নাসা-ইসরোর যৌথ মিশন NISAR: পৃথিবীর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ ও দুর্যোগ সতর্কতা

🎧 Listen in Audio
0:00

নাসা ও ইসরোর এই যৌথ মিশন – NISAR মিশন, যার পুরো নাম হল: NASA-ISRO Synthetic Aperture Radar (NISAR)। এই মিশন পৃথিবীর পরিবর্তনশীল অবস্থা, যেমন হিমবাহ গলানো, বন উজাড়, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত পরিবর্তনের ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করবে।

মিশন নিসার: আগামী দিনগুলিতে ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস ও সমুদ্রের ঝড়ের আগেই মানুষ সতর্কতা পেতে পারে। এর কৃতিত্ব যাবে ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরো এবং আমেরিকার নাসা যৌথভাবে তৈরি করা অত্যাধুনিক উপগ্রহ মিশন "নিসার" (NISAR)-কে। এই মিশন কেবলমাত্র দুর্যোগের পূর্বাভাসই দেবে না, বরং পৃথিবীর পরিবর্তনশীল গঠন ও পরিবেশগত পরিবর্তনের ওপরও তীক্ষ্ণ নজর রাখবে। এই প্রকল্পকে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বিপ্লবী অস্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কি নিসার মিশন?

NISAR (NASA-ISRO Synthetic Aperture Radar) একটি উন্নত রাডার ইমেজিং উপগ্রহ, যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (Low Earth Orbit) স্থাপন করা হবে। এই উপগ্রহের প্রধান উদ্দেশ্য হল পৃথিবীর পৃষ্ঠে ঘটে যাওয়া ভৌগোলিক, পরিবেশগত ও জলবায়ু সংক্রান্ত পরিবর্তনের পর্যবেক্ষণ করা। এর সবচেয়ে বিশেষ দিক হল এই উপগ্রহ প্রতি ১২ দিনে সমগ্র বিশ্বের স্ক্যান করবে এবং কোনো এলাকায় হওয়া সামান্যতম পরিবর্তনও রেকর্ড করবে।

নিসারের নির্মাণ ইসরো ও নাসা যৌথভাবে করছে। নাসা L-ব্যান্ড রাডার এবং এর ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে, যখন ইসরো S-ব্যান্ড রাডার, উপগ্রহের বাস ও উৎক্ষেপণের দায়িত্ব নিয়েছে। এই উপগ্রহ ভারতের GSLV রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হবে, যার পরিকল্পনা এখন ২০২৫ সালের শুরুতে করা হচ্ছে।

কেন এই মিশন বিশেষ?

নিসার মিশনের সবচেয়ে বিশেষ দিক হল এর সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (SAR) প্রযুক্তি, যা মেঘ, অন্ধকার বা যেকোনো আবহাওয়ার অবস্থাতেও পৃথিবীর স্পষ্ট ছবি তুলতে সক্ষম। এটি পর্বতের উচ্চতার পরিবর্তন, ভূমিকম্পের পূর্বে হওয়া ফাটল, হিমবাহ গলানো, জলস্তরের উত্থান-পতন এবং এমনকি ভূগর্ভস্থ জলের স্তরের পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হবে।

ভবিষ্যতের দুর্যোগ সতর্কতা ব্যবস্থা হিসেবে, নিসার বিজ্ঞানীদের জানাবে কোন এলাকায় মাটিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এর অর্থ হল যদি কোন বড় ভূমিকম্প আসে, তাহলে তার পূর্বে ভূতাত্ত্বিক আন্দোলন উপগ্রহ রেকর্ড করবে এবং বিজ্ঞানীরা তা ডিকোড করে সম্ভাব্য বিপদের তথ্য দিতে পারবেন।

কিভাবে কাজ করবে?

NISAR-এ দুটি প্রাথমিক রাডার সিস্টেম আছে:

  1. L-ব্যান্ড (L-band): নাসা কর্তৃক নির্মিত এই সিস্টেম পৃথিবীর গভীরে হওয়া পরিবর্তনের পর্যবেক্ষণ করবে।
  2. S-ব্যান্ড (S-band): ইসরো কর্তৃক উন্নত এই ব্যবস্থা পৃষ্ঠের পরিবর্তন যেমন উদ্ভিদ, কৃষিভূমি ও মাটির আর্দ্রতা বিশ্লেষণ করবে।

এই দুটি ব্যান্ড একসাথে 3D ম্যাপিং করবে এবং বিজ্ঞানীদের পৃথিবীর সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশের বিস্তারিত তথ্য দেবে। এই উপগ্রহ প্রতিদিন টেরাবাইটের পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করবে, যা ভারত ও আমেরিকার বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলিতে বিশ্লেষণ করা হবে।

কোন কোন বিপদ ট্র্যাক করবে?

  • ভূমিকম্পের পূর্বে আন্দোলন
  • আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ
  • হিমশৈল ভেঙে পড়া
  • সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি
  • ভূমিধ্বস ও ভূমিধ্বস প্রবণ এলাকা
  • তীরবর্তী এলাকার ক্ষয়
  • ব্যাপক বন উজাড়

কেন এই মিশন ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ভারত একটি ভূমিকম্প প্রবণ দেশ, যেখানে হিমালয় অঞ্চল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত প্রায়শই ভূমিকম্প হয়। এছাড়াও, উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রের ঝড়ের ঝুঁকিও রয়েছে। এই অবস্থায় নিসার মিশন ভারতকে দুর্যোগের পূর্বে সতর্কতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব আনতে পারে।

Leave a comment