পাকিস্তানের সিন্ধুতে ছয় নদী খনন প্রকল্পের বিরোধে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবাদকারীরা গৃহমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশের গুলিতে দুই প্রতিবাদকারী নিহত, অনেকে আহত। রাজনৈতিক বিতর্ক আরও গভীর হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে পানি সংকট এবং জলসম্পদ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এখানকার মানুষ ছয়টি নদী খনন প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করছে, যাকে চোলিস্তান নদী প্রকল্প বলা হয়। এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে প্রবল ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রতিবাদ চলাকালীন পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয় যে প্রতিবাদকারীরা গৃহ রাজ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
কী চোলিস্তান নদী প্রকল্প?
চোলিস্তান নদী প্রকল্প হল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সিন্ধু নদী থেকে ছয়টি নদী খননের পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে সেচ ব্যবস্থা স্থাপন এবং প্রায় ৪ লক্ষ একর বনজ জমি চাষাবাদ উপযোগী করে তোলা। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় প্রায় ২১১.৪ অর্ব টাকা বলে জানা গেছে। যদি এই প্রকল্প সফল হয়, তাহলে এটি এলাকার কৃষক ও স্থানীয়দের জন্য বড় স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে।
কেন প্রতিবাদ হচ্ছে?
যদিও প্রকল্পের সুবিধাগুলি শুনতে ভালো লাগে, তবে সিন্ধু প্রদেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলির এর সাথে গুরুতর আপত্তি রয়েছে। সিন্ধু সরকার পরিচালনা করা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সহ অনেক রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন এবং কর্মী এই প্রকল্পের বিরোধী। তাদের দাবি, এই পরিকল্পনার ফলে সিন্ধু প্রদেশের পানি শেষ হয়ে যাবে এবং এখানকার মানুষ পানির জন্য আরও বেশি সংগ্রাম করবে। তারা এটিকে তাদের অঞ্চলের অধিকারের বিরুদ্ধে মনে করে।
প্রতিবাদ ও হিংসা
মঙ্গলবার প্রতিবাদ চরমে পৌঁছে। সিন্ধুর নওশেরো ফিরোজ জেলায় গৃহ রাজ্যমন্ত্রী জিয়াউল হাসান লঞ্জার বাড়িতে প্রতিবাদকারীরা হামলা চালায়। মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, পাশাপাশি দুটি ট্রেলারও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই হিংসায় দুই প্রতিবাদকারী নিহত হয় এবং পুলিশসহ কয়েক ডজন লোক আহত হয়। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায়, যার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং কেন্দ্র-প্রদেশ বিতর্ক
চোলিস্তান নদী প্রকল্প পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার (শেহবাজ শরীফ সরকার) এবং সিন্ধুর পিপিপি সরকারের মধ্যে বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পকে তাদের অগ্রাধিকারের বিষয় বলে মনে করে, অন্যদিকে সিন্ধু সরকার এবং তার সমর্থকরা এটিকে তাদের অধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করেন। পানির বণ্টন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন এই বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কমন ইন্টারেস্টস কাউন্সিল (সিসিআই) এর বৈঠক এবং সিদ্ধান্ত
গত মাসে ভারতের সমকক্ষ পাকিস্তানের কমন ইন্টারেস্টস কাউন্সিল (সিসিআই) এই প্রকল্পকে অনুমোদন দেয়নি। সিসিআই স্পষ্ট করে বলেছে যে, সকল প্রদেশের মধ্যে সম্মতি ছাড়া কোনও নদী খনন প্রকল্প শুরু করা হবে না। এর অর্থ হল, যতক্ষণ না প্রদেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা হয়, ততক্ষণ কেন্দ্রীয় সরকার কোনও বড় পদক্ষেপ নেবে না। কিন্তু তারপরও সিন্ধুতে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।
পিপিপি প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টোর বক্তব্য
পিপিপির সভাপতি বিলাওয়াল ভুট্টো জরদারী গৃহমন্ত্রীর বাড়িতে হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি এটিকে “সন্ত্রাসবাদী কাজ” বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করেছে জনসাধারণের শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে। বিলাওয়াল সরকারের কাছে দাবি করেছেন যে, প্রতিবাদের নামে হিংসা ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।