বিচারপতি যশোবন্ত বর্মা-র বিরুদ্ধে কেন্দ্র সরকার মহাভিযোগ প্রস্তাব আনার কথা ভাবছে। জ্বলে যাওয়া নগদ অর্থের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটি বর্মা-কে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
বিচারপতি যশোবন্ত বর্মা: বিচারপতি যশোবন্ত বর্মা-র নাম এখন আলোচনায়, এবং তার কারণ হল কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মহাভিযোগের প্রস্তুতি। দিল্লি হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি যশোবন্ত বর্মা-র সরকারি বাসস্থান থেকে প্রচুর পরিমাণে জ্বলে যাওয়া নগদ অর্থ পাওয়া যাওয়ার পর থেকেই এই ঘটনা শিরোনামে আছে। এখন কেন্দ্র সরকার বর্ষার অধিবেশনে তাঁর বিরুদ্ধে মহাভিযোগ প্রস্তাব আনার দিকে গুরুত্বের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।
সম্পূর্ণ ঘটনা কি?
বিচারপতি যশোবন্ত বর্মা-র দিল্লিস্থিত সরকারি বাসস্থানের বাহিরের ঘর থেকে প্রচুর পরিমাণে জ্বলে যাওয়া নগদ অর্থ পাওয়া যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিচারপতি বর্মা-র বিরুদ্ধে মহাভিযোগের সুপারিশ করেছিলেন।
যদিও এই প্রতিবেদন এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনা হয়নি, কিন্তু এর পর বর্মা-কে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে তাঁর মূল পদস্থাপন স্থল ইলাহাবাদ হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
বর্মা ইস্তফা দিতে অস্বীকার করেছেন
তদন্তের পর তৎকালীন CJI সঞ্জীব খান্না বর্মা-কে ইস্তফা দিতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি স্পষ্টভাবে তা অস্বীকার করেছেন। বর্মা-র দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি দাবি করেছেন যে, তাঁর বাসস্থান থেকে যে নগদ অর্থ উদ্ধার হয়েছে, তার সাথে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। বর্মা-র যুক্তি, তাঁর বাড়ির বাহিরের ঘরে আগুন লেগে যাওয়ার পর এই নগদ অর্থ পাওয়া গেছে, এবং তাঁকে এই ঘটনায় ভুলভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।
সরকারের প্রস্তুতি - মহাভিযোগ প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা
সরকারি সূত্রের মতে, কেন্দ্র সরকার জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শুরু হওয়া বর্ষার অধিবেশনে বিচারপতি বর্মা-র বিরুদ্ধে মহাভিযোগ প্রস্তাব আনার দিকে কাজ করছে। যদি বর্মা ইস্তফা না দেন, তাহলে মহাভিযোগ আনা সরকারের অগ্রাধিকার হবে।
মহাভিযোগ আনার জন্য সংসদে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৪(৪)-এর অধীনে, সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের কোনও বিচারপতিকে অপসারণ করার জন্য মহাভিযোগ প্রস্তাব আনা প্রয়োজন। এর জন্য লোকসভায় অন্তত ১০০ জন সাংসদের এবং রাজ্যসভায় ৫০ জন সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন।
যদি প্রস্তাব উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়, তাহলে সংসদ লোকসভা স্পিকার বা রাজ্যসভায় সভাপতির কাছে অনুরোধ করে যে, তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের আবেদন করেন। এই কমিটি সুপ্রিম কোর্টের একজন বর্তমান বিচারপতি, হাইকোর্টের কোনও প্রধান বিচারপতি এবং একজন সম্মানিত আইনবিদ (jurist) দ্বারা গঠিত হয়।
কেন্দ্র সরকারের কৌশল কি?
সূত্রের বরাতে বলা হচ্ছে, কেন্দ্র সরকার চায় যে, এই মহাভিযোগ প্রস্তাব বিরোধী দলগুলির সম্মতিতে আনা হোক, যাতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ থাকে। এই ঘটনা রাজনৈতিকভাবেও বেশ সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে এবং সরকারী ও বিরোধী উভয় দলই এ বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, মহাভিযোগ প্রস্তাবের খসড়ায় সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে নগদ অর্থ উদ্ধারের সম্পূর্ণ ঘটনার উল্লেখ থাকবে।
বিরোধীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
সরকার বিরোধীদেরও বিশ্বাসে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়, কারণ মহাভিযোগের মতো বড় পদক্ষেপের জন্য সংসদে যথেষ্ট সমর্থন প্রয়োজন। একজন সরকারী কর্মকর্তা বলেছেন, "ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ, একে উপেক্ষা করা যাবে না। আমরা শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।"