মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আগামী স্থানীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণ দ্রুত বদলাচ্ছে। শরদ পাওয়ারের সাম্প্রতিক বক্তব্য এই সমীকরণে আরও উত্তাপ যোগ করেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বাদে তিনি যে কোনও দলের সাথে মিত্রতা করতে প্রস্তুত।
মুম্বই: মহারাষ্ট্রের রাজনীতি আবার একবার ঘুরপাক খাচ্ছে। এবারের কারণ হল রাজ্যে শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে চলা স্থানীয় নির্বাচন, যার ফলে রাজ্যের রাজনৈতিক মাঠে নতুন সমীকরণ দ্রুত গড়ে উঠছে এবং ভেঙে পড়ছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, মহা-विकास আঘাড়ী (এমভিএ) এই নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে কি না, নাকি লোকসভা নির্বাচনের পরের মতো এটি ভেঙে পড়ার উপক্রমে রয়েছে?
শরদ পাওয়ারের কৌশল: বিজেপি বাদে যে কারও সাথে মিত্রতা সম্ভব
রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) প্রধান শরদ পাওয়ার সম্প্রতি একটি বড় রাজনৈতিক ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বাদে তিনি যে কোনও দলের সাথে মিত্রতা করতে প্রস্তুত। তার এই বক্তব্য মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটিকে এনসিপির নতুন সমীকরণের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন।
এই অবস্থায় যদি শরদ পাওয়ার অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি (অজিত গোষ্ঠী) বা অন্য কোনও আঞ্চলিক দলের সাথে হাত মেলান, তাহলে মহা-विकास আঘাড়ী (এমভিএ)-র রাজনৈতিক ঐক্যকে গুরুতর আঘাত লাগতে পারে। পাশাপাশি, যদি পাওয়ার এবং অজিত পাওয়ার একসাথে আসেন, তাহলে মহাযুতি (বিজেপি-শিন্ডে-অজিত মিত্রতা)-তেও ফাটল দেখা দিতে পারে।
কংগ্রেস এককভাবে স্থানীয় নির্বাচনে লড়াইয়ের মেজাজে
কংগ্রেস পার্টি এই স্থানীয় নির্বাচনে তার হারিয়ে যাওয়া ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কংগ্রেস এককভাবে নির্বাচনে লড়াই করতে পারে, বিশেষ করে সেসব এলাকায় যেখানে তার ঐতিহ্যগত ভোটার ব্যাংক রয়েছে। দলের মতে, লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া মিত্রতা থেকে তাদের যতটা লাভ হয়নি, ততটাই ক্ষতি হয়েছে কারণ আসন বণ্টন অসম ছিল।
যদি কংগ্রেস এককভাবে মাঠে নামে, তাহলে এটি এমভিএ-র জন্য একটি বড় ইঙ্গিত হবে যে, মিত্রতা এখন শুধু নামের ব্যাপার। এই পদক্ষেপ শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) এবং এনসিপি (শরদ গোষ্ঠী)-র জন্যও কৌশলগতভাবে অস্বস্তিকর হতে পারে।
উদ্ধব ঠাকুরে এবং মানসের ঘনিষ্ঠতা: ঠাকুরে পরিবারের সম্ভাব্য ঐক্য
স্থানীয় নির্বাচনের আগে আরও একটি বড় ঘটনা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে—উদ্ধব ঠাকুরে এবং রাজ ঠাকুরে অর্থাৎ শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-র সম্ভাব্য মিত্রতার সম্ভাবনা। দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুরে পরিবারের পুনর্মিলনের আলোচনা চলে আসছে। যদি এই মিত্রতা হয়, তাহলে মুম্বই এবং থানে-র মতো শহরাঞ্চলে এই মিত্রতা মারাঠি ভোটার ব্যাংককে শক্তিশালী অবস্থান দিতে পারে।
তবে, এই মিত্রতার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে মহা-विकास আঘাড়ীকে কারণ এমএনএস এখন পর্যন্ত এমভিএ-র অংশ ছিল না। এই পদক্ষেপ উদ্ধবের রাজনৈতিক স্বাধীনতার ইঙ্গিত দেবে এবং পাশাপাশি কংগ্রেস এবং এনসিপির সাথে মিত্রতাকে দুর্বল করবে।
ইন্ডিয়া মিত্রতা এবং এমভিএ-র দুর্বল হচ্ছে দখল
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া মিত্রতা মহারাষ্ট্রে ভালো ফলাফল করেছিল। কিন্তু তার পরের রাজনীতি দেখিয়েছে যে, এই মিত্রতা স্থায়িত্ব থেকে অনেক দূরে। आम आदमी पार्टी ইতোমধ্যেই আলাদা পথে চলে গেছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলগুলিরও নিজস্ব পথ রয়েছে। এমন অবস্থায় এমভিএ-র তিনটি দল—কংগ্রেস, এনসিপি (শরদ) এবং শিবসেনা (উদ্ধব)—এর মধ্যেও মতবিরোধ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখা দিচ্ছে। শরদ পাওয়ারের নমনীয়তা এবং কংগ্রেসের স্বাধীনতার ইচ্ছা এমভিএ-কে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মহাযুতি মিত্রতা অর্থাৎ বিজেপি, একনাথ শিন্ডের শিবসেনা এবং অজিত পাওয়ারের এনসিপি বর্তমানে স্থিতিশীল দেখাচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনে অসাধারণ সাফল্যের পর এই দলগুলির হারানোর জন্য অনেক কিছুই নেই। यही কারণে বর্তমানে তিনটি দল ঐক্যবদ্ধ এবং স্থানীয় নির্বাচনে একসাথে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।