ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল (ওডিআই) ম্যাচগুলিতে ব্যাট এবং বলের মধ্যে ভারসাম্য ফেরানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইসিসি ঘোষণা করেছে যে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে দুটি নতুন বলের নিয়মে পরিবর্তন আনা হবে, যা ২ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
স্পোর্টস নিউজ: সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর এসেছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ওয়ানডে ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের দুটি নতুন বলের নিয়মে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এনেছে। ব্যাট ও বলের মধ্যে ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছিল।
২৭ জুন, ২০২৫ তারিখে ঘোষিত এই পরিবর্তনের অধীনে, এখন ওয়ানডে ম্যাচে উভয় প্রান্ত থেকে ব্যবহৃত দুটি নতুন বল ইনিংসের প্রথম ৩৪ ওভার পর্যন্ত ব্যবহার করা হবে। এরপর ফিল্ডিং দল সেই দুটি বলের মধ্যে থেকে একটি বেছে নিয়ে শেষ ১৬ ওভার বোলিং করবে। এই নিয়ম ২ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ থেকে কার্যকর হবে।
আগের নিয়ম কী ছিল?
২০১১ সালে চালু হওয়া বিদ্যমান নিয়মে, ৫০ ওভারের ইনিংসের সময় উভয় প্রান্ত থেকে একটি করে নতুন বল ব্যবহার করা হতো। এর উদ্দেশ্য ছিল বলটিকে বেশি সময় ধরে শক্ত, চকচকে এবং সুষম রাখা, যাতে ব্যাটসম্যান এবং বোলার উভয়ই সমান সুযোগ পায়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে এই নিয়মটি ব্যাটসম্যানদের বেশি সুবিধা দিয়েছে।
আসলে, নতুন বল কম ওভার খেলা হতো, যার কারণে এটির ঘর্ষণ হতো না। এমন পরিস্থিতিতে ডেথ ওভারে বল পুরনো হয়ে রিভার্স সুইং করত না, যা ফাস্ট বোলার এবং স্পিনারদের ধার অনেক কমিয়ে দিয়েছিল। এর ফলে ইনিংসের শেষ ওভারগুলোতে রান করা সহজ হয়ে যায় এবং বোলারদের কেবল রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে দেখা যেত।
নতুন নিয়মের ফলে কী পরিবর্তন হবে?
আইসিসির এই নতুন পরিবর্তনে বোলারদের বড় সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম ৩৪ ওভার পর্যন্ত উভয় বল ব্যবহার করা হবে, যার ফলে বল সামান্য ঘর্ষিত হবে। এরপর ফিল্ডিং দলের কাছে সুযোগ থাকবে সেই দুটি বলের মধ্যে ভালো অবস্থায় থাকা বলটিকে বেছে নিয়ে বাকি ১৬ ওভার সেই বল দিয়ে বোলিং করার।
এই পরিবর্তনের ফলে ডেথ ওভারে রিভার্স সুইংয়ের সম্ভাবনা বাড়বে, যা বোলারদের ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে আরও কৌশলগত বৈচিত্র্য দেবে। আগের নিয়মের কারণে রিভার্স সুইং এবং স্পিনারদের সাহায্য প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন একটি বল ৩৪ ওভারের পর খেলা হবে, যার ফলে এটির ঔজ্জ্বল্য কমবে এবং রিভার্স সুইং এবং গ্রিপ আরও ভালো হবে।
পরিবর্তন কেন জরুরি ছিল?
ওয়ানডে ক্রিকেটে গত এক দশক ধরে দেখা গেছে যে রান রেটে দারুণ বৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষ করে ডেথ ওভারে ব্যাটসম্যানদের দাপট এতটাই বেড়েছে যে বোলারদের জন্য উইকেট নেওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এছাড়াও, পিচের সমতল প্রকৃতি এবং ব্যাটের শক্তিশালী ডিজাইনও বোলারদের সমস্যা বাড়িয়েছিল। আইসিসি এই পরিস্থিতিগুলি বিবেচনা করে এই নতুন নিয়মটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে ওয়ানডে ম্যাচে বোলারদের ভূমিকা পুনরায় শক্তিশালী হয় এবং খেলার উত্তেজনা বাড়ে।
অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং কোচ এই পরিবর্তনের স্বাগত জানিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনিস বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত বোলারদের জন্য খুবই উপকারী হবে। রিভার্স সুইং ক্রিকেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা গত কয়েক বছরে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। আশা করা হচ্ছে, এখন ডেথ ওভারে আবার বোলিং উপভোগ্য হবে।
আইসিসির এই পরিবর্তিত নিয়ম ২ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এর প্রথম সাক্ষী হবে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যে হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজ। এর পরে, এটি সমস্ত আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে বাধ্যতামূলক করা হবে।