প্রধানমন্ত্রী মোদী বিকানের ভ্রমণে কর্ণী মাতা মন্দিরে দর্শন করেছেন এবং ২৬,০০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন। তিনি রেল, সড়ক ও সৌরশক্তি প্রকল্পের উদ্বোধন করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে সবলীকরণের বার্তা দিয়েছেন।
রাজস্থান: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার রাজস্থানের বিকানের ভ্রমণে আছেন, যেখানে তিনি একসাথে বেশ কিছু বৃহৎ কর্মসূচির উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। এই ভ্রমণ কেবলমাত্র একটি উন্নয়ন ভ্রমণ নয়, বরং পাকিস্তান সীমান্তের কাছে একটি কঠোর বার্তা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন সম্প্রতি ভারতীয় সেনা জইশ-ই-মোহাম্মদের পাকিস্তান অবস্থিত সদর দফতরে অপারেশন সিন্দুরের অধীনে অভিযান চালিয়েছে।
কর্ণী মাতা মন্দিরে দর্শন দিয়ে শুরু হল ভ্রমণ
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভ্রমণের শুরু বিকানের জেলার দেষনোকের বিখ্যাত কর্ণী মাতা মন্দিরে দর্শন দিয়ে। এই মন্দির ভক্তদের কাছে তার ধর্মীয় গুরুত্ব ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। কর্ণী মাতা মন্দিরের কাছে অবস্থিত দেষনোক রেলওয়ে স্টেশনের পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, যা এখন তীর্থযাত্রীদের সুবিধার জন্য নতুন রূপ পেয়েছে।
রেল ক্ষেত্রে বড় উপহার
প্রধানমন্ত্রী মোদী দেষনোক রেলওয়ে স্টেশনের পুনর্নির্মিত (redeveloped version) রূপের উদ্বোধন করবেন এবং পাশাপাশি বিকানের থেকে মুম্বাই যাওয়া এক্সপ্রেস ট্রেনকে সবুজ পতাকা দেখাবেন। এছাড়াও তিনি ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চুরু-সাদুলপুর রেল লাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, যা এই অঞ্চলের যাত্রী ও মাল পরিবহন ক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
রেল সংক্রান্ত এই পরিকল্পনা কেবলমাত্র রাজস্থানে সীমাবদ্ধ নয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশজুড়ে ৮৬টি জেলায় ১০৩টি ‘অমৃত স্টেশনের’ ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন, যাতে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
রেল বিদ্যুতায়ন ও সবুজ শক্তির দিকে অগ্রসর ধাপ
ভ্রমণের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী বেশ কিছু রেল বিদ্যুতায়ন প্রকল্প জাতিকে উৎসর্গ করবেন। এর মধ্যে সুরতগড়-ফালোদি, ফুলেরা-ডেগানা, উদয়পুর-হিম্মতনগর, ফালোদি-জৈসলমের এবং সমদড়ি-বাড়মেরের মতো গুরুত্বপূর্ণ রেল লাইনের বিদ্যুতায়ন অন্তর্ভুক্ত। এটি ভারতীয় রেলকে ১০০% বিদ্যুতায়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যার ফলে শক্তি দক্ষতা (energy efficiency) এবং পরিবেশ স্থায়িত্ব (environment sustainability) উভয়কেই শক্তিশালী করা হবে।
এছাড়াও, বিকানের এবং নাওয়া (ডীডওয়ানা-কুচামান)তে সৌরশক্তি প্রকল্পের (solar power projects) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে রাজস্থানের শক্তি গ্রিড আরও শক্তিশালী করা হবে।
সড়ক ও পরিবহন খাতে বৃদ্ধি
পরিবহন খাতে প্রধানমন্ত্রী মোদী তিনটি নতুন আন্ডারপাস প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন এবং পাশাপাশি সাতটি সম্পূর্ণ হওয়া সড়ক প্রকল্প জাতিকে উৎসর্গ করবেন। এই সড়কগুলির মোট ব্যয় প্রায় ৪৮৫০ কোটি টাকা। এর সরাসরি প্রভাব ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত সংযোগ (connectivity) বৃদ্ধি, সাধারণ নাগরিকদের ভ্রমণ সুবিধা এবং সুরক্ষা বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে হবে।
স্বাস্থ্য, জল ও মৌলিক অবকাঠামোতে জোর
প্রধানমন্ত্রী রাজ্য সরকার কর্তৃক শুরু করা ২৫টি বৃহৎ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পগুলি স্বাস্থ্য সেবা, পানীয় জল সরবরাহ, নগর ও গ্রামীণ মৌলিক অবকাঠামো এবং ডিজিটাল সংযোগের মতো ক্ষেত্রে। এর উদ্দেশ্য অঞ্চলীয় উন্নয়নকে গতি দেওয়া এবং জনগণকে উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।
অপারেশন সিন্দুরের পর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর ভ্রমণ
এই ভ্রমণ কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিকানের থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর দফতর সম্প্রতি ভারতীয় অভিযানে ধ্বংস করা হয়েছিল। অপারেশন সিন্দুরের পর পাকিস্তান নাল এয়ারবেসকে লক্ষ্য করে আঘাত করার চেষ্টা করেছিল, যা ভারতীয় সুরক্ষা বাহিনী ব্যর্থ করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নাল এয়ারবেসে গিয়ে সেখানে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর জওয়ানদের সাথে দেখা করা, দেশের সুরক্ষা ও সেনাবাহিনীর মনোবলকে শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপ।