কচুয়ারীবাড়ীতে হামলা: রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যে আঘাত

🎧 Listen in Audio
0:00

বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার সাহিত্য সম্রাট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক আবাস কচুয়ারীবাড়িতে ঘটা সাম্প্রতিক ঘটনা সকলকে হতবাক করে দিয়েছে। এই ঐতিহাসিক স্থানে একজন দর্শনার্থী ও পার্কিং শুল্ককে কেন্দ্র করে বিবাদে জড়িয়ে পরে স্থানীয়দের প্রতিবাদে সামনে আসে।

ঢাকা: বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাসভবন কচুয়ারীবাড়িতে জনতার হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যে হামলার প্রতিধ্বনি শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, ভারতসহ সারা বিশ্বের সাহিত্য জগতেও শোনা যাচ্ছে।

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তিন সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে, যাদের ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কী ঘটেছে?

৮ জুন একজন পর্যটক তার পরিবারের সঙ্গে কচুয়ারীবাড়ী জাদুঘরে গিয়েছিলেন। এই স্থান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আবেগগতভাবে জড়িত, কারণ তিনি জীবনের অনেক বছর এখানে কাটিয়েছেন এবং এখানেই তিনি ‘গোরা’, ‘ঘরে-বাইরে’, ‘চিত্রাঙ্গদা’ সহ অনেক রচনা রচনা করেছিলেন। পার্কিং শুল্ক নিয়ে পর্যটকের এক কর্মীর সঙ্গে বচসা হয়। বিবাদ এতটাই বেড়ে যায় যে কর্মীটি कथিতভাবে পর্যটককে পরিসরের একটি অফিসে বন্দী করে রাখে এবং তার সঙ্গে মারধর করে। এই খবর স্থানীয়দের কাছে পৌঁছালে তাদের মধ্যে রাগ ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিবাদ এবং হামলা

ঘটনার পর ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা মানব শৃঙ্খল তৈরি করে প্রতিবাদ করে এবং জাদুঘর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে नारेबाज़ी করে। একপর্যায়ে জনতা উত্তাল হয়ে ওঠে এবং কচুয়ারীবাড়ীর অডিটোরিয়ামে হামলা চালায়। এসময় জনতা সেখানকার একজন পরিচালককেও পিটিয়ে আহত করে। পরিসরে ভাঙচুর করা হয় এবং জাদুঘরের কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যে হামলা

এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি পার্কিং শুল্ক বিবাদের ফলাফল নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক স্থানের সুরক্ষা নিয়ে প্রশাসনের ব্যর্থতাও উন্মোচন করে। কচুয়ারীবাড়ী সেই স্থান যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। এই ধরনের স্থানে হিংসা ও ভাঙচুর শুধুমাত্র ভৌত ক্ষতি নয়, বরং সাংস্কৃতিক অপমানও।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তদন্ত ও কঠোর অবস্থান

ঘটনার পরপরই বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গে সাড়া দিয়ে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি (SIT) গঠন করে। এই কমিটিকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যে তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আবাস শুধুমাত্র একটি ভবন নয়, বরং আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এর সংরক্ষণ ও সম্মানের দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই হামলা সহ্য করা হবে না।

ঘটনার সময় স্থানীয় পুলিশ বা প্রশাসনের কোনো দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, যার ফলে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়। প্রশ্ন উঠেছে, যদি সময়মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হতো, তাহলে এত বড় ক্ষতি হতো না। জনগণ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশাসনিক অবহেলার বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ভারতেও প্রতিধ্বনি

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি সাংস্কৃতিক সেতু। ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জন গণ মন’ এবং বাংলাদেশের ‘আমার সোনার বাংলা’ উভয়ই ঠাকুরের রচনা। তাই তাঁর পৈতৃক বাসভবনে হামলার ঘটনা দুই দেশের সাংস্কৃতিক বুননে আঘাত হানে। ভারতীয় সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদরা এই ঘটনার নিন্দা করেছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঠাকুর স্মৃতিসৌধের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

Leave a comment