সীতামঢ়ীর সোনবর্ষা থানায় এসএসবি নেপাল থেকে চোরাচালান করা ৩০ কিলো গাঁজা জব্দ করেছে। তাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে জিতেন্দ্র মাহাতো নামে একজন চোরাকারবারী, আর পুলিশ তাকে ন্যায়বিচারের জন্য জেলে পাঠিয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত চলছে।
সীতামঢ়ী: বিহারের সীতামঢ়ী জেলায় নেপাল থেকে গাঁজার চোরাচালানের ঘটনা দ্রুত বেড়ে উঠছে। শরাব নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে বিহারে গাঁজার চোরাচালান নতুন মাত্রা পেয়েছে। চোরাচালানকারীরা এখন নেপাল থেকে গাঁজা এনে বিহারে বিক্রি করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি সীতামঢ়ীর সোনবর্ষা থানায় এসএসবি (স্নিগ্ধ সীমা সুরক্ষা বাহিনী) এবং পুলিশ এক বড় অভিযান চালিয়ে ৩০ কিলো গাঁজা জব্দ করেছে। এই সময় একজন চোরাকারবারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
নেপাল থেকে গাঁজার চোরাচালানের বর্ধিত ঝুঁকি
নেপালে ব্যাপকভাবে গাঁজা চাষ হয়, এবং সেখান থেকে ভারতীয় চোরাকারবারীরা এটি এনে বিহারে বিক্রি করার চেষ্টা করে। বিহারে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে মদের চোরাচালান কমেছে, কিন্তু গাঁজার চোরাচালান বেড়েছে। নেপাল থেকে আসা চোরাকারবারীরা এখন বিহারের সীমান্তে গাঁজা এনে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
সীতামঢ়ী জেলার নেপালের সাথে সংলগ্নতা এই চোরাচালানকে আরও উৎসাহিত করছে। চোরাকারবারীরা এমন পথ ব্যবহার করে যেখানে এসএসবির মোতায়েন কম বা নেই, যার ফলে তারা সহজেই গাঁজা এনে বিহারে প্রবেশ করে। এই বর্ধিত চোরাচালান পুলিশ এবং এসএসবি-র জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
এসএসবি এবং পুলিশের কঠোর অভিযান
এসএসবির ৫১তম ব্যাটালিয়ন ৩০ কিলো গাঁজা জব্দ করার পর একজন চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছে। এই অভিযান গোপন তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। এসএসবির কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর বাবু সিংহের নেতৃত্বে আরক্ষী মনিষ কুমার এবং বিপুল কুমার সোনবর্ষা সীমান্তের পিলার নম্বর-৩২৩/১৩-এর কাছে একটি গাড়ি থেকে ৩০ কিলো গাঁজা উদ্ধার করে।
চোরাকারবারীর পরিচয় জিতেন্দ্র মাহাতো হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, যিনি সোনবর্ষা গ্রামের লাল বাহাদুর মাহাতোর ছেলে। চোরাকারবারীকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা যায় যে সে নেপাল থেকে গাঁজা নিয়ে ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল। এসএসবি গাঁজা এবং গাড়ি জব্দ করে চোরাকারবারীকে ন্যায়বিচারের জন্য জেলে পাঠিয়েছে।
বিহারে গাঁজার চোরাচালানের বর্ধিত ঘটনা
এটি প্রথমবার নয় যখন এসএসবি এবং পুলিশ গাঁজার চোরাচালানের মামলায় সাফল্য পেয়েছে। গত কয়েক মাসে অনেক এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এসএসবি এবং পুলিশ বেশি পরিমাণে গাঁজা জব্দ করেছে। ১৯ এপ্রিল এসএসবি নেপাল থেকে ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করার সময় একজন চোরাকারবারীকে ১১ কিলো গাঁজার সাথে ধরেছে। চোরাকারবারী নেপালের সর্লাহী জেলার বাসিন্দা ছিল এবং সে ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করছিল। এর আগে ১৪ এপ্রিল এসএসবি এবং পুলিশ সোনবর্ষা বাজারে অভিযান চালিয়ে মাদক এবং গাঁজার বেশি পরিমাণ জব্দ করেছিল।
গাঁজার চোরাকারবারীদের জন্য পুলিশ এবং এসএসবি-র কঠোর সতর্কবার্তা
নেপাল থেকে গাঁজা চোরাচালানকারীরা ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করার জন্য অনেক পথ ব্যবহার করে। এই পথগুলি এসএসবির মোতায়েনের বাইরে থাকে, যার ফলে চোরাকারবারীরা সহজেই ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করে। এরপর চোরাকারবারীরা গাঁজা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে। এসএসবি এবং পুলিশের এ পর্যন্ত অভিযানে দুই থেকে তিন কুইন্টাল গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। ৫০ কিলো, ৩০ কিলো এবং ২০ কিলো গাঁজা জব্দ হওয়া এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে।
গাঁজার চোরাচালান বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত
বিহারে বর্ধিত গাঁজার চোরাচালানের সমস্যা পুলিশ এবং এসএসবি-র জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। যদিও পুলিশ এবং এসএসবি ক্রমাগত চোরাকারবারীদের ধরছে, তবে গাঁজার চোরাচালান বন্ধ করার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন। এর জন্য বিহার সরকারকে আরও প্রচেষ্টা করতে হবে যাতে এই ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
গাঁজার চোরাচালানের ঘটনা বন্ধ করার জন্য পুলিশ এবং এসএসবিকে আরও বেশি সম্পদ এবং সহায়তা প্রদান করা উচিত। এছাড়াও, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে একসাথে চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করার প্রয়োজন। শিক্ষা, সচেতনতা এবং কঠোর আইনের মাধ্যমে গাঁজার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বিহারে গাঁজার চোরাচালানের নেটওয়ার্ক ধীরে ধীরে এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। যদি সরকার এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করে এবং চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখে, তবে এটি মাদকের সমস্যা রোধে সহায়ক হতে পারে। বিহারে চোরাচালানের ঘটনা বৃদ্ধির ফলে শিশু এবং যুবকদের মধ্যে মাদকের ব্যবহারও বেড়ে উঠছে, যা সমাজের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাকে এই দিকে আরও সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে এবং চোরাচালান মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।