ইউকো ব্যাংক জালিয়াতি: প্রাক্তন CMD গ্রেপ্তার

ইউকো ব্যাংক জালিয়াতি: প্রাক্তন CMD গ্রেপ্তার
সর্বশেষ আপডেট: 19-05-2025

নয়া দিল্লি: ইউকো ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর (CMD) সুবোধ কুমার গোয়েলকে একটি বৃহৎ ব্যাংক জালিয়াতি মামলায় প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ED) গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, গোয়েল নিয়ম উপেক্ষা করে একটি ব্যক্তিগত কোম্পানিকে ৬,২১০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছেন, যার অর্থ পরে জালিয়াতির মাধ্যমে অনিয়মিত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

সম্পূর্ণ ঘটনা কী?

ED-এর মতে, গোয়েল তার কর্মজীবনে কলকাতা-স্থিত Concast Steel & Power Ltd. (CSPL) নামক একটি কোম্পানিকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ দিয়েছেন। এই অর্থ কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যবহার করার পরিবর্তে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট এবং কোম্পানিতে স্থানান্তর করেছে।

তদন্তে এও উঠে এসেছে যে, এর বিনিময়ে গোয়েলকে কমিশন হিসেবে নগদ অর্থ, সম্পত্তি, দামি উপহার, হোটেল স্টে এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এই লেনদেন এত সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছিল যে, প্রথম নজরে কারো সন্দেহ হয়নি। লেনদেনের জন্য একটি জটিল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে ছদ্ম কোম্পানি এবং ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তদন্তের সূচনা কীভাবে হয়েছিল?

এই ঘোটালার সূচনা CBI কর্তৃক দায়ের করা একটি FIR থেকে হয়েছিল। এর পর ED স্বাধীন তদন্ত শুরু করে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে গোয়েল এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বাসস্থানে অভিযান চালানো হয়। অবশেষে ২০২৫ সালের ১৬ মে দিল্লি-স্থিত তার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৭ মে গোয়েলকে কলকাতার PMLA আদালতে হাজির করা হয়, যেখান থেকে তাকে ২১ মে পর্যন্ত ED-এর হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

অর্থ লুকানোর নেটওয়ার্ক

ED-এর প্রতিবেদনের মতে, এই ঘোটালি শুধুমাত্র ঋণ পাশ করানো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না। গোয়েল যে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিলেন, সেগুলি ছদ্ম কোম্পানি এবং ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে অনেক সম্পত্তি কেনা হয়েছিল, যা পরে গোয়েল এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেখানো হয়েছিল।

Layering অর্থাৎ একের পর এক অনেক লেনদেন করে আসল উপকারভোগীর পরিচয় লুকানো হয়েছিল। এই পদ্ধতিই মনি লন্ডারিংয়ের প্রধান অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।

কোম্পানি আগে থেকেই ছিল রাডারে

এটি প্রথমবার নয় যখন CSPL তদন্তকারী সংস্থার নজরদারিতে এসেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কোম্পানির প্রমোটর সঞ্জয় সুরেকাকেও ED গ্রেপ্তার করেছিল। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করা হয়েছে।

এই ঘোটালিতে এ পর্যন্ত ED সুরেক এবং তার কোম্পানিগুলির সাথে যুক্ত ৫১০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।

আগামীতে কী হতে পারে?

তদন্তকারী সংস্থার ধারণা, এই ঘোটালি একটি বৃহৎ নেটওয়ার্কের অংশ হতে পারে। এর ফলে আগামীতে আরও গ্রেপ্তার হতে পারে। ED বর্তমানে লেনদেনের নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য উপকারভোগীদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।

সাধারণ মানুষের জন্য কী শিক্ষা?

এই ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ব্যাংকিং এবং আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ এবং বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে যে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যতই বড় হোক না কেন, তাদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সতর্ক থাকুন, আপডেটেড থাকুন এবং কোনও আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Leave a comment