চলে গেল – শেখ চলীর গল্প
শেখ চলীর এই গল্প তার অবোধতা এবং উচ্ছ্বাসপূর্ণ আচরণের উপর ভিত্তি করে। ঘটনা ঘটেছিল একদিন বাজারে। সেখানে শেখ চলী জোর গলায় 'চলে গেল – চলে গেল' বলে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। ঐ সময় শহরে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। লোকেরা শেখ চলীকে 'চলে গেল – চলে গেল' বলে দৌড়াতে দেখে মনে করলেন দুই দলের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। যুদ্ধের ভয়ে সব দোকানদার দোকান বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িদের দিকে চলে যেতে শুরু করলেন। পুরো বাজারে নীরবতা ছড়িয়ে পড়ল। শেখ চলীই তখন এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছিল 'চলে গেল' বলে। কিছুক্ষণ পরে কয়েকজন লোক শেখ চলীকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, "ভাই! কোথায় চলে গেল? লড়াই কেন হলো?"
শেখ চলী তাদের কথা বুঝতে পারল না। অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনারা কি জিজ্ঞাসা করছেন? কোন লড়াই? আমি কোন লড়াই সম্পর্কে জানি না।" লোকেরা উত্তর দিল, "আপনি তো এতক্ষণ 'চলে গেল – চলে গেল' বলে চিৎকার করছেন। আমরা জানতে চাই কোন এলাকায় লড়াই হচ্ছে।" শেখ চলী এখনও কিছু বুঝতে পারছিল না। সে বলল, "আমার কোন লড়াই সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। আপনারা কি বলছেন তাও আমি বুঝতে পারছি না।" এমনটি বলে শেখ চলী 'চলে গেল – চলে গেল' বলে আরো জোর করে দৌড়াতে লাগল। তখন একজন লোক তাকে ধরে জিজ্ঞাসা করল, "আপনি 'চলে গেল – চলে গেল' কেন বলে দৌড়াচ্ছেন?"
হাসতে হাসতে শেখ চলী বলল, "আজ অনেকদিন পরে আমার একটা ভুয়া মুদ্রা চলে গেল। আমি এটা আমার জেবের মধ্যে রেখে অনেকদিন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। কিন্তু কোন দোকানদার এটা নেয়নি। আজ একটা দোকানে সেটা চলে গেল। এই খুশিতে আমি পুরো এলাকায় 'চলে গেল – চলে গেল' বলে চিৎকার করছি।" শেখ চলীর কথা শুনে সবাই ক্ষেপে উঠল। তাদের মনে হল এই লোকের কথার কারণে সবাই অযথা বিপদে পড়েছে। ভেবে ভেবে সবাই সেখান থেকে চলে গেল, আর শেখ চলী হাসতে হাসতে এগিয়ে চলল। কিছু দূরের একটা গাছের নিচে কিছু গ্রামবাসী দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায় খুঁজছিল। তাদের মধ্যে একজন ঔষধিবিদ ছিল। কথা বলার সময় ওই ঔষধিবিদ সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন, "যদি আপনাদের পাশে কোন লোক জলে ডুবে যায়, তার পেট জল পূর্ণ এবং শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আপনারা কি করবেন?"
দূর থেকে শেখ চলীও এই কথা শুনেছিল। সব শুনে সে লোকদের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ঔষধিবিদ আবার সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন কিন্তু কেউ কোন উত্তর দিতে পারল না। ঔষধিবিদের পাশে কিছু লোক শেখ চলীকে জিজ্ঞাসা করল, "তুমি কি করবে বলো তো?" শেখ চলী দ্রুত উত্তর দিল, "কেউ যদি শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমি প্রথমে একটি কাফন কিনব এবং লাশের জন্য কবর খুঁড়তে লোক নিয়ে আসব।" এমনটি বলে শেখ চলী হেসে তার পথে এগিয়ে চলল। শেখ চলীর উত্তর শুনে উপস্থিত সকল লোক অবাক হয়ে গেল। তাদের মনে হল সে কিছুর গুরুত্ব বুঝে না। এখান থেকে কিছু জিজ্ঞাসা করা খুবই ভুল।
এই গল্প থেকে শিক্ষা হল – ভাব না ভেবে আনন্দে আনন্দে ঘুরে বেড়ানো উচিত নয়। একই সাথে অন্যের কথা শুনে নিজের কাজেও প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। প্রতিটি বিষয়ের কারণ জেনে অবশ্যই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।