নোমুরার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে আগামী বছরগুলিতে ইলেকট্রিক যানবাহন (EVs)-এর পাশাপাশি CNG (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) ও দ্রুত গতিতে মোটরযানের জ্বালানি হিসেবে গৃহীত হতে পারে।
সারা বিশ্ব যখন দ্রুত গতিতে ইলেকট্রিক যানবাহনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিকল্প জ্বালানি বিকল্পের আলোচনা শুধুমাত্র ব্যাটারিভিত্তিক গাড়ি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। জাপানি গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক নোমুরার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে একটি চমকপ্রদ কিন্তু বাস্তবসম্মত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে ইলেকট্রিক যানবাহনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার পরও, কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস অর্থাৎ CNG আগামী বছরগুলিতে মোটরযানের জ্বালানি হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে।
এই প্রতিবেদনে CNG-এর সম্ভাবনার সাথে সাথে সরকারের নীতি, পরিবেশগত চাপ এবং বাজারের বাস্তবতাকে সুষমভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসুন বিস্তারিতভাবে বুঝি এই প্রতিবেদনে কী কী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা হয়েছে।
CNG বনাম EV: সংঘাত নয়, সহাবস্থানের আশা
নোমুরার প্রতিবেদনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপসংহার হল যে CNG এবং ইলেকট্রিক যানবাহন পরস্পর প্রতিযোগী নয়, বরং ভারতে সমান্তরাল জ্বালানি বিকল্প হিসেবে বিকশিত হতে পারে। প্রতিবেদনের মতে, যদিও দেশের অনেক রাজ্য দ্রুত গতিতে EV গ্রহণ করছে এবং এতে CNG-এর বৃদ্ধির উপর কিছুটা চাপ পড়তে পারে, তবুও উভয় প্রযুক্তি আগামী বছরগুলিতে একসাথে বিদ্যমান থাকতে পারে।
বিশেষ করে সরকারি পরিবহন এবং ট্যাক্সি সেবায় যেখানে ব্যাটারির সীমাবদ্ধতা এবং চার্জিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সেখানে CNG একটি বাস্তবসম্মত সমাধান হিসেবে টিকে থাকবে। প্রতিবেদন এই সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করে যে সরকারগুলি এখন শুধুমাত্র একটি জ্বালানি সমাধানের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে বহু-জ্বালানি নীতির অগ্রাধিকার দেবে।
দিল্লি: পরিষ্কার জ্বালানির দৌড়ে পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি
প্রতিবেদনে দেশের রাজধানী দিল্লি একটি কেস স্টাডি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নোমুরার মতে, দিল্লিতে বায়ু দূষণের ভয়াবহ অবস্থার কারণে এখানে সরকার ক্রমাগত নতুন পরিষ্কার জ্বালানি সমাধান প্রয়োগ করে আসছে। ডিজেল যানবাহন উপর ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে CNG যানবাহন উপরও কিছু ধরণের নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে।
যদিও এই ধারণা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি স্পষ্ট করে যে দিল্লির মতো মহানগরী যেখানে বায়ুমানের মান বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেখানে সরকার দ্রুত গতিতে ইলেকট্রিক যানবাহনকে উৎসাহিত করতে পারে। তবে, নোমুরার মতে, এই চাপ কেবল স্থানীয় হবে এবং অন্যান্য শহরগুলিতে CNG-এর জন্য এখনও পর্যাপ্ত সুযোগ থাকবে।
মুম্বই: সুষম নীতি থেকে CNG-কে সুবিধা মিলতে পারে
মুম্বই নিয়ে প্রতিবেদনের মূল্যায়ন কিছুটা আলাদা। সমুদ্র উপকূলীয় শহর হওয়ার কারণে এখানে বায়ুমান অন্যান্য মহানগরীর তুলনায় তুলনামূলকভাবে ভাল থাকে। তাই মুম্বাইতে অবিলম্বে CNG-এর উপর কোনো কঠোর নীতি প্রয়োগের সম্ভাবনা কম।
নোমুরা তাদের বিশ্লেষণে বলেছে যে মুম্বাইতে ইলেকট্রিক নীতির ফোকাস মূলত পেট্রোল এবং ডিজেলের মতো তরল জ্বালানীর উপর থাকবে। এর সরাসরি সুবিধা CNG পেতে পারে, কারণ সরকার উভয় বিকল্পের পরিবর্তে CNG এবং EV উভয়কেই উৎসাহিত করতে পারে। এতে শহরে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে CNG বজায় রাখার নীতিতে শক্তি যুক্ত হতে পারে।
এমজিএল-এর অংশগ্রহণ এবং নীতি সমর্থনের আশা
প্রতিবেদনে এটিও বলা হয়েছে যে মহারাষ্ট্রে চলমান EV নীতি নিয়ে উচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি কাজ করছে, যার মধ্যে মহানগর গ্যাস লিমিটেড অর্থাৎ MGL-এরও অংশগ্রহণ রয়েছে। MGL মহারাষ্ট্রে CNG-এর প্রধান সরবরাহকারী এবং এই ক্ষেত্রে এর ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি MGL কর্তৃক আয়োজিত বিনিয়োগকারী দিবসে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা এই আশ্বাস দিয়েছে যে আগামী নীতি CNG-এর জন্য ক্ষতিকারক হবে না, বরং তাকে সমর্থন করতে পারে। MGL-এর মতে রাজ্য সরকার কেবল EV-এর উপর ফোকাস না করে বহু-জ্বালানি মডেলের দিকে এগিয়ে যাবে, যাতে CNG-কেও বিকাশের সুযোগ মিলবে।
বাজার বাস্তবতা এবং যানবাহন সংক্রান্ত সমস্যা CNG-এর পক্ষে
ভারতে EV-এর বৃদ্ধির হার সত্ত্বেও, চার্জিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সীমাবদ্ধতা, ব্যাটারির ব্যয়, যানবাহনের উচ্চ মূল্য এবং লজিস্টিক সমস্যা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর বিপরীতে CNG যানবাহনের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম এবং দেশের অনেক অঞ্চলে CNG-এর বিতরণ নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যেই স্থাপিত।
সরকারি পরিবহন, ট্যাক্সি এবং অটোরিকশা মতো সেক্টরে CNG আজও প্রথম পছন্দের জ্বালানি হিসেবে টিকে আছে। এই ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাটারি যানবাহন এখনও বাস্তবসম্মত নয়। তাই যতক্ষণ না EV প্রযুক্তি সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক হয়, ততক্ষণ CNG-কে একটি শক্তিশালী এবং টেকসই জ্বালানি বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।