সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি (অন ডিমান্ড ভিডিও স্ট্রিমিং) প্ল্যাটফর্মে অশ্লীল ও আপত্তিকর কনটেন্ট স্ট্রিমিং বন্ধের দাবি জানিয়ে দায়েরকৃত জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্র সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলিকে নোটিস জারি করেছে।
নয়াদিল্লি: সোমবার সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্র সরকার, ওটিটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে নোটিস জারি করেছে। মামলায় অশ্লীল কনটেন্ট স্ট্রিমিং বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করা হয়েছিল। এই মামলায় বিচারপতি বি আর গাওয়াই ও বিচারপতি এ জি মাসিহের বেঞ্চ দেখেছেন যে, মামলায় উত্থাপিত বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে অশ্লীল সামগ্রীর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, আল্ট বালাজি, উল্লু, এএলটিটি, এক্স, মেটা ইঙ্ক, গুগল, মুবি, অ্যাপল এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এই মামলায় জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের নোটিস ও মামলার গুরুত্ব
সোমবার এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি করে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র সরকার ও সোশ্যাল মিডিয়া/ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিকে নোটিস জারি করেছে। আদালত নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, আল্ট বালাজি, উল্লু, এএলটিটি, এক্স (পূর্বে টুইটার), মেটা ইঙ্ক, গুগল, মুবি, অ্যাপল এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে জবাব চেয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে প্রচারিত অশ্লীল কনটেন্টের উপর ফোকাস করে সুপ্রিম কোর্ট এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। আদালতের মতে, এই বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে, কারণ কোনো কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে আপত্তিকর সামগ্রী প্রচারিত হচ্ছে।
এই মামলায় আবেদনকারীর পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন যুক্তি দিয়েছেন যে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিতে অশ্লীল সামগ্রী অবাধে প্রচারিত হচ্ছে, যার সমাজের উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, কোনো স্পষ্ট তত্ত্বাবধান ছাড়াই এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে উপস্থাপিত সামগ্রী কেবলমাত্র আপত্তিকর নয়, শিশু ও যুবকদের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মামলায় বিশেষ কি?
মামলায় কেন্দ্র সরকারের কাছে দাবি করা হয়েছে যে, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌনতাপূর্ণ, অশ্লীল, শিশু যৌন নির্যাতন এবং অন্যান্য আপত্তিকর সামগ্রীর স্ট্রিমিং বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। মামলায় আরও বলা হয়েছে যে, এই ধরনের সামগ্রীর ফলে শিশু ও কিশোরদের উপর ভুল প্রভাব পড়ে এবং এটি বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আবেদনকারীদের দাবি, এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে প্রদর্শিত অশ্লীল চলচ্চিত্র, নগ্নতায় ভরা দৃশ্য এবং এক্স-রেটেড কনটেন্টের ফলে ভারতীয় সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি, এই প্ল্যাটফর্মগুলি ভারতের সাংস্কৃতিক ধারা ও পারিবারিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
কেন্দ্র সরকারের অবস্থান
এই মামলায় কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন যে, সেন্সরশিপের বিরোধিতা করা হচ্ছে, কিন্তু তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, কিছুটা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তুষার মেহতা আরও জানিয়েছেন যে, অনেকবার সরকারি সংস্থা কিছু আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে, কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। তিনি বলেছেন যে, সরকার এই দিকে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং অনেক নিয়ন্ত্রণ বিচারাধীন রয়েছে।
সলিসিটর জেনারেল আরও বলেছেন যে, কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং এর জন্য আরও নিয়ন্ত্রণ ও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন। তিনি আদালতের কাছে অনুরোধ করেছেন যে, এই বিষয়ে দ্রুত শুনানি করা হোক যাতে সমাজে ছড়িয়ে পড়া নেতিবাচক প্রভাব বন্ধ করা যায়।
সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলাটিকে নীতিগত বিষয় বলে মনে করে কেন্দ্র সরকারের কাছে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আশা প্রকাশ করেছে। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে যে, এই মামলাটি কেন্দ্র সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে এবং এটি নীতিগত স্তরে সমাধান করা উচিত। আদালত আরও বলেছে যে, এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন, কারণ এতে সমাজের সামাজিক ও নৈতিক গঠন নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে।
বেঞ্চ বলেছে যে, মামলায় উত্থাপিত বিষয়টি কেবল আইন ও প্রশাসনিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর কল্যাণের সাথেও জড়িত। আদালত ওটিটি ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া চেয়েছে এবং পরবর্তী শুনানির জন্য জবাব দিতে বলেছে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলি ভারতে তাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে এবং লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করেছে। তবে, এর মধ্যে অনেক প্ল্যাটফর্মে অশ্লীল, ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কিছু বিতর্কিত কনটেন্ট প্রচারিত হয়েছে।
এর আগেও বারবার সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অশ্লীল ও হিংসার সাথে সম্পর্কিত কনটেন্ট প্রচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
