রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন, যেখানে তিনি সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। পুতিন ভারতে অনুষ্ঠিতব্য আগামী বার্ষিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
ভারত-রুশ: ভারত-রুশের শক্তিশালী হয়ে উঠা কৌশলগত সম্পর্ক আরও একটি নতুন দিক পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং আগামী বার্ষিক উচ্চ পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে আসার বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এই কূটনৈতিক ঘটনাকে বিশ্বব্যাপী মঞ্চে ভারত-রুশ সম্পর্কের স্থায়িত্ব ও পরিপক্কতার লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সোমবার উভয় নেতার মধ্যে টেলিফোনে কথোপকথন হয়েছে, যেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনার বিশেষ কেন্দ্রবিন্দু ছিল কাশ্মীরের পাহালগামে সম্প্রতি সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলা, যার তীব্র নিন্দা করেছে রাশিয়া। পুতিন এই হামলাকে জঘন্য বলে অভিহিত করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পুতিনের স্পষ্ট বার্তা
রাষ্ট্রপতি পুতিন কথোপকথনের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বলেছেন যে সন্ত্রাসবাদ যেকোনো রূপে অগ্রহণযোগ্য এবং এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সমর্থকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। এই বক্তব্যকে ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন ভারত দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পারাপার সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরে আসছে।
বার্ষিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক: কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাবে
ভারত ও রুশিয়ার মধ্যে প্রতি বছর একটি বার্ষিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করা হয়, যা উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার প্রধান মাধ্যম। এ বছরের বৈঠকটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। ভারত এই বৈঠকের আয়োজনের জন্য পুতিনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যা তিনি কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করেছেন।
এই ভ্রমণ ভারত-রুশ সম্পর্ককে আরও গভীরতা প্রদান করবে এবং উভয় দেশকে প্রতিরক্ষা, শক্তি, মহাকাশ, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ দেবে। ক্রেমলিন কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক বহিরাগত চাপে অটুট এবং এর কৌশলগত প্রকৃতি কালক্রমে আরও শক্তিশালী হয়েছে।
এই বিবৃতির ইঙ্গিত স্পষ্টতই পশ্চিমা দেশ এবং নাটোর নীতির দিকে, যারা রাশিয়ার উপর একাধিক স্তরে চাপ সৃষ্টি করছে। ভারত, তার বহুমুখী বিদেশ নীতি অনুসরণ করে, আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলির সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি রাশিয়ার সাথে তার ঐতিহ্যগত সম্পর্ক সম্পূর্ণ শক্তির সাথে বজায় রাখছে। এই ভারসাম্য ভারতের বিশ্বব্যাপী ভূমিকাকে প্রতিফলিত করে।
‘বিজয় দিবস’ এর শুভেচ্ছা
প্রধানমন্ত্রী মোদী টেলিফোনে কথোপকথনের সময় রাশিয়াকে ‘বিজয় দিবস’-এর ৮০তম বার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই দিনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজি জার্মানির উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের প্রতীক এবং রাশিয়ায় জাতীয় গৌরবের বিষয়। এই উপলক্ষ্যে মোদীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপন একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্মানেরও ইঙ্গিত, যা উভয় দেশের মধ্যে আবেগগত ও ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে।
ভারত-রুশ সম্পর্কের এই নতুন শক্তি এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ দেখা দিচ্ছে। আমেরিকা-চীন উত্তেজনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের ভূমিকা একটি ভারসাম্যকারী শক্তি হিসেবে উঠে আসছে। ভারত, যা বিশ্বের দক্ষিণের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি হিসেবে উঠে এসেছে, রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক এই ভারসাম্যের মধ্যেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়াও ভারতকে একটি নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার হিসেবে দেখে, যা কেবলমাত্র প্রতিরক্ষা ও শক্তি ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণেও সহযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে।