পাকিস্তান আমেরিকার ট্যারিফ এড়াতে বাণিজ্য আলোচনায় ব্যস্ত, অন্যদিকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি জুলাইয়ের আগেই সম্ভব। ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের সাথে চুক্তি অত্যন্ত কাছে।
আমেরিকা: পাকিস্তান বর্তমানে আমেরিকার সাথে বাণিজ্য আলোচনার জন্য তৎপর। এর কারণ হলো সম্প্রতি আমেরিকা কর্তৃক প্রস্তাবিত ২৯% ট্যারিফ, যা পাকিস্তানের ৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্তকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত হয়েছে। এই ট্যারিফ ৯ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হতে পারে, কিন্তু বর্তমানে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এই ট্যারিফের ভয়ে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা শীঘ্রই আমেরিকা সফর করবে, যাতে বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ঘোষণা
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন যে পাকিস্তানের সাথে আলোচনার পাশাপাশি আমেরিকা ভারতের সাথেও একটি বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন যে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে চুক্তি খুব শীঘ্রই হতে পারে। ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে, যদি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে আমেরিকা এই দেশগুলির সাথে কোনও বাণিজ্য করবে না।
পাকিস্তানের ট্যারিফ এড়ানোর চেষ্টা
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার ট্যারিফ এড়াতে পাকিস্তান বাণিজ্য চুক্তি করতে চায়। আমেরিকা সম্প্রতি অনেক দেশের উপর নতুন বাণিজ্য শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছে, এবং পাকিস্তানের ৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এর একটি বড় কারণ। তাই পাকিস্তান আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকার সাথে এই ট্যারিফ এড়ানোর চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বলেছেন যে দুই দেশের মধ্যে কিছু বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং তারা একে অপরের উদ্বেগ বুঝতে পারছে। ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা ভারতের সাথে একটি খুব ভাল চুক্তি করার খুব কাছে।”
ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য চুক্তি
ভারতের জন্য এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আমেরিকা সফর করেছিলেন, যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা এগিয়ে নেওয়া যায়। ভারত আশা করছে জুলাইয়ের শুরুতে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে স্বাক্ষর হবে। আমেরিকা ভারতের উপর ২৬% ট্যারিফ আরোপের পরিকল্পনা করেছে, যা ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হতে পারে। ফলে ভারতও নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমেরিকার সাথে আলোচনায় ব্যস্ত।
ভারত চায় আমেরিকান কোম্পানিগুলিকে ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সুযোগ পেতে হবে, কিন্তু একই সাথে নিজের কৃষি ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রগুলির সুরক্ষাও করতে চায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের সরকারি চুক্তির জন্য আমেরিকাকে দরপত্র দাখিল করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হতে পারে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ও আমেরিকার সতর্কতা
ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছিল, সেখানে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং কামান ব্যবহার করা হয়েছিল, যা দুই দেশের মধ্যে দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় লড়াই বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে আমেরিকা এই দেশগুলির সাথে কোনও বাণিজ্য করবে না।
আমেরিকা-পাকিস্তান বাণিজ্য আলোচনার তাৎপর্য
পাকিস্তানের জন্য আমেরিকার ট্যারিফ এড়ানো অত্যন্ত জরুরি, কারণ যদি ২৯% ট্যারিফ কার্যকর হয়, তাহলে পাকিস্তানের অর্থনীতিতে প্রচণ্ড চাপ পড়বে। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং আইএমএফ-এর মতো সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে নিজের চাহিদা পূরণ করছে। এই অবস্থায় আমেরিকার সাথে বাণিজ্য চুক্তি পাকিস্তানের জন্য বড় স্বস্তি হতে পারে।
