বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদে একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, যাতে ২৪১ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
নয়াদিল্লি: ভারতের আহমেদাবাদ শহরে একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর দেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বিমান পরিবহন ও বিনিয়োগ জগতেও তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার যা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে সেটি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান, যা আমেরিকার বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। এই দুর্ঘটনায় শুধুমাত্র শত শত পরিবারকে অসহ্য দুঃখে ডুবিয়ে দেয়নি, বরং আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারেও তীব্র অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমেরিকার শেয়ার বাজারে বোয়িংয়ের শেয়ার ঝটপট নেমে গেছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ এবং বিমানের প্রযুক্তিগত বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে উঠে আসা প্রশ্নাবলী প্রতিষ্ঠানের বাজার মূল্যকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বোয়িংয়ের শেয়ারে তীব্র পতন: বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
বৃহস্পতিবার আমেরিকার শেয়ার বাজারে বোয়িংয়ের শেয়ার ৫% পতনের সাথে ২0৩.৬০ মার্কিন ডলারে বন্ধ হয়েছে। এর আগে ভারতীয় সময় দুপুরে প্রি-মার্কেট ট্রেডিংয়েই বোয়িংয়ের শেয়ার ৬.৪২% পর্যন্ত পতন ঘটেছে এবং এটি ১৯৬.৫১ ডলারে নেমে গেছে।
এই পতন কেবলমাত্র মানসিক প্রতিক্রিয়া ছিল না, বরং বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের ভয়কেই প্রতিফলিত করেছে যা বোয়িং সংক্রান্ত গত কয়েক বছরের বিরোধ ও দুর্ঘটনার কারণে জমা হয়েছে। এর আগে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স মডেল সংক্রান্ত দুর্ঘটনাগুলি প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতাকে প্রচণ্ড ক্ষতি করেছিল।
এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার পটভূমি
বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১ উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর মেঘানী নগরের কাছে দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমানে মোট ২৪২ জন ছিলেন, যার মধ্যে ১০ জন ক্রু সদস্য এবং ৩ জন ছোটো শিশু ছিল। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪১ জন যাত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। এটি ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
DGCA এবং অন্যান্য সংস্থার তদন্ত শুরু
ভারতের DGCA (Directorate General of Civil Aviation) অবিলম্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (FDR) ও ভয়েস রেকর্ডারের তদন্ত চলছে।
DGCA-র একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন: এই সময়ে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য দেওয়া তাড়াহুড়ো হবে। প্রযুক্তিগত তদন্ত শুরু হয়ে গেছে যাতে বোয়িংয়ের প্রতিনিধি, এয়ার ইন্ডিয়ার প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ এবং স্বাধীন বিমান পরিবহন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জড়িত রয়েছেন।
বোয়িংয়ের প্রতিক্রিয়া: সম্পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি
বোয়িং প্রতিষ্ঠান একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে বলেছে: আমরা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১ সংক্রান্ত দুর্ঘটনার খবর পেয়ে অত্যন্ত দুঃখিত। আমাদের সমবেদনা মৃতদের পরিবার এবং আহতদের সাথে। আমরা তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করব। আমাদের দল ভারতে স্থানীয় প্রশাসন এবং এয়ার ইন্ডিয়ার সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।
ভারতীয় বিমান পরিবহন খাতেও প্রভাব পড়েছে
বোয়িংয়ের প্রযুক্তিগত বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভারতীয় বিমান পরিবহন বাজারেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার শেয়ার বাজার বন্ধ হওয়ার সময় ইন্টারগ্লোব এভিয়েশন (ইন্ডিগো)-এর শেয়ার ৩.৩১% পতনের সাথে ৫৪৪৬.৩৫ টাকায় বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে স্পাইসজেটের শেয়ার ২.৪০% পতন ঘটিয়ে ৪৪.৪০ টাকায় নেমে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পতন কেবলমাত্র মানসিক প্রভাব নয়, বরং বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন যে নিকট ভবিষ্যতে বোয়িং নির্মিত বিমানের নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং উড্ডয়নে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় এবং খ্যাতির উপর পড়তে পারে।
৭৩৭ ম্যাক্সের মতো পরিস্থিতি কি আবার ঘটবে?
বোয়িং এর আগে ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দুটি বড় দুর্ঘটনার পর প্রায় দুই বছরের জন্য বিশ্বব্যাপী সেই মডেলকে স্থলবদ্ধ করা হয়েছিল। সেই সময়ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে তীব্র পতন ঘটেছিল, এবং এর ফলে কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছিল।
বিমান পরিবহন বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি প্রমাণিত হয় যে আহমেদাবাদ দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ঘটেছে, তাহলে প্রতিষ্ঠানকে আবার সেইরকম বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা ও মামলার মুখোমুখি হতে হবে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতামত
বিনিয়োগ পরামর্শদাতা মার্ক এলড্রিচ বলেন,
বোয়িংয়ের এই পতন কেবলমাত্র দুর্ঘটনার খবরের উপর ভিত্তি করে নয়। এতে গত দুর্ঘটনার স্মৃতি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল প্রক্রিয়া নিয়ে উঠে আসা প্রশ্নাবলীরও ভূমিকা রয়েছে। আগামী তদন্তে যদি দেখা যায় যে প্রযুক্তিগত ত্রুটি কারণ হয়েছে, তাহলে এটি প্রতিষ্ঠানের সুনামকে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে।
ভারতীয় বিশ্লেষক অনুরাগ মেহতা বলেন,
এখন পতন মানসিক প্রতিক্রিয়া। দীর্ঘমেয়াদী চিত্র তদন্ত প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করবে। যদি বোয়িং দোষমুক্ত বলে প্রমাণিত হয় তাহলে পুনরুদ্ধার দ্রুত হতে পারে, কিন্তু যদি ত্রুটি প্রমাণিত হয় তাহলে এটি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ ডেলিভারি সময়সূচীকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বোয়িংয়ের শেয়ার আরও কি নেমে যেতে পারে?
ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন, কিন্তু বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে আগামী কয়েক দিন বোয়িংয়ের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হবে।
যদি তদন্ত প্রতিবেদন বোয়িংয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাহলে শেয়ার আরও নেমে যেতে পারে। অন্যদিকে, যদি কারণ বহিরাগত বা অপারেশনাল বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসতে পারে।