পাকিস্তানের রেকো দিক প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক ও IFC-এর ৭০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ

🎧 Listen in Audio
0:00

বিশ্ব ব্যাংক ও IFC থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেল পাকিস্তানের রেকো দিক কপার-গোল্ড প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বারিক গোল্ড, পাকিস্তান সরকার এবং বেলুচিস্তান সরকার যৌথভাবে পরিচালনা করছে।

পাকিস্তান: অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান আবারও বড় ধরনের স্বস্তি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা (IFC) এবং বিশ্ব ব্যাংক পাকিস্তানকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এই অর্থায়ন বিশেষ করে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত রেকো দিক কপার-গোল্ড খনি প্রকল্পের জন্য দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পটি পাকিস্তান সরকার, প্রাদেশিক বেলুচিস্তান সরকার এবং কানাডার বিখ্যাত খনি সংস্থা বারিক গোল্ড যৌথভাবে পরিচালনা করছে।

রেকো দিক প্রকল্প: এর গুরুত্ব কী?

রেকো দিক প্রকল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অবিকশিত কপার ও সোনার খনি। এটি বেলুচিস্তানের চাগাই জেলায় অবস্থিত এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই প্রকল্পে কানাডার বারিক গোল্ড কোম্পানির ৫০% অংশীদারিত্ব রয়েছে, যখন পাকিস্তান সরকার এবং বেলুচিস্তান সরকারের প্রত্যেকের ২৫% করে অংশীদারিত্ব রয়েছে।

এই প্রকল্প কত লাভ করতে পারে?

বারিক গোল্ডের মতে, এই খনি ভবিষ্যতে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার ফ্রি ক্যাশ ফ্লো এবং ৯০ বিলিয়ন ডলার অপারেশনাল ক্যাশ ফ্লো উৎপাদন করতে পারে। এই অবস্থায়, এই প্রকল্প পাকিস্তানের জন্য গেমচেঞ্জার হতে পারে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন দেশটি ক্রমাগত বিদেশী ঋণ এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার সম্মুখীন হচ্ছে।

IMF ও বিশ্ব ব্যাংক এত বড় অঙ্কের অর্থ কেন দিচ্ছে?

আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি, বিশেষ করে IMF এবং বিশ্ব ব্যাংক, সাধারণত এমন প্রকল্পগুলিকে অর্থায়ন করে যার দীর্ঘমেয়াদী রিটার্নের সম্ভাবনা থাকে। রেকো দিক প্রকল্পে বিনিয়োগকে নিরাপদ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ এতে বিশ্বমানের খনি সংস্থা বারিক গোল্ড জড়িত, যার রেকর্ড এবং ক্ষমতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।

তদুপরি, পাকিস্তান সরকার এই প্রকল্পটিকে ‘জাতীয় অগ্রাধিকার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এটিকে এগিয়ে নিতে নীতি নির্মাণ, নিরাপত্তা এবং আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে।

গত মাসে IMF থেকেও বড় ঋণ পেয়েছিল

এছাড়াও, এর আগে ২০২৫ সালের মে মাসে IMF পাকিস্তানকে ২.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল। এর মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার ৭ বিলিয়ন ডলারের দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির কিস্তি হিসেবে দেওয়া হয়েছিল, আর ১.৪ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় দেওয়া হয়েছিল।

এই ঋণ নিয়ে ভারত IMF-এ আপত্তি জানিয়েছিল, কিন্তু তারপরও IMF পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। এটিকে পাকিস্তানে একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কোন কোন দেশ ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও অর্থায়ন পাওয়া যেতে পারে?

প্রকল্প পরিচালক টীম ক্রিবের মতে, IFC ইতিমধ্যেই ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের কথা বলেছিল, যা এখন ৬৫০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও, প্রকল্প দল আমেরিকান এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কানাডা এবং জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন যেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে ঋণ নেওয়ার দিকে কাজ করছে।

টীম ক্রিব আশা প্রকাশ করেছেন যে বিশ্ব ব্যাংক থেকে তারা দুই বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সহায়তা পেতে পারে। তিনি জানিয়েছেন যে এই দিকে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শুরুতে টার্মশীটে স্বাক্ষর হতে পারে।

ডঃ তৌকির হাসানের ভূমিকা এবং পাকিস্তানের কৌশল

পাকিস্তান সরকারের উপদেষ্টা ডঃ তৌকির হাসান এই ঋণ পাস করানোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্ব ব্যাংক এবং IFC-এর সাথে তাঁর আলোচনা এবং লবিংয়ের ফলে এই অর্থায়ন সম্ভব হয়েছে। এটিকে পাকিস্তানের জন্য একটি কৌশলগত সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বিদেশী বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

প্রকল্পের প্রথম ধাপ কখন শুরু হবে?

বারিক গোল্ডের লক্ষ্য হলো রেকো দিক খনি প্রকল্পের প্রথম উৎপাদন ধাপ ২০২৮ সালে শুরু করা। এর জন্য এখনও প্রচুর বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো এবং মানব সম্পদের প্রয়োজন। সরকার এবং বেসরকারি খাত এই দিকে দ্রুত কাজ করছে।

Leave a comment