বিহারের পাটোয়া টোলি: JEE Main-এ ৪০ জনের অধিক ছাত্রের অসাধারণ সাফল্য

🎧 Listen in Audio
0:00

১৯ এপ্রিল প্রকাশিত JEE Main-এর ফলাফলে বিহারের একটি গ্রামের ৪০ জনেরও বেশি ছাত্র সাফল্য অর্জন করে গ্রামের নাম উজ্জ্বল করেছে।

বিহার: বিহারের গয়া জেলা বর্তমানে সমগ্র দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ হল, এই জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম, পাটোয়া টোলীর অসাধারণ সাফল্য। এই গ্রামের ৪০ জনেরও বেশি ছাত্র একসাথে JEE Main ২০২৫ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এই খবরটি সমগ্র রাজ্যে গর্ব ও আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষত, এই শিশুরা আর্থিক দুর্দশা, সংস্থানের অভাব এবং নানাবিধ সমস্যার মধ্যেও এই সাফল্য অর্জন করেছে।

১৯ এপ্রিল JEE Main ২০২৫-এর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবার ২৪ জন ছাত্র ১০০ পার্সেন্টাইল অর্জন করে সমগ্র দেশে শীর্ষস্থান অধিকার করে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি আলোচনা ব্যাপকভাবে গয়া জেলার পাটোয়া টোলি গ্রাম অর্জন করেছে, যেখানে একসাথে কয়েক ডজন শিশু JEE Main-এর মতো কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এটি কেবলমাত্র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার খবর নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প যা বলে যে, পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে যেকোনো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

এই শিশুদের সাফল্যের পেছনে কে আছে?

এই অনুপ্রেরণামূলক পরিবর্তনের পিছনে আছে একটি NGO – বৃক্ষ ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছর ধরে পাটোয়া টোলীর মতো গ্রামগুলিতে শিশুদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি শিশুদের JEE এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

বৃক্ষ ফাউন্ডেশনের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন যে পাটোয়া টোলিতে পড়াশোনার প্রতি এখন সচেতনতা রয়েছে। শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে এই বিশ্বাস রয়েছে যে পড়াশোনাই গ্রামের চেহারা বদলে দিতে পারে। তিনি বলেছেন, "আমাদের ফাউন্ডেশন শিশুদের কেবলমাত্র পড়াশোনা শেখায়নি, বরং তাদের আত্মবিশ্বাসও দিয়েছে।"

শিশুরা অসাধারণ প্রদর্শন করেছে, ৯৫ পার্সেন্টাইলের উপরে স্কোর

এই বছর JEE Main পরীক্ষায় পাটোয়া টোলীর অনেক ছাত্রই চমৎকার স্কোর করেছে। কিছু প্রধান নাম এবং তাদের স্কোর নিম্নরূপ:

শরণ্যা – ৯৯.৬৪ পার্সেন্টাইল

আলোক – ৯৭.৭ পার্সেন্টাইল

শৌর্য – ৯৭.৫৩ পার্সেন্টাইল

যশরাজ – ৯৭.৩৮ পার্সেন্টাইল

শুভম – ৯৬.৭ পার্সেন্টাইল

প্রতীক – ৯৬.৫৫ পার্সেন্টাইল

কেতন – ৯৬ পার্সেন্টাইল

পাটোয়া টোলি: একটি গ্রাম, যা সমগ্র দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উদাহরণ

বিহারের গয়া জেলায় একটি গ্রাম আছে – পাটোয়া টোলি। একসময় এই গ্রামকে দরিদ্র ও সাধারণ বলে মনে করা হত। এখানকার অধিকাংশ পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল ছিল। পড়াশোনার প্রতি তেমন গুরুত্ব দেওয়া হত না, এবং অনেক শিশুর স্কুলিং অসম্পূর্ণ থাকত। কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে।

এখন পাটোয়া টোলি কেবলমাত্র একটি গ্রাম নয়, বরং শিক্ষার একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। একে এখন "বিহারের কোটা" বলা হচ্ছে – কারণ এখানকার কয়েক ডজন শিশু প্রতি বছর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেলের মতো কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে।

কীভাবে কাজ করে বৃক্ষ ফাউন্ডেশন?

বৃক্ষ ফাউন্ডেশন পাটোয়া টোলি এবং আশপাশের এলাকায় শিক্ষাকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি গ্রামের মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে দুর্বল ছাত্রদের:

  • বিনামূল্যে কোচিং ক্লাস
  • অধ্যয়ন সামগ্রী এবং নোটস
  • মক টেস্ট এবং অনলাইন টেস্ট সিরিজ
  • ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেশন
  • প্রেরণামূলক বক্তৃতা এবং মেন্টরশিপ

পাটোয়া টোলি – এখন কেবলমাত্র গ্রাম নয়, পরিচয়

পাটোয়া টোলি এখন কেবলমাত্র বিহার নয়, সমগ্র দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এটি দেখায় যে, যদি সমাজ একত্রিত হয়ে পরিশ্রম করে, তবে যেকোনো গ্রামের চেহারা বদলে দেওয়া সম্ভব।

আজ পাটোয়া টোলীর নাম শুনলেই মানুষের মনে পড়াশোনা, পরিশ্রম এবং সাফল্যের কথা মনে পড়ে।

সরকার ও সমাজের কাছ থেকে কী আশা?

পাটোয়া টোলীর সাফল্য কেবলমাত্র একটি গ্রামের গল্প নয়, এটি সমগ্র সমাজের জন্য একটি বার্তা। যদি সরকার ও সমাজ এই ধরনের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করে, তবে দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে এ ধরনের গল্প বেরিয়ে আসতে পারে।

সরকারের উচিত এই ধরনের NGO-কে সমর্থন দেওয়া এবং সেইসব গ্রামের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করা যেখানে শিশুরা পড়তে চায় কিন্তু সংস্থান নেই।

Leave a comment