স্টারলিংক ভারতে: উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেটের যুগের সূচনা

স্টারলিংক ভারতে: উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেটের যুগের সূচনা
সর্বশেষ আপডেট: 07-06-2025

ভারতে এলন মাস্কের স্টারলিংককে GMPCS লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যার ফলে দেশে শীঘ্রই উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা শুরু হতে পারে। এটি দূরবর্তী এলাকাগুলিতে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

ভারতে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা নিয়ে একটি বড় খবর এসেছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর এলন মাস্কের কোম্পানি স্টারলিংক (Starlink) কে ভারত সরকার GMPCS লাইসেন্স প্রদান করেছে। এই পদক্ষেপ ভারতীয় ইন্টারনেটের জগতে বিপ্লব আনবে এবং দেশে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা শুরু হওয়ার পথ প্রায় পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই সিদ্ধান্তে ইন্টারনেট সংযোগের উন্নত সুবিধার অপেক্ষায় থাকা মানুষদের নতুন আশা জেগে উঠেছে। আসুন বিস্তারিত জেনে নেই এই গুরুত্বপূর্ণ খবর সম্পর্কে, স্টারলিংকের পরিকল্পনা এবং ভারতে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।

স্টারলিংক কেন লাইসেন্স পেল এবং এর অর্থ কী?

ভারতে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য কোম্পানিগুলিকে সরকারি অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে Jio এবং Airtel-এর মতো কোম্পানিগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্টারলিংকও এই লাইসেন্স পেয়েছে, যার ফলে এটি তৃতীয় কোম্পানি হিসেবে ভারতে এই সেবা শুরু করার অনুমতি পেয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে GMPCS (Global Mobile Personal Communication by Satellite) লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানির জন্য একটি বড় অর্জন। এর অর্থ হল স্টারলিংক এখন ভারতে তার উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে পারবে, যার ফলে দূরবর্তী এলাকাগুলিতেও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।

এলন মাস্কের স্টারলিংক কোম্পানি গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে আসছে। ২০২২ সাল থেকেই ভারতে কোম্পানিটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে আসছিল, কিন্তু প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে চলছিল। এখন সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর এই সেবা শুরু হওয়ার আশা বেড়েছে।

ভারতে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা

ভারত একটি বিশাল দেশ, যেখানে অনেক এমন এলাকা রয়েছে যা ভৌগোলিক বা অর্থনৈতিক কারণে ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বঞ্চিত। পর্বতীয় অঞ্চল, বনাঞ্চল, গ্রামীণ এবং পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলি হল এমন স্থান যেখানে ফাইবার অপটিক বা মোবাইল ইন্টারনেটের প্রবেশাধিকার সীমিত। এই ক্ষেত্রে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে।

উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনি কেবল বা টাওয়ার ছাড়াই দূরবর্তী এলাকাগুলিতেও ইন্টারনেট সেবা পেতে পারেন। স্টারলিংকের মতো কোম্পানি হাজার হাজার ছোট উপগ্রহ ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো কোণে দ্রুত এবং স্থিতিশীল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়। এই প্রযুক্তি বিশেষ করে তাদের জন্য উপকারী হবে যারা বর্তমানে ইন্টারনেটের অভাবের সম্মুখীন হচ্ছে।

স্টারলিংক সেবা শুরু করার জন্য কী বাকি আছে?

GMPCS লাইসেন্স পাওয়ার পরেও স্টারলিংকের সামনে একটি শেষ বড় চ্যালেঞ্জ বাকি আছে। কোম্পানিকে ভারতের IN-SPACe (Indian National Space Promotion and Authorization Center) থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে। IN-SPACe হল ভারতের সেই সরকারি সংস্থা যা দেশে উপগ্রহ এবং মহাকাশ সংক্রান্ত কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

এই চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পরেই স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা শুরু করতে পারবে। বর্তমানে এই প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগবে তার কোন নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে শীঘ্রই এই অনুমোদনও পাওয়া যাবে।

স্টারলিংকের ভারতে কী পরিকল্পনা থাকতে পারে?

স্টারলিংক তার সেবা প্রথমে ভারতের দূরবর্তী এলাকাগুলিতে উপলব্ধ করার দিকে মনোযোগ দেবে। বিশেষ করে সেসব এলাকা যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল বা ইন্টারনেটের গতি ধীর। এর সাথে সাথে শহরগুলিতেও স্টারলিংকের সেবা মানুষকে উন্নত এবং দ্রুত ইন্টারনেট প্রদান করতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে যেসব জায়গায় নেটওয়ার্ক সংযোগের সমস্যা রয়েছে।

স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবার একটি বড় সুবিধা হল এতে কোনও কেবল বিছানোর প্রয়োজন হয় না। গ্রাহকরা একটি ছোট উপগ্রহ ডিশ এবং মডেম ব্যবহার করে সরাসরি উপগ্রহের সাথে সংযুক্ত হতে পারে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। এতে ইন্টারনেট সেবার বিস্তার দ্রুত হবে এবং দূরবর্তী এলাকাগুলিতে ডিজিটাল বিভাজন কমে আসবে।

Amazon-এর Kuiper সেবাও ভারতে

স্টারলিংক ছাড়াও Amazon-এর উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী কোম্পানি Kuiperও ভারতে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। Amazonও ভারত সরকারের কাছে তার পরিকল্পনার জন্য আবেদন করেছে। যদি Kuiperও শীঘ্রই লাইসেন্স পায়, তাহলে ভারতে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেটের বিকল্প আরও বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে গ্রাহকদের কাছে উন্নত এবং সস্তা বিকল্প উপলব্ধ হবে।

উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেটের সুবিধাগুলি

  • দূরবর্তী এলাকাগুলিতে উন্নত সংযোগ: পাহাড়ি, বনাঞ্চল বা গ্রামীণ এলাকাগুলিতেও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।
  • দ্রুত এবং স্থিতিশীল ইন্টারনেট: উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেটে ইন্টারনেটের গতি এবং স্থায়িত্ব উন্নত হয়, বিশেষ করে সেসব এলাকায় যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল।
  • জরুরি সেবাগুলির জন্য উপকারী: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেমন বন্যা বা ভূমিকম্পে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট জরুরি তথ্য এবং যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারে।
  • ডিজিটাল বিভাজন কমে আসবে: ইন্টারনেটের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির ফলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সুবিধাগুলির উন্নতি হবে।

Leave a comment