ভারতের অন্যতম ধনী উদ্যোগপতি গৌতম অদানি তাঁর অর্বাধিক সম্পদের পরও সরলতা ও নম্রতাকে তাঁর পরিচয় বানিয়েছেন। ব্যবসার শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও অদানি জীবনে অপচয় ও দৃঢ়প্রদর্শন থেকে দূরে থাকেন।
গৌতম অদানি: যখন ভারতের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোগপতিদের কথা আসে, তখন গৌতম অদানির নাম আসে—এমন এক ব্যক্তি, যিনি অর্বাধিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বারবার সরলতার উদাহরণ উপস্থাপন করেছেন। তাঁর পুত্রের বিয়েকে সাদামাটা রাখা হোক বা নিজের জন্য অপচয় থেকে বিরত থাকা হোক, অদানি প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক উদাহরণ স্থাপন করে যাচ্ছেন।
এবার আবার তিনি তাঁর আচরণে মানুষকে চমকে দিয়েছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে গৌতম অদানিকে মাত্র ১০.৪১ কোটি টাকা বেতন পেয়েছেন, যা তাঁর নিজের গ্রুপের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার চেয়েও কম। এই নয়, অন্যান্য বিখ্যাত উদ্যোগপতিদের তুলনায়ও তাঁর বেতন অনেক কম। যখন ভারতের কিছু নামকরা কর্পোরেট নেতা কোটি কোটি টাকা বেতন নিচ্ছেন, অদানির এই সিদ্ধান্ত তাঁর সরলতা ও দূরদর্শিতাকে তুলে ধরে।
মাত্র দুটি কোম্পানি থেকে বেতন
গৌতম অদানির নয়টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি আছে, যার মধ্যে তিনি মাত্র দুটি কোম্পানি—অদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড (AEL) এবং অদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন (APSEZ)—থেকে বেতন নিয়েছেন। AEL থেকে তিনি মোট ২.৫৪ কোটি টাকা পেয়েছেন, যার মধ্যে ২.২৬ কোটি টাকা বেতন এবং ২৮ লক্ষ টাকা অন্যান্য ভাতা অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, APSEZ থেকে তিনি ৭.৮৭ কোটি টাকা পেয়েছেন, যার মধ্যে ১.৮ কোটি টাকা বেতন এবং ৬.০৭ কোটি টাকা কমিশন অন্তর্ভুক্ত। এভাবে উভয় কোম্পানি থেকে মোট প্রাপ্তি ১০.৪১ কোটি টাকা হয়েছে—যা ২০২৩-২৪ সালের ৯.২৬ কোটি টাকার তুলনায় মাত্র ১২% বৃদ্ধি।
গ্রুপের CEO এবং কর্মকর্তাদের চেয়েও কম বেতন
অদানি গ্রুপের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অদানির চেয়ে অনেক বেশি বেতন পাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ:
- বিনয় প্রকাশ, CEO, অদানি এন্টারপ্রাইজেস – ৬৯.৩৪ কোটি টাকা
- বিনীত এস. জৈন, MD, অদানি গ্রিন এনার্জি – ১১.২৩ কোটি টাকা
- জুগেশিন্দর সিং, গ্রুপ CFO – ১০.৪ কোটি টাকা
অর্থাৎ গৌতম অদানির বেতন তাঁর নিজের কোম্পানির অনেক কর্মকর্তার চেয়ে অনেক কম। এতে স্পষ্ট হয় যে তিনি কেবল তাঁর পদটির সুবিধা নেন না, বরং দায়িত্বের সাথে কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে বিশ্বাস রাখেন।
অন্যান্য বড় উদ্যোগপতিদের চেয়েও পিছনে
গৌতম অদানির বেতন অন্যান্য অনেক বিখ্যাত ভারতীয় উদ্যোগপতিদের চেয়েও কম। নীচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হল:
- সুনীল ভারতী মিত্তাল (Airtel): ৩২.২৭ কোটি টাকা
- রাজীব বাজাজ (Bajaj Auto): ৫৩.৭৫ কোটি টাকা
- পবন মুঞ্জাল (Hero MotoCorp): ১০৯ কোটি টাকা
- এস. এন. সুব্রহ্মণ্যন (L&T): ৭৬.২৫ কোটি টাকা
- সলিল পারেখ (Infosys): ৮০.৬২ কোটি টাকা
এই তুলনাটি এটা দেখানোর জন্য যথেষ্ট যে অদানি কেবল টাকা উপার্জন করেননি, বরং কোম্পানি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বকেও প্রাধান্য দিয়েছেন।
মুকেশ অম্বানির সাথেও তুলনা
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ অম্বানি কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে এখনও পর্যন্ত বেতন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি স্বেচ্ছায় তাঁর বেতন শূন্য করে দিয়েছেন। তবে, অদানির তুলনায় তাঁর গ্রুপের অন্যান্য কর্মকর্তারা বেতন পাচ্ছেন। অদানি এবং অম্বানি—উভয় दिग्गज উদ্যোগপতিদের এই উদ্যোগ ভারতীয় কর্পোরেট সংস্কৃতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে।
কেন এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ?
যখন দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং কর্পোরেট লোভের আলোচনা তীব্র, সেই সময়ে অদানির এই পদক্ষেপ একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখা যেতে পারে। এটি এমন একটি বার্তা দেয় যে সাফল্য এবং নেতৃত্বের অর্থ কেবল টাকা নয়, বরং দায়িত্ব, সরলতা এবং নীতি অনুসরণও। কর্পোরেট গভর্ন্যান্সে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে যে কোম্পানির প্রধান নিজেকে কত বেতন দেয় এবং কি সে তার কর্মচারীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়।