পহেলগামে সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার ১৫ দিন পর ভারতীয় সেনা ‘অপারেশন সিন্দুর’ অভিযানের অধীনে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে নয়টি সন্ত্রাসবাদী শিবির সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই অভিযানে যেখানে পাকিস্তানকে হতবাক করে দিয়েছে, সেখানে বিশ্ব মঞ্চেও এর প্রভাব পড়েছে।
নয়াদিল্লি: জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার ১৫ দিন পর ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান অধিকৃত অঞ্চলে অবস্থিত ৯টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপকে ভারতীয় সেনা "অপারেশন সিন্দুর" নাম দিয়েছে, যা পাকিস্তানে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
ভারতীয় সেনার এই সিদ্ধান্তমূলক অভিযানের পর আন্তর্জাতিক মঞ্চেও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ উঠেছে। আমেরিকা, জাতিসংঘ, ব্রিটেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং রাশিয়াসহ বহু দেশ ভারতের এই পদক্ষেপকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এবং অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের সিদ্ধান্তমূলক আঘাত: অপারেশন সিন্দুরের কাহিনী
১৫ দিন আগে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সংঘটিত আত্মঘাতী হামলায় বহু ভারতীয় জওয়ান শহীদ হয়েছিলেন। এর পর সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং ভারতীয় সেনা পাকিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনার আওতায় অপারেশন সিন্দুর চালিয়েছে। সেনা রাতের অন্ধকারে অত্যাধুনিক ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং কমান্ডো ইউনিটের সাহায্যে পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি প্রধান সন্ত্রাসবাদী লঞ্চ প্যাড ধ্বংস করে দিয়েছে। এই ঘাঁটিগুলিতে জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈয়বা প্রভৃতি বিপজ্জনক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্যরা সক্রিয় ছিল।
ভারতীয় সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক: সন্ত্রাসবাদের উপর তীব্র আঘাত
সূত্র মতে, অপারেশন সিন্দুর অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। ভারতীয় বিশেষ বাহিনী এলওসি পার হয়ে পাকিস্তান অধিকৃত অঞ্চলে অবস্থিত নয়টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিকে লক্ষ্য করেছে। এই অভিযান সম্পূর্ণরূপে নির্ভুল এবং সীমিত ছিল, যার ফলে কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেনা কর্মকর্তারা এটিকে ন্যায়সঙ্গত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া: আশা করি দ্রুত উত্তেজনা কমে যাবে
পূর্ব আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের এই পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেছেন, আমরা ওভাল অফিসে প্রবেশ করার সাথে সাথেই এই ঘটনার কথা শুনেছি। এটি একটি দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনক ঘটনা। ভারত এবং পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সংঘর্ষে জড়িত। আমি আশা করি এই উত্তেজনা দ্রুত শেষ হবে এবং শান্তি স্থাপিত হবে।
জাতিসংঘের আহ্বান: সংযম অবলম্বন করুক ভারত-পাকিস্তান
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত এবং পাকিস্তানকে সামরিক সংযম অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, মহাসচিব নিয়ন্ত্রণ রেখায় বর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশ্ব এই মুহূর্তে আর একটি সামরিক সংঘর্ষের সাক্ষী হতে পারে না। আমরা উভয় দেশের কাছে সর্বোচ্চ সংযমের প্রত্যাশা করি।
আমেরিকান সাংসদ শ্রী থানেদার বলেছেন: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রয়োজন
ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান কংগ্রেস সদস্য শ্রী থানেদার বলেছেন যে, যুদ্ধ সমাধান নয়, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ প্রয়োজন। যখন নিরীহ নাগরিকরা সন্ত্রাসের শিকার হয়, তখন সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি দেওয়া অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আমেরিকাকে ভারতের মতো শান্তিপ্রিয় দেশের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা উচিত এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা বাড়ানো উচিত।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বিরোধী বক্তব্য
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ একদিকে ভারতীয় হামলার সত্যতা স্বীকার করে তাকে যুদ্ধের সূচনা বলে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে হুমকির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, পাকিস্তানের এই হামলার জবাব দেওয়ার পুরো অধিকার আছে। আমরা আমাদের জাতি এবং সেনার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। ভারতের উদ্দেশ্য কখনও সফল হতে দেব না।
পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক ডারের হুমকি
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক ডার ভারতের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ভারত আঞ্চলিক শান্তিকে বিপন্ন করছে এবং পহেলগাম হামলাকে অজুহাত করে নিজেকে নির্যাতিত হিসেবে দেখাচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, এই পরিস্থিতি উভয় পারমাণবিক দেশের মধ্যে গুরুতর সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে।
অপারেশন সিন্দুরের সাফল্যের পর ভারত আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ স্থাপন করেছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা এই দেশগুলিকে অভিযানের প্রয়োজনীয়তা, প্রক্রিয়া এবং ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করেছেন, যার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই অভিযান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ছিল, কোন দেশের বিরুদ্ধে নয়।