দিল্লি পুলিশ ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ নামে একটা প্রতারণামূলক চক্রের পর্দাফাঁস করেছে। এই চক্রের চারজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা নিজেদের কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান ব্যুরো (সিবিআই) কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৪৪.৫০ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল।
নয়া দিল্লি: কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান ব্যুরো (সিবিআই) কর্মকর্তা সেজে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’এর মাধ্যমে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৪৪.৫০ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে দিল্লি পুলিশ চারজন সাইবার জালিয়াতিকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার খবর দিয়েছে। ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ এক ধরণের সাইবার অপরাধ, যেখানে প্রতারকরা নিজেদের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে ভুয়ো অভিযোগে পীড়িতদের ভয় দেখিয়ে টাকা নেয় বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে বাধ্য করে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ডিজিটাল ডিভাইস ও জাল কাগজপত্র উদ্ধার করেছে।
কীভাবে ধরা পড়ল?
ময়ূর বিহার ফেজ-১-এর বাসিন্দা বীরেন্দ্র কুমার ইন্দোরা ২৯ জানুয়ারি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, এক অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে ফোন করে নিজেকে সিবিআই কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে তাকে অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার ভুয়ো অভিযোগ করে। চক্রের সদস্যরা গ্রেফতারির হুমকি দিয়ে ইন্দোরার কাছ থেকে ৪৪.৫০ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার করিয়ে নিয়েছিল।
তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পারে যে ৩৮ লক্ষ টাকা জয়পুরের বাসিন্দা দীনেশ সিংহাড়িয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছিল। এরপর পুলিশের একটি দল ৫ মার্চ জয়পুরে অভিযান চালিয়ে দীনেশকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে দীনেশ জানায় যে এই প্রতারণায় তার ছাড়াও আরও পাঁচজন জড়িত ছিল।
অন্যান্য অভিযুক্তরাও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে
দীনেশের বক্তব্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রশান্ত বর্মা নামে এক ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করে, যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজে সাহায্য করেছিল। এছাড়াও, তদন্তে প্রকাশ চৌধুরী ও মহেশ নেহরার নামও বেরিয়ে আসে। পুলিশ রাজস্থানের কুচামান শহরে অভিযান চালিয়ে গজেন্দ্র কুমারকেও গ্রেফতার করে, যে দীনেশকে ব্যাংক থেকে ৩৮ লক্ষ টাকা তুলতে সাহায্য করেছিল।
ডিসিপি অভিষেক ধানিয়া জানিয়েছেন যে মহেশ নেহরা এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিল, যার আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল। প্রকাশ চৌধুরী সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতারণার টাকা উত্তোলনে নেহরাকে সাহায্য করত। অভিযুক্তদের প্রধান ভূমিকা ছিল চেক ও এটিএম-এর মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা তুলে তা তাদের বিদেশী অপারেটরদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
অভিযুক্তদের প্রোফাইল
দীনেশ সিংহাড়িয়া (২৬): জয়পুরে ডিজে অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং দিনমজুর।
প্রশান্ত বর্মা (২৪): ডিজে হিসেবে কাজ করত।
প্রকাশ চৌধুরী (২১): কলেজ ছেড়ে দিয়েছিল, সাইবার অপরাধীদের সাথে জড়িত হয়ে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ে।
গজেন্দ্র কুমার: বিএসসি স্নাতক এবং সরকারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
মোবাইল ফোন এবং প্রমাণ উদ্ধার
পুলিশ চক্রের চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে, যা এই প্রতারণাটি সংঘটনে ব্যবহার করা হয়েছিল। পুলিশ সন্দেহ করছে যে এই চক্রের সদস্যরা এর আগেও একই ধরণের অনেক সাইবার প্রতারণায় জড়িত ছিল। পুলিশ এখন এই চক্রের অন্যান্য সদস্য এবং এর আন্তর্জাতিক যোগাযোগের তদন্ত করছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই চক্রটি সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে মানুষকে মানসিক চাপে ফেলে তাদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিত।