২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে দিল্লি সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত: প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ন্যূনতম বয়স ৬ বছর নির্ধারিত হল।
দিল্লি সরকার ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দিকে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজধানীতে ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ন্যূনতম বয়স ছয় বছর নির্ধারিত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, নার্সারি থেকে আপার কেজি পর্যন্ত তিনস্তরের পূর্ব-প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পরেই শিশুরা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির যোগ্য হবে। এই নিয়ম দিল্লির সকল সরকারি, সহায়তা প্রাপ্ত ও বেসরকারি স্কুলে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।
নতুন নিয়ম কী এবং কখন থেকে কার্যকর হবে?
এখন পর্যন্ত দিল্লিতে অধিকাংশ স্কুলেই শিশুরা চার বা পাঁচ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতো, কিন্তু এখন সেই ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে। ২০২৬-২৭ সাল থেকে কার্যকর হতে চলা এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিশুর ন্যূনতম বয়স ছয় বছর হতে হবে। এর অর্থ হল, তিন বছর বয়সে নার্সারি, চার বছর বয়সে লোয়ার কেজি, পাঁচ বছর বয়সে আপার কেজি এবং অবশেষে ছয় বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হবে।
পূর্ব-প্রাথমিক শিক্ষার তিনটি প্রয়োজনীয় ধাপ
দিল্লি সরকারের এই নতুন ব্যবস্থার অনুযায়ী, শিশুর শিক্ষাজীবন এখন নিম্নলিখিত ধাপগুলি অতিক্রম করে গঠিত হবে:
- নার্সারি: ভর্তির বয়স ৩ বছর
- লোয়ার কেজি (LKG): ভর্তির বয়স ৪ বছর
- আপার কেজি (UKG): ভর্তির বয়স ৫ বছর
- প্রথম শ্রেণী (Class 1): ভর্তির বয়স ৬ বছর
এই পদ্ধতি অবলম্বন করে সরকার শিশুদের উন্নত মানসিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ও এনসিএফ-এফএসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত
এই পরিবর্তন জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি) ২০২০ এবং জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামো – ফাউন্ডেশনাল স্টেজ (NCF-FS) এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নীতি অনুযায়ী, ৩ থেকে ৮ বছর বয়সকে শিক্ষার ‘ফাউন্ডেশনাল স্টেজ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যেখানে শিশুদের খেলা, কার্যকলাপ ভিত্তিক ও অনুসন্ধানমূলক শিক্ষা প্রদানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকারের বিশ্বাস, যদি শিশুরা এই পর্যায়টি সম্পূর্ণরূপে অনুভব করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রবেশ করে, তাহলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা ও বোঝার ক্ষমতা আরও উন্নত হবে।
পরিবর্তনের প্রয়োজন কেন হলো?
বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষানীতি নির্মাতাদের মতে, বর্তমানে অধিকাংশ শিশুই খুব কম বয়সে আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রবেশ করে, যার ফলে তাদের মানসিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থাকে। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্কের বিকাশ খুব দ্রুত হয়, এবং যদি এই সময় শিশুদের সহজ, মনোরম ও কার্যকলাপ ভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহলে তারা আরও আত্মবিশ্বাসী ও জ্ঞান-ভিত্তিক হয়।
তদুপরি, এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স ভিন্ন ভিন্ন ছিল, যার ফলে পাঠ্যক্রম, মানসিক পরিপক্কতা ও মূল্যায়নে বৈষম্য দেখা দিত। দিল্লি সরকারের এই পদক্ষেপ শিক্ষার মান সমান করার দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
স্কুল ও অভিভাবকদের জন্য কী প্রভাব পড়বে?
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার ফলে দিল্লীর সকল স্কুলকে এখন তাদের পূর্ব-প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো তিনটি ধাপে বিভক্ত করতে হবে। যে স্কুলগুলিতে শুধুমাত্র নার্সারি ও কেজির ব্যবস্থা আছে, তাদের এখন লোয়ার ও আপার কেজি ক্লাসও শুরু করতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য এই পরিবর্তন প্রাথমিক সময়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি শিশুদের যথাযথ বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক বেসরকারি স্কুল ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, কিন্তু এখন এটি সকলের উপর বাধ্যতামূলকভাবে প্রযোজ্য হবে।
সরকার সুপারিশ চেয়েছে
দিল্লির শিক্ষা পরিচালকালয়ের পরিচালক বেদিতা রেড্ডি জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সরকার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছ থেকে সুপারিশ আহ্বান করছে। শিক্ষক, অভিভাবক, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং সাধারণ নাগরিকরা ১০ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পাঠাতে পারবেন। এজন্য [email protected] ইমেইল আইডি প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি শিশুদের মৌলিক দক্ষতা শক্তিশালী করবে এবং তাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করবে। পাশাপাশি, এতে শিক্ষার মানও উন্নত হবে।
কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, তিনস্তরের পূর্ব-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা ছোট ছোট স্কুলের জন্য সম্পদ এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা প্রয়োজনীয় স্কুলগুলিকে প্রশিক্ষণ ও কাঠামোগত সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত।