ইসরাইলের হামলায় ইরানের রেভলুশনারি গার্ড প্রধান নিহত

🎧 Listen in Audio
0:00

ইসরাইলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে ইরানে হামলা, রেভলুশনারি গার্ড প্রধান হুসেইন সালামী নিহত

ইসরাইল ইরানে হামলা: ইসরাইল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামক এক বৃহৎ সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ইরানে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ইরানের রেভলুশনারি গার্ডের প্রধান কমান্ডার হুসেইন সালামী নিহত হয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা বিরাজ করার সময় এই কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়েছে। ইসরাইলের এই সামরিক পদক্ষেপ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

তেহরানে এয়ারস্ট্রাইক, পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে হামলা

হামলার সূচনা হয় ইরানের রাজধানী তেহরানে এয়ারস্ট্রাইকের মাধ্যমে। ইসরাইলি বিমানবাহিনী ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করে। এই স্থাপনার মধ্যে বিশেষ করে নাতান্জে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই হামলায় কয়েক ডজন বিজ্ঞানী ও উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা নিহত বা আহত হয়েছেন।

হুসেইন সালামীর মৃত্যু: ইরানি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা

ইসরাইলি আঘাতে নিহত ইরানের রেভলুশনারি গার্ড প্রধান হুসেইন সালামীর মৃত্যু দেশের সামরিক কাঠামোর জন্য একটি বড় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সালামী দীর্ঘদিন ধরে ইরানের প্রতিরক্ষা নীতির প্রধান পরিকল্পক ছিলেন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন সহ অনেক সামরিক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

ইসরাইলে জরুরী অবস্থা জারি

হামলার পর ইসরাইল সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় সারা দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সীমান্তে সেনা মোতায়েন বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে যতক্ষণ ইসরাইলের অস্তিত্বের উপর ইরান থেকে হুমকি থাকবে, এই অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে।

‘আমরা পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করেছি’ - নেতানিয়াহু

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই কার্যক্রমকে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এই অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা দুর্বল করা। তিনি দাবি করেছেন যে, যাদের লক্ষ্য করা হয়েছে তারা ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল।

ইরানের প্রথম প্রতিক্রিয়া: কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি

ইসরাইলের এই সামরিক পদক্ষেপের পর ইরান সরকার অবিলম্বে উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জরুরী বৈঠক ডেকেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই কঠোর বিবৃতি জারি করে বলেছেন, ইসরাইলকে এই হামলার “কঠোর শাস্তি” ভোগ করতে হবে। তিনি বলেছেন, এই হামলা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার উপর সরাসরি আক্রমণ এবং এর জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে।

তেহরানে আতঙ্ক, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ

তেহরানে বিস্ফোরণের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় অস্থিরতা দেখা গেছে এবং মানুষ নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রাজধানীর অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে।

আমেরিকা নিজেকে আলাদা রেখেছে, তবে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছে

আমেরিকা এই হামলায় কোনও ধরণের সরাসরি অংশগ্রহণ অস্বীকার করেছে। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো জানিয়েছেন, ইসরাইল ইতিমধ্যেই এই কার্যক্রমের বিষয়ে তাদের অবহিত করেছিল, তবে আমেরিকা এর সাথে জড়িত নয়। আমেরিকার প্রধান উদ্বেগ বর্তমানে তাদের সৈন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে, তিনি এটাও বলেছেন যে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার পুরো অধিকার আছে।

ইরাক আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, আঞ্চলিক বিমান চলাচল ব্যাহত

হামলার পর ইরাক নিরাপত্তার কারণে তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ইরাকের সকল প্রধান বিমানবন্দর অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ কয়েকটি পর্যায়ে চলবে

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই অপারেশন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ। তারা বলেছে, এটি প্রথম পর্যায় ছিল, যেখানে কয়েক ডজন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়েছে। আগামী দিনগুলিতে এই কার্যক্রম আরও তীব্র হতে পারে। সেনাবাহিনী সাধারণ নাগরিকদের সংযম বজায় রাখার এবং নিরাপত্তা সংস্থার নির্দেশাবলী মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

Leave a comment