প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিখ্যাত উল্লু অ্যাপ আবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এবার ঘটনাটি তাদের রিয়ালিটি শো ‘হাউস অ্যারেস্ট’ -এর সাথে জড়িত, যা বিগ বস খ্যাত এজাজ খান উপস্থাপনা করছেন। একটি ভাইরাল ক্লিপে এজাজ খানকে প্রতিযোগীদের ক্যামেরার সামনে বিভিন্ন যৌন মুদ্রা করতে বলতে দেখা গেছে।
Ullu App: ভারতে ডিজিটাল বিনোদন যখন গতি পেয়েছে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি মানুষের মনে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। একদিকে নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম এবং ডিজনি+হটস্টারের মতো প্ল্যাটফর্ম পারিবারিক ও যুবকদের উপযোগী কন্টেন্ট উপস্থাপন করছে, অন্যদিকে একটি এমন প্ল্যাটফর্মও আছে যা সম্পূর্ণরূপে প্রাপ্তবয়স্ক (এডাল্ট) কন্টেন্টের উপর নির্ভর করে নিজের পরিচয় তৈরি করেছে—উল্লু অ্যাপ।
সম্প্রতি উল্লু অ্যাপের রিয়ালিটি শো ‘হাউস অ্যারেস্ট’ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত এর আলোচনা হচ্ছে। শো-এর একটি দৃশ্যে উপস্থাপক এজাজ খান প্রতিযোগীদের ক্যামেরায় বিভিন্ন যৌন ভঙ্গিমা চেষ্টা করতে বলার ঘটনা মানুষের অপছন্দ হয়েছে। এই বিতর্কের পর অনেক নেতা এটিকে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন এবং অবশেষে কোম্পানি শোটি তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এই অ্যাপের পেছনে কে আছে? কে সেই ব্যক্তি যিনি এই অশ্লীল কন্টেন্ট অ্যাপ তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন?
বিভু অগ্রওয়াল: উল্লু অ্যাপের মাস্টারমাইন্ড
বিভু অগ্রওয়াল উল্লু অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO)। তিনি ২০১৮ সালে এই অ্যাপটি চালু করেছিলেন। বিভু ব্যবসায়িক জগতের পরিচিত নাম এবং প্রায় তিন দশক ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় আছেন। তিনি ১৯৯৫ সালে JPko India Pvt. Ltd. নামক কোম্পানি থেকে তার উদ্যোগী যাত্রা শুরু করেছিলেন।
পরে, ওটিটির ক্রমবর্ধমান চাহিদা দেখে তিনি একটি এমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন যা মূলধারার থেকে আলাদাভাবে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক কন্টেন্টের উপর ফোকাস করে। ২০২২ সালে তিনি ‘অতরঙ্গী টিভি’ নামে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেছেন, যেখানে পারিবারিক ও সাধারণ দর্শকদের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করা হয়।
স্ত্রীও আছেন এই ব্যবসায়ের অংশীদার
বিভু অগ্রওয়ালের স্ত্রীও উল্লু অ্যাপের পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। দুজনে মিলে এই প্রাপ্তবয়স্ক কন্টেন্ট অ্যাপ পরিচালনা করেন, এবং এর বিপণন ও কন্টেন্ট কৌশলীতেও অংশ নেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ছবি ও সাক্ষাৎকার এই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে যে এই ব্যবসাটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ দলের চিন্তাধারার ফল।
কবিতা ভাবী থেকে রেড লাইট পর্যন্ত: কীভাবে জনপ্রিয়তা বেড়েছে
যখন উল্লু অ্যাপ চালু হয়েছিল, তখন এর প্রথম শো ছিল ‘হালালা’, যা দর্শকদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পায়নি। কিন্তু যখন প্ল্যাটফর্মটি সম্পূর্ণরূপে প্রাপ্তবয়স্ক বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে ওয়েব সিরিজ তৈরি শুরু করে, তখন এর দর্শক সংখ্যায় ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় এই অ্যাপের ‘কবিতা ভাবী’ শো অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে। এরপর ‘পেইন্টার বাবু’, ‘কস্তুরী’, ‘বদন’, ‘রেড লাইট’ এবং ‘রাৎ বাকি হে’ মতো শো এটিকে একটি নির্দিষ্ট দর্শক শ্রেণীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে।
এই শোগুলির বিশেষত্ব ছিল যেগুলি সীমিত বাজেটে তৈরি হতো কিন্তু দর্শকদের প্রচুর ‘বিনোদন’ দেওয়ার দাবি করত। এটাই কারণ যে উল্লু অ্যাপ অল্প সময়ের মধ্যেই একটি বিশাল দর্শক শ্রেণী তৈরি করে নিয়েছে।
৯৩.১ কোটি টাকা আয়: রাজস্বে অসাধারণ বৃদ্ধি
২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মতে, উল্লু অ্যাপ ২০২২ সালের অর্থবছরে ৪৬.৮ কোটি টাকা আয় করেছিল। এর তুলনায় ২০২৩ সালের অর্থবছরে এর রাজস্ব ৯৩.১ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি। এভাবে এটা স্পষ্ট যে বিতর্কিত কন্টেন্ট সত্ত্বেও অ্যাপটি শুধুমাত্র দর্শকদের আগ্রহ আকর্ষণই করেনি, বরং অসাধারণ আয়ও করেছে। এটাও অনুমান করা হচ্ছে যে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে এই অ্যাপ ১০০ কোটি টাকার বেশি বার্ষিক রাজস্ব অতিক্রম করতে পারে।
বিতর্কের সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক
যদিও উল্লু অ্যাপের জনপ্রিয়তা যত দ্রুত বেড়েছে, বিতর্কও ততই বেড়েছে। ‘হাউস অ্যারেস্ট’ শোর বিতর্কের পর এটি ভারতে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে। অনেক সামাজিক সংগঠন ও নেতা এটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। এর আগেও বহুবার এর শোগুলি অশ্লীলতা ও নারীর মর্যাদাহানির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু প্ল্যাটফর্মের যুক্তি হলো তারা দর্শকদের পছন্দের অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করে এবং কাউকে অ্যাপ ডাউনলোড করতে বাধ্য করে না।