সুপ্রিম কোর্টে ২০২৫ সালের ওয়াকফ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ

সুপ্রিম কোর্টে ২০২৫ সালের ওয়াকফ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ
সর্বশেষ আপডেট: 21-05-2025

২০২৫ সালের ওয়াকফ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কোর্ট বলেছে- যতক্ষণ পর্যন্ত বলিষ্ঠ ভিত্তি না থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আইনে নিষেধাজ্ঞা নয়। আজ কেন্দ্র সরকার তাদের পক্ষ তুলে ধরবে।

নয়া দিল্লি। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ২০২৫ সালের ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের উপর শুনানি হয়েছে। আদালত রিটকারীদের স্পষ্টভাবে বলেছে যে, কোনও আইন বাতিল করার অথবা তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য একটি বলিষ্ঠ ও স্পষ্ট ভিত্তি থাকতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট ঘটনা সামনে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত আদালত কোনও আইনের উপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে না।

এই মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ তখন করেছে, যখন রিটকারীরা আইনের উপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল। আদালতের এই মন্তব্যের পরে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ২০২৫ সালের ওয়াকফ আইনের উপর এখনই কোনও তাৎক্ষণিক সুবিধা পাওয়া যাবে না।

কপিল সিব্বল আইনটিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন

শুনানির সময় রিটকারীদের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিব্বল যুক্তি দিয়েছেন যে, ২০২৫ সালের ওয়াকফ আইন মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন করে। তিনি বলেছেন যে, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সম্পত্তি সরকারের দখলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে।

সিব্বল আদালতের কাছে আবেদন করেছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত রিটের উপর চূড়ান্ত রায় আসে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আইনের বিধানগুলো বন্ধ রাখা হোক। তিনি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ম মেনে না মেনে বাতিল করার, ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়াকফের স্বীকৃতি বাতিল করার এবং ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি: ওয়াকফ ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার আইনটির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে যে, ওয়াকফের স্বরূপ ধর্মনিরপেক্ষ এবং এই আইন কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছেন যে, ওয়াকফ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যই এই সংশোধন করা হয়েছে।

তিনি আদালতের কাছে অনুরোধ করেছেন যে, শুনানি তিনটি প্রধান বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হোক, যার উপর কেন্দ্রীয় সরকার তাদের জবাব দাখিল করেছে। যদিও রিটকারীরা এর বিরোধিতা করেছে এবং বলেছে যে, শুনানি সম্পূর্ণ আইনের সকল দিক নিয়ে হওয়া উচিত।

আদালতের প্রশ্ন: আগে থেকেই কি ওয়াকফ সম্পত্তির নিবন্ধন প্রয়োজন ছিল?

শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ রিটকারীদের কাছে অনেক প্রশ্ন করেছে। প্রধান প্রশ্ন ছিল যে, আগের আইনে কি ওয়াকফ সম্পত্তির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিল? এবং যদি করা না হয়, তাহলে কি সেই সম্পত্তির ওয়াকফ পরিচয় বাতিল হয়ে যায়?

এর জবাবে সিব্বল বলেছেন যে, আগের আইনে মুতওয়াল্লীর দায়িত্ব ছিল যে, তিনি ওয়াকফ সম্পত্তি নিবন্ধন করাবেন, কিন্তু যদি তা না করা হয়, তাহলে ওয়াকফের বৈধতা বাতিল হয় না। নতুন আইন বলে যে, যদি ওয়াকফ নিবন্ধিত না থাকে এবং ওয়াকফকারীর নাম-ঠিকানা না থাকে, তাহলে সেই সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে গণ্য হবে না। এটা মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।

তিনটি প্রধান বিষয় যার উপর কেন্দ্র বিতর্ক সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছে

  1. ওয়াকফ সম্পত্তি ডিনোটিফাই করার ক্ষমতা: আদালত কর্তৃক ওয়াকফ ঘোষিত সম্পত্তি বাতিল করার অধিকার কার কাছে থাকা উচিত?
  2. ওয়াকফ বোর্ড ও ওয়াকফ পরিষদের গঠন: কি অ-মুসলিম সদস্য এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে যুক্ত হতে পারবেন?
  3. রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক ওয়াকফ সম্পত্তি সরকারি জমি ঘোষণা করা: কি কালেক্টরের এই অধিকার থাকা উচিত?

কেন্দ্রীয় সরকার এই তিনটি বিন্দুর উপরই বিতর্ক কেন্দ্রীভূত করার কথা বলেছে, কিন্তু রিটকারীরা এর সাথে একমত নয়।

অন্যান্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের যুক্তি

কপিল সিব্বল ছাড়াও রিটকারীদের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি, সি.ইউ. সিং, রাজীব ধবন এবং হুজাইফা আহমেদীও তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। সকল আইনজীবীর প্রধান দাবি ছিল যে, যতক্ষণ পর্যন্ত রিটের উপর চূড়ান্ত রায় আসে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আইন প্রয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক।

সিংভি বলেছেন যে, এই ধরণের শুনানি টুকরো টুকরো করে হতে পারে না এবং সম্পূর্ণ আইনের পর্যালোচনা প্রয়োজন। তিনি এটাও বলেছেন যে, অ-নিবন্ধিত ওয়াকফ সম্পত্তিকে ওয়াকফ না মেনে অনেক ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্থানের পরিচয় বাতিল হয়ে যেতে পারে।

খাজুরাহোর উদাহরণ এবং প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ বিবাদ

শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাওয়াই একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি খাজুরাহো মন্দিরের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, সেগুলো প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ, কিন্তু আজও সেখানে পূজা হয়। এর মানে এই নয় যে, তা ধর্মীয় স্থান নয়। এ ব্যাপারে সিব্বল যুক্তি দিয়েছেন যে, নতুন আইন বলে যে, যদি কোনও সম্পত্তি সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ ঘোষণা করা হয়, তাহলে তার ওয়াকফ পরিচয় বাতিল হয়ে যায়। এর মানে হল যে, সেই সম্পত্তির উপর সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার শেষ হয়ে যাবে।

এআইএমআইএম এবং জমিয়তের রিট

এই মামলায় মোট পাঁচটি রিট দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে এআইএমআইএম-এর সভাপতি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এবং জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দ-এর রিট অন্তর্ভুক্ত। এই রিটগুলিতে ২০২৫ সালের ওয়াকফ আইনকে সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ (ধর্মীয় স্বাধীনতা) এবং ২৬ অনুচ্ছেদ (ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার অধিকার) লঙ্ঘন করে বলে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের আশ্বাস

গত শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকার আদালতকে আশ্বস্ত করেছিল যে, যতক্ষণ পর্যন্ত রিটের উপর চূড়ান্ত রায় আসে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ওয়াকফ পরিষদ এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্যদের নিয়োগ করা হবে না এবং অধিসূচিত ওয়াকফ সম্পত্তির প্রকৃতিও পরিবর্তন করা হবে না।

Leave a comment