ঢাকার মন্দির ভাঙা নিয়ে বিতর্ক: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিক্রিয়া

ঢাকার মন্দির ভাঙা নিয়ে বিতর্ক: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিক্রিয়া
সর্বশেষ আপডেট: 22 ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি দুর্গা মন্দির ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভারত এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশ জানিয়েছে, মন্দিরটি রেলের জমিতে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছিল।

Bangladesh News: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার খিলখেত এলাকায় একটি দুর্গা মন্দির ভেঙে দেওয়ার ঘটনা এখন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় শুধু স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ই প্রতিবাদ জানায়নি, বরং ভারত সরকারও এর ওপর গভীর আপত্তি জানিয়েছে। মন্দির ভেঙে দেওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, এটি রেলওয়ের জমিতে অনুমতি ছাড়াই তৈরি করা হয়েছিল।

মন্দির নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য

বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বছর দুর্গাপূজার সময় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় রেলওয়ের জমিতে একটি অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি করে পূজা করেছিল। রেল কর্তৃপক্ষ সীমিত সময়ের জন্য এর অনুমতি দিয়েছিল, তবে শর্ত ছিল পূজা শেষ হওয়ার পর মণ্ডপটি সরিয়ে ফেলতে হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পূজা শেষ হওয়ার পরেও আয়োজকরা মণ্ডপটি সরাননি। বরং তারা সেখানে মহাকালীর একটি মূর্তি স্থাপন করে স্থায়ী নির্মাণের দিকে অগ্রসর হন। মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, আয়োজকদের মৌখিক ও লিখিতভাবে বহুবার বোঝানো হলেও তাঁরা তা মানতে রাজি হননি। ফলে, প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়ে সেই কাঠামো ভেঙে দেয়।

প্রতিমা বিসর্জন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ সরকার আরও স্পষ্ট করেছে যে, দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিতভাবে বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জানানো হয়েছে, শুধু মন্দিরই নয়, ওই এলাকার সকল অবৈধ কাঠামোও সরানো হয়েছে, যার মধ্যে দোকান, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় এবং অন্যান্য অস্থায়ী নির্মাণও ছিল। সরকারের মতে, এই পুরো কাজটি সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য করা হয়েছে, যা একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া।

ভারতের তীব্র আপত্তি

ভারত সরকার এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল এক সাপ্তাহিক প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কট্টরপন্থী উপাদানের চাপে কাজ করছে। তিনি বলেন, খিলখেতে মন্দির ভাঙার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। সরকারের উচিত ছিল মন্দিরটির নিরাপত্তা দেওয়া। মুখপাত্র আরও বলেন, সরকার মন্দিরটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার অনুমতি দেয় এবং সেই সময় প্রতিমারও ক্ষতি হয়।

মুখপাত্র আরও বলেন, এমন ঘটনা আগেও বাংলাদেশে ঘটেছে, যা উদ্বেগজনক। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই। এছাড়াও বলেন, বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার কোনো লঙ্ঘন না হয়।

ইউনুস সরকারের জন্য বেড়েছে সমস্যা

এই ঘটনা এমন এক সময়ে সামনে এসেছে যখন বাংলাদেশে মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। ভারতের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে সমালোচনা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিবাদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলেও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া আসার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে সেই দেশগুলো থেকে যারা ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে সংবেদনশীল।

হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ

মন্দির ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে স্পষ্ট অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় সংগঠন ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। তাদের দাবি, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

Leave a comment