ্ট্র
প্রতিটি দরিদ্র ব্যক্তিকে খাদ্য ও আশ্রয়ের সুবিধা।
কৃষক সম্মান যোজনার আওতায় ১৫০০০ টাকা।
কৃষকদের ঋণ মাফের প্রতিশ্রুতি।
নারী ও বৃদ্ধদের প্রতি মাসে ২১০০ টাকার ঘোষণা।
১১. দিল্লি: আপ সরকারে
প্রতি মাসে ২০ হাজার লিটার বিনামূল্যে পানি।
প্রতি মাসে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ।
নারীদের বিনামূল্যে বাসে যাতায়াত।
বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা।
বৃদ্ধদের বিনামূল্যে তীর্থযাত্রা।
বিজেপির প্রতিশ্রুতি
আয়ুষ্মান ভারতের আওতায় ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি।
নারীদের প্রতি মাসে ২৫০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
১২. গুজরাট
গুজরাট সরকার গঙ্গা স্বরূপা যোজনার আওতায় বিধবা নারীদের প্রতি মাসে ১২৫০ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করে।
ইন্দিরা গান্ধী বৃদ্ধা পেনশনের আওতায় এক হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।
১৩. হরিয়ানা
মাতৃভাষা সত্যাগ্রহীদের পেনশন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার করার প্রতিশ্রুতি।
স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন ২৭ হাজার পর্যন্ত করার প্রতিশ্রুতি।
স্ট্রিট ভেন্ডর এবং ফেরিওয়ালাদের বার্ষিক ১০ হাজার টাকা সাহায্যের কথা।
অন্তোদয় ও বিপিএল পরিবারকে ৫০০ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার।
পাঁচ লক্ষ আবাসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
পাঁচ লক্ষ ঘরে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ।
ধানের পরিবর্তে অন্যান্য ফসলে প্রতি একর ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
১৪. উত্তরপ্রদেশ
ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে মোবাইল এবং ট্যাবলেট।
কৃষকদের বিনামূল্যে বিদ্যুতের ঘোষণা।
```