টিম ইন্ডিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়: ১১ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার

টিম ইন্ডিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়: ১১ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার
সর্বশেষ আপডেট: 6 ঘণ্টা আগে

ভারতীয় দল টুর্নামেন্টের লিগ পর্যায়ে চমৎকার প্রদর্শন করত, কিন্তু নকআউট ম্যাচগুলিতে এসে পরাজয় বরণ করতে হত। এর ফলে বহু বছর ধরে টিম ইন্ডিয়া এবং কোটি কোটি ভারতীয় ফ্যানদের হৃদয় ভেঙেছিল।

স্পোর্টস নিউজ: ২৯ জুনের তারিখটি ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকালের জন্য বিশেষ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে এই দিনটিতে ভারত ১১ বছর পর আইসিসি ট্রফি জিতে কোটি কোটি ভারতীয়র স্বপ্ন পূরণ করেছিল। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এর ফাইনালে টিম ইন্ডিয়া একটি রোমাঞ্চকর ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয়বার এই খেতাব জয় করে।

এই জয়ের গল্পও যেন কোনো ফিল্মি স্ক্রিপ্টের থেকে কম ছিল না। ভারত পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ পারফর্ম করে এবং যখন ফাইনালের চাপ চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল, তখন ভারতীয় বোলার এবং হার্দিক পান্ডিয়া অসাধারণ খেলা দেখিয়ে দলকে জয় এনে দেন। বার্বাডোজে খেলা এই ম্যাচে ভারত প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে। জবাবে, দক্ষিণ আফ্রিকার দল ১৬৯ রান করতে সক্ষম হয় এবং ভারত ৭ রানে জয়লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে।

ফাইনালে রোমাঞ্চ: যখন হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছিল

ফাইনাল ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল রোমাঞ্চে ভরা। এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটিকে পুরোপুরি নিজেদের দিকে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু শেষ ওভারগুলিতে ভারতীয় বোলাররা পাল্টা আক্রমণ করে। হার্দিক পান্ডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ওভারগুলিতে দুর্দান্ত বোলিং করেন এবং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। ভারতীয় বোলাররা একসাথে সেই কাজটা করে দেখিয়েছিল যা ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার কষ্ট এখনো ভারতীয় দল এবং ফ্যানদের হৃদয়ে টাটকা ছিল। তখন ভারত টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে প্রবেশ করেছিল, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সেই স্বপ্ন ভেঙে দেয়। এই পরাজয় টিম ইন্ডিয়াকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছিল, কিন্তু ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় সেই পুরনো ক্ষতে প্রলেপ দেয়।

বিরাট, রোহিত এবং জাদেজার টি-টোয়েন্টিকে বিদায়

২৯ জুন ২০২৪-এর জয়কে আরও স্মরণীয় করে তুলেছিলেন ভারতের তিন কিংবদন্তি খেলোয়াড় – বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং রবীন্দ্র জাদেজা – যারা এই খেতাব জয়ের পরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা করেন। এই তিন কিংবদন্তি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতকে অনেক ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছেন এবং তাদের অবদান ক্রিকেট প্রেমীরা কখনোই ভুলতে পারবে না।

বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের মেরুদণ্ড ছিলেন। কোহলি অনেক ম্যাচে তার ক্লাসিক ইনিংস দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন, রোহিত তার বিস্ফোরক ব্যাটিং দিয়ে প্রতিপক্ষের কোমর ভেঙে দিয়েছেন। অন্যদিকে, রবীন্দ্র জাদেজা অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সবসময় দলকে ভারসাম্য দিয়েছেন। এই তিনজন বিশ্বকাপ জিতে সঠিক সময়ে তাদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়েছেন, যা তাদের গল্পকে আরও অনুপ্রেরণামূলক করে তুলেছে।

২৯ জুনের বিশেষ সম্পর্ক

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২৯ জুনের তারিখটি ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে এই দিনে ভারত ১১ বছরের খরা কাটিয়েছিল এবং এর ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে টিম ইন্ডিয়া মার্চ মাসে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও নিজেদের করে নেয়। এর মানে হল, বিশ্বকাপের পর পরের ট্রফির জন্য টিম ইন্ডিয়াকে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি।

২০২৪ সালের জয়ের পর থেকেই ২৯ জুন ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যানদের জন্য একটি উদযাপনের তারিখে পরিণত হয়েছে। অনেকে এটিকে "ক্রিকেট বিজয় দিবস" হিসাবে পালন করে, কারণ এই দিনেই ভারত বিশ্বকে দেখিয়েছিল যে তারা আবারও চ্যাম্পিয়ন।

টিম ইন্ডিয়া ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়ের পর যেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করেছিল, তা প্রশংসার যোগ্য। নতুন খেলোয়াড়রাও অবদান রেখেছিল, তবে কোহলি, রোহিত এবং জাদেজার মতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের উপস্থিতি দলকে শক্তিশালী করেছিল। যখন ফাইনালে চাপ বাড়ে, অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা ধৈর্য ধরে রেখেছিল এবং এটিই জয়ের চাবিকাঠি ছিল।

Leave a comment