বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আইএএস অফিসার, প্রিয়া রানীর অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা

বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আইএএস অফিসার, প্রিয়া রানীর অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা
সর্বশেষ আপডেট: 25-12-2024

বিহারের এক ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়ে, প্রিয়া রানীর সাফল্যের গল্প আজ লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। প্রিয়া রানী, যিনি একসময় নিজের গ্রামে শিক্ষার জন্য বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন, আজ তিনিই বিহার রাজ্যের আইএএস অফিসার। এই গল্প শুধুমাত্র একটি মেয়ের পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্পের নয়, বরং সমাজের শিক্ষার গুরুত্ব এবং মেয়েদের অধিকারের কথাও তুলে ধরে।

গ্রামে শিক্ষার বিরোধিতা, দাদুর সমর্থন

প্রিয়া রানীর জন্ম বিহারের ফুলওয়ারি শরিফের কুড়কুড়ি গ্রামে। যেখানে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে সমাজে ছিল প্রবল বিরোধিতা। কিন্তু প্রিয়ার দাদু এবং বাবা তাঁর পাশে ছিলেন। তাঁরা প্রিয়াকে ভালো শিক্ষা দেওয়ার জন্য পাটনা নিয়ে আসেন। প্রিয়া জানান, "যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন গ্রামে মনে করা হতো মেয়েদের লেখাপড়া করার কোনও দরকার নেই। কিন্তু আমার দাদু সবসময় আমাকে উৎসাহিত করতেন এবং আমার পড়াশোনার জন্য সবরকম সাহায্য করতেন।"

প্রিয়ার জীবন ছিল নানা প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ, কিন্তু তিনি কখনও হাল ছাড়েননি। পাটনায় একটি ভাড়ার বাড়িতে থাকার সময়ও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও সাফল্যের পথে এগিয়ে যান।

বিআইটি মেসরা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিগ্রি, তারপর ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি

প্রিয়া তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর বিআইটি মেসরা থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি শুরু করেন। প্রথম চেষ্টায় তিনি সফল হননি, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। পরের চেষ্টায় তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে (Indian Defence Services) চাকরি পান, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল আইএএস হওয়ার, যা তখনও পূরণ হয়নি।

প্রিয়া তৃতীয় চেষ্টাতেও অসফল হন, কিন্তু তাঁর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস অটুট ছিল। চতুর্থ চেষ্টায় তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষায় সাফল্য পান এবং আইএএস অফিসার হন।

সাফল্যের চাবিকাঠি: নিয়মিত পড়াশোনা ও কঠোর পরিশ্রম

প্রিয়া রানীর মতে, তাঁর সাফল্যের মূল কারণ হল নিয়মিত পড়াশোনা এবং কঠোর পরিশ্রম। তিনি প্রতিদিন ভোর ৪টেয় উঠে পড়াশোনা করতেন এবং অর্থনীতিকে তাঁর প্রধান বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সবসময় NCERT-এর বই এবং সংবাদপত্রকে গুরুত্ব দিতেন। তিনি মনে করেন, শিক্ষাই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং এটাই তাঁর জীবনকে সঠিক পথে চালিত করেছে।

সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা: মেয়েরাও পারে বিশেষ কিছু করতে

প্রিয়ার সাফল্য শুধু তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের জন্য গর্বের বিষয় নয়, বরং এটি পুরো বিহার এবং দেশের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, "মেয়েরাও অনেক কিছু করতে পারে এবং তাদের স্বপ্নপূরণের জন্য সবসময় উৎসাহিত করা উচিত। সমাজে মেয়েদের শিক্ষা এবং তাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুবই জরুরি।"

তাঁর গল্প প্রমাণ করে, যদি কারও মনে প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশ্রম করার ক্ষমতা থাকে, তাহলে সে যেকোনো বাধাকে অতিক্রম করে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করতে পারে।

অনুপ্রেরণামূলক সমাপ্তি: হাল ছেড়ো না

প্রিয়া রানীর সাফল্য আমাদের শেখায় যে, যতই কঠিন পরিস্থিতি আসুক না কেন, যদি আমরা পরিশ্রম করি এবং আত্মবিশ্বাস রাখি, তাহলে কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়। যারা আগে তাঁর লেখাপড়ার বিরোধিতা করত, তারাও আজ তাঁর সাফল্যে গর্বিত। প্রিয়া প্রমাণ করেছেন যে, শিক্ষা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো বাধাকে অতিক্রম করা সম্ভব।

তাঁর গল্প আজ লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী এবং বিশেষ করে মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা, যারা তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।

```

Leave a comment