সিরিয়ায় বশর আল-আসাদের পতনের পর নতুন ইসলামিক সরকার নারীদের সুইমিংসুট পরা নিষিদ্ধ করেছে। এখন জনসাধারণের সমুদ্র সৈকতে বুর্কিনি পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পুরুষদের জন্যও পোশাকের নির্দেশিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিরিয়া: বশর আল-আসাদের শাসন শেষ হওয়ার পর একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এই সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসলামিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)। সরকার প্রধান আহমেদ আল-শারা মঙ্গলবার একটি নতুন পোশাক কোড প্রয়োগ করেছেন, যার অধীনে জনসাধারণের স্থানে নারীদের সুইমিংসুট পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এখন বুর্কিনি পরা বাধ্যতামূলক
সরকারের নতুন নিয়ম অনুসারে, নারীরা এখন জনসাধারণের সমুদ্র সৈকত এবং সুইমিং পুলে ঐতিহ্যগত সুইমিংসুট পরতে পারবেন না। এর পরিবর্তে, তাদের এমন সাঁতারের পোশাক পরতে হবে যা পুরো শরীর ঢেকে রাখবে। এই ধরণের পোশাককে 'বুর্কিনি' বলা হয়।
পর্যটন মন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন
সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পর্যটন মন্ত্রী মাজেন আল-সালহানী এই সিদ্ধান্তের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, নতুন পোশাক কোড সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর সংবেদনশীলতার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি ফেসবুকে পোস্ট করে বলেছেন, "সমস্ত পর্যটক এবং স্থানীয়দের সৈকত এবং পুলে উপযুক্ত এবং শালীন সাঁতারের পোশাক পরা প্রয়োজন।"
সৈকতের বাইরে পোশাক পরারও নির্দেশনা
নারীদের জন্য আরেকটি নিয়ম হলো সমুদ্র থেকে বের হওয়ার সময় তাদের সুইমিংসুটের উপরে একটি কভার-আপ বা ঢিলা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক হবে। এর উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণের স্থানে কারও ধর্মীয় বা সামাজিক অনুভূতি আঘাত না করা নিশ্চিত করা।
পুরুষদের জন্যও করা হয়েছে নিয়ম
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের জন্যও পোশাক নিয়ে কিছু কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তাদের এখন জনসাধারণের স্থান, হোটেল লবি এবং রেস্তোরাঁয় টপলেস (শার্ট ছাড়া) ঘোরাঘুরির অনুমতি নেই।
পোশাক কোড অনুসারে পুরুষদের এমন পোশাক পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যা কাঁধ এবং হাঁটু ঢেকে রাখবে, পাশাপাশি স্বচ্ছ এবং টাইট পোশাক পরা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রিমিয়াম হোটেলে ছাড়
সরকার স্পষ্ট করেছে যে আন্তর্জাতিক রিসোর্ট, প্রিমিয়াম হোটেল এবং ব্যক্তিগত পুলে পশ্চিমা পোশাক কোডের অনুমতি দেওয়া হবে। অর্থাৎ এই স্থানগুলিতে নারীরা ঐতিহ্যগত সুইমিংসুট পরতে পারবেন।
পর্যটন মন্ত্রণালয় আরও বলেছে যে সৈকত এবং পুলের নজরদারি কর্মীদের দায়িত্ব হবে এই নিয়মগুলি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।
HTS-এর ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ইসলামী শাসনের ছাপ
এই সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দেয় যে সিরিয়ায় এখন একটি কট্টরপন্থী ইসলামী শাসন প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। যে সংগঠন HTS আসাদের শাসন উৎখাত করেছে, সেটিই এখন সিরিয়ার পরিচালনা করছে। এই সংগঠনটি আগে আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত ছিল এবং আমেরিকা এবং ব্রিটেন এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
আহমেদ আল-শারা কে?
সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-শারা HTS-এর শীর্ষ নেতা। তিনিই এই নতুন পোশাক কোডে স্বাক্ষর করেছেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে তিনি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানেও স্বাক্ষর করেছিলেন, যার অধীনে আগামী পাঁচ বছর সিরিয়ায় ইসলামী শাসন প্রযোজ্য থাকবে।