দিল্লির জেলে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বন্দীদের হাজিরা

দিল্লির জেলে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বন্দীদের হাজিরা
সর্বশেষ আপডেট: 28-05-2025

দিল্লির জেলে বন্দীদের হাজিরা এখন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হবে। সরকার ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় করে ৮৪০টি সিস্টেম স্থাপন করবে। এর ফলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে, ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং পুলিশের উপর চাপ কমবে। শীঘ্রই এই পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে।

Delhi-NCR: দিল্লির জেলে বন্দীদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন হতে চলেছে। এখন বন্দীদের হাজিরা জেলের বাইরে নয়, বরং জেল প্রাঙ্গণেই ভিডিও কনফারেন্সিং (VC) এর মাধ্যমে হবে। এই নতুন সিস্টেমের ফলে কেবলমাত্র নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে তাই নয়, প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয়ও হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই পরিবর্তনের পুরো কাহিনী।

জেলে ৮৪০টি ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে

দিল্লির সকল জেলে মোট ৮৪০টি ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী জেলে এই সিস্টেম বিতরণ করা হবে। এই সম্পূর্ণ ব্যবস্থার উপর সরকার প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় করবে। এর জন্য শীঘ্রই টেন্ডার প্রকাশ করা হবে। এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই বন্দীদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কমে যাবে এবং হাজিরা জেলেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

বর্তমান ব্যবস্থা: তৃতীয় ব্যাটালিয়নের উপর নির্ভরশীল সবকিছু

বর্তমানে দিল্লির জেলে থেকে বন্দীদের আদালতে নিয়ে যাওয়া এবং ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দিল্লি পুলিশের তৃতীয় ব্যাটালিয়নের। এই ব্যাটালিয়ন বন্দীদের জেল ভ্যানে করে নিয়ে যায়, তাদের সাথে নিরাপত্তাকর্মীরাও থাকে। মামলার ধরণ অনুযায়ী নিরাপত্তা বাড়ানো হয়, কিন্তু তারপরেও অনেক সময় ঘটনা ঘটে।

কিছু উদাহরণ:

  • একবার এক বন্দী ভ্যানেই অন্য এক বন্দীকে হত্যা করেছিল।
  • আদালতের বাইরে হাজিরার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
  • অনেক সময় বন্দীরা ছলনা করে জেলে নিষিদ্ধ জিনিসপত্র প্রবেশ করিয়ে দেয়।
  • এই ঘটনাগুলি থেকে স্পষ্ট যে বর্তমান ব্যবস্থায় ঝুঁকি অনেক বেশি।

যানজটের সমস্যা এবং নিরাপত্তাকর্মীদের চ্যালেঞ্জ

দিল্লির মতো বড় শহরে প্রতিদিন অনেক জেল ভ্যান রাস্তায় চলাচল করে। যানজটে আটকে পড়ার ফলে বন্দীদের আদালতে সময়মতো হাজিরায় বিলম্ব হয়, যার ফলে আদালত এবং জেল উভয়ের কাজই প্রভাবিত হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মীদের জন্যও চাপ বেড়ে যায়।

প্রতি মাসে ১৫ কোটি টাকা সাশ্রয়

বন্দীদের হাজিরার জন্য জেল প্রশাসন দিল্লি পুলিশকে প্রতি মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকা দেয়। ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় করে যদি এই ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম তৈরি করা যায়, তাহলে প্রতি মাসের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ একবার বিনিয়োগ করে বছরে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করা যাবে।

বৃদ্ধি পাবে নিরাপত্তা, কমবে ঝুঁকি

জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই নতুন ব্যবস্থার ফলে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় বন্দীদের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা করা যাবে। এখন কেবলমাত্র অত্যন্ত জরুরি ক্ষেত্রে বন্দীদের আদালতে হাজির করার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে, অন্যথায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করা হবে। এর ফলে জেল প্রশাসন এবং পুলিশ উভয়ের কাজ সহজ হবে।

ইউপিতেও কার্যকর হতে পারে এই মডেল

দিল্লির জেলে এই মডেল যদি সফল হয়, তাহলে এটি অন্যান্য রাজ্যে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের মতো বৃহৎ রাজ্যেও কার্যকর করা যাবে। এর ফলে সমগ্র দেশে জেল ব্যবস্থায় উন্নতি সাধিত হতে পারে এবং বন্দীদের নিরাপত্তা আরও উন্নত হতে পারে।

সরকারের উদ্দেশ্য: ব্যয় কম, নিরাপত্তা বেশি

দিল্লি সরকারের এই পদক্ষেপ জেলে সংস্কারের একটি বৃহৎ পরিবর্তনের অংশ। এর ফলে কেবলমাত্র সরকারি ব্যয় কমবে তাই নয়, আদালত এবং জেলের কার্যক্রমেও ত্বরাণ্বিত হবে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হাজিরার ফলে আদালতে ভিড় কমবে, যানজটের চাপ কমবে এবং পুলিশ বাহিনীর সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

Leave a comment