বারাণসীতে গ্রেফতার: আইএসআই এজেন্টের হানিট্র্যাপে ৮০০ পাকিস্তানি সংযোগ

বারাণসীতে গ্রেফতার: আইএসআই এজেন্টের হানিট্র্যাপে ৮০০ পাকিস্তানি সংযোগ
সর্বশেষ আপডেট: 24-05-2025

বারাণসীতে গ্রেফতার তুফাইল, পাকিস্তানের নফিসার হানিট্র্যাপে পড়ে সংবেদনশীল স্থানের তথ্য পাঠাচ্ছিল। এটিএসের তদন্তে বড়ো তথ্য উঠে এসেছে, ৮০০ পাকিস্তানি নম্বরের সাথে ছিল সংযোগ।

UP: দেশের নিরাপত্তা নিয়ে এক বড়ো তথ্য উঠে এসেছে। উত্তরপ্রদেশ এটিএস বারাণসী থেকে গ্রেফতার আইএসআই এজেন্ট তুফাইলের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। তুফাইল নিজেকে "গজওয়া-এ-হিন্দ"-এর জন্য লড়াই করা সৈনিক বলে দাবি করেছে এবং স্বীকার করেছে যে সে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হানিট্র্যাপে পড়েছিল। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে সতর্ক করে তুলছে না, বরং দেশের নিরাপত্তার জন্যও গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।

'নফিসার' জালে আটকা তুফাইল

তুফাইলের নাম প্রকাশের পর তার পাকিস্তান সংযোগের বিষয়টি ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। জানা গেছে, সে পাকিস্তানের ফয়েসালাবাদে বসবাসকারী এক নারীর, 'নফিসা'র, সাথে যোগাযোগে ছিল। নফিসা, যিনি আইএসআই-এর পক্ষে কাজ করছিলেন, তুফাইলকে তার মোহজালে আটকে ফেলেছিলেন। নফিসা কখনো তুফাইলকে তার আসল পরিচয় জানাননি, তবে তাকে বলতেন যে সে যেখানেই যাক না কেন, সেখান থেকে ছবি পাঠাবে। নফিসা তুফাইলকে বলত, "তোমার ছবি না দেখলে আমার দিন শেষ হয় না।"

এই নয়, নফিসার কথামতো তুফাইল তার ফোনের জিপিএস লোকেশনও চালু রেখেছিল, যাতে তার পাঠানো প্রতিটি ছবির সাথে স্থানের সঠিক তথ্যও পাকিস্তানে পৌঁছাতে পারে। তুফাইল বারাণসী, দিল্লি এবং দেশের অনেক সংবেদনশীল এলাকার ছবি এবং ভিডিও নফিসাকে পাঠিয়েছিল।

কট্টরপন্থার পথে তুফাইলের কাহিনী

তুফাইলের কাহিনী এখানেই শেষ হয় না। পাঁচ বছর আগে একটি মজলিসের সময় তুফাইলের যোগাযোগ হয় পাকিস্তানের কট্টরপন্থী সংগঠন 'তেহরিক-এ-লাব্বাইক'-এর মাওলানা শাহ রিজভির সাথে। এর পর থেকে তুফাইল ইউপির কান্নৌজ, হায়দ্রাবাদ এবং পাঞ্জাবে মজলিস এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ধীরে ধীরে কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

তদন্তে উঠে এসেছে যে তুফাইল ১৯টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ পরিচালনা করছিল, যার মধ্যে বেশিরভাগ সদস্য বারাণসী এবং আজমগড়ের ছিল। এই গ্রুপগুলিতে সে বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো ভিডিও শেয়ার করত। তুফাইল যুবকদের 'গজওয়া-এ-হিন্দ'-এর চিন্তাধারার সাথে যুক্ত করার পুরোপুরি চেষ্টা করেছিল। তার মোবাইল থেকে ৮০০-এর বেশি পাকিস্তানি মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। এটিএস অনেক ডিলিট করা চ্যাটও উদ্ধার করেছে এবং তাদের তদন্ত করছে।

হারুনের তথ্য: পাকিস্তান হাইকমিশন পর্যন্ত পৌঁছাতো টাকা

এই ঘটনায় দিল্লি থেকে গ্রেফতার হারুনের কাছ থেকেও বড়ো তথ্য উঠে এসেছে। হারুন পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত কর্মকর্তা মুজাম্মিল হুসেনের জন্য ভুয়া ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করত। মুজাম্মিল এই একাউন্টগুলির মাধ্যমে ভিসা তৈরির নামে টাকা আদায় করত এবং তারপর এই টাকা হারুনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠাত। তদন্তে সন্দেহ করা হচ্ছে যে এই টাকা ভারতে আইএসআই নেটওয়ার্ককে অর্থায়ন করার জন্য পাঠানো হত।

এখন এটিএস হারুনের মোবাইল ডেটা, ব্যাংক লেনদেন এবং গত তিন বছরের রেকর্ডগুলির গভীরভাবে তদন্ত করছে। এটিএস সন্দেহ করছে যে এই অর্থ ভারতে গুপ্তচরবৃত্তি নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল।

দেশের নিরাপত্তার উপর বড়ো হুমকি

এই পুরো ঘটনাটি দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির জন্য একটি বড়ো সতর্কবার্তা। তুফাইলের মতো লোকেরা সোশ্যাল মিডিয়া এবং হানিট্র্যাপের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তায় ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের আইএসআই সংস্থা ভারতীয় যুবকদের হানিট্র্যাপে ফাঁসিয়ে তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করছে। তাই দেশের যুবকদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অচেনা ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। কোনও সন্দেহজনক লিঙ্ক, কল বা মেসেজের প্রতি সাড়া দেওয়ার আগে দুবার ভাবুন, কারণ আপনার একটা ভুল দেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

Leave a comment